১৫০০ ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর শঙ্কা

September 19, 2023 0 Comments
এ বছরও প্রায় দেড় হাজার ইটখোলায় অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে ইট উৎপাদনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর বাইরে পরিবেশ ছাড়পত্র নেই এমন আরো ইটখোলায় কাঠ পোড়ানোর শঙ্কা রয়েছে। সরকারি হিসাবের বাইরে এ ধরনের ইটখোলার সংখ্যা অন্তত ৩০০।
গত বছর যেসব অঞ্চলে ইটখোলায় কাঠের ব্যবহার বেশি হয়েছে, তার মধ্যে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলা উল্লেখযোগ্য।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী; ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ও রসুলপুর এলাকা; চট্টগ্রামের রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, চকরিয়া ও হাটহাজারীর ইটখোলাগুলোয় কয়লার পরিবর্তে অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানো হয়। রাজবাড়ীর খানখানাপুর, গোয়ালন্দ, পাংশা ও কালুখালী এবং ফরিদপুরের মধুখালী ও আলফাডাঙ্গার নামও রয়েছে এই তালিকায়।পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে বৈধ ইটখোলা ছিল সাত হাজার ৮৮১টি। এর বাইরে এক হাজারের বেশি অবৈধ ইটখোলা আছে।
আইনগতভাবে ইটখোলায় কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ। তবে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দেশের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বা দেড় হাজারের বেশি ইটখোলায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এতে প্রতিবছর উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল।আর এক হাজারের মতো যে অবৈধ ইটখোলা আছে তার অন্তত ৩০ শতাংশ কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করে।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ করে না।পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির তথ্য মতে, গত বছর ইট উৎপাদন হয়েছিল তিন হাজার ২০০ কোটি। এ কাজে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টন কয়লার ব্যবহার হচ্ছে। আর কাঠ পোড়ানো হচ্ছে এক থেকে দেড় লাখ টন। ইটখোলায় কাঠ পোড়ানো কমাতে নানা উদ্যোগ ও প্রচারণাচলছে।
আবার এসব ইট তৈরি করতে ১১ কোটি ৫০ লাখ টন মাটি লেগেছে। এ কারণে দেশের কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একইভাবে নির্বিচারে গাছ কাটার কারণে বন উজাড় হচ্ছে, হচ্ছে ভূমিধস, ভাঙন ও মাটিক্ষয়।একই সূত্র থেকে জানা যায়, এক লাখ ইট পোড়াতে কাঠ লাগে ১৮ থেকে ২০ টন। কয়লা ব্যবহার করলে একই পরিমাণ ইট তৈরিতে দরকার হয় ১৪ থেকে ১৬ টন।পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা, অবৈধভাবে কাঠের ব্যবহারসহ নানা কারণে ইটখোলায় অভিযান পরিচালনা করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এতে ইটখোলায় কাঠের ব্যবহার কমলেও তা আশানুরূপ নয়। চলতি বছরে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে দেড় হাজার ইটখোলায় এক লাখ টনের বেশি কাঠ পোড়ানোর শঙ্কা রয়েছে।কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ইটখোলায় কাঠের ব্যবহার এখনো বেশি হচ্ছে কাঠের সহজলভ্য এলাকা এবং গ্রামাঞ্চলের ইটখোলাগুলোয়। গত বছর যেসব অঞ্চলে ইটখোলায় কাঠের ব্যবহার বেশি হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও উত্তরবঙ্গের কিছু জেলা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপজেলা হলো টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী; ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে রসুলপুর; চট্টগ্রামের রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, চকরিয়া ও হাটহাজারী উপজেলা। রাজবাড়ীর খানখানাপুর, গোয়ালন্দ, পাংশা ও কালুখালী এবং ফরিদপুরের মধুখালী ও আলফাডাঙ্গারও নাম রয়েছে এই তালিকায়।পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক সুলতান আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, একটি সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে ইটখোলার দূষণ এবং কাঠের ব্যবহার কমিয়ে আনতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ ইট পোড়ানোর মৌসুম সামনে। দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কী মাত্রায় বায়ুদূষণ হচ্ছে, তা কতটুকু স্বাস্থ্যহানির কারণ হচ্ছে সে বিষয়ে কার্যকর তদারকির মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কাঠের ব্যবহার বন্ধ করতে আইনের প্রয়োগে সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে। ইটখোলার কারণে মাটি উর্বরতাশক্তি যেমন হারাচ্ছে, তেমনি পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে জানিয়ে সুলতান আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ইটের চাহিদা বাড়ছে। তবে এটা যেন পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, ইট তৈরিতে মাটির বিকল্প ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে। কাঠ ব্যবহারের পরিবর্তে কয়লাসহ বিকল্প জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার বাড়াতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আর্কাডিসের যৌথ গবেষণার তথ্য বলছে, বিশ্বের ৭৫ শতাংশ ইট এশিয়ার পাঁচটি দেশ তৈরি করে। চীন ৫৮ শতাংশ, ভারত ১২ শতাংশ, পাকিস্তান ২.৫ শতাংশ, ভিয়েতনাম ১.৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ১ শতাংশ ইট উৎপাদন করে থাকে। বাংলাদেশের মোট কালো ধোঁয়ার ৩৮ শতাংশ নির্গমন করছে ইটখোলা। ১৯ শতাংশ কালো ধোঁয়া নির্গমন করছে যানবাহন। এ ছাড়া রোড ডাস্টের মাধ্যমে ১৮ শতাংশ, সয়েল ডাস্টের মাধ্যমে ৯ শতাংশ, মেটাল স্মেলটারের মাধ্যমে ৭ শতাংশ, জেডএন উৎস থেকে ৭ শতাংশ এবং সাগরের লবণাক্ততার মাধ্যমে ২ শতাংশ কালো ধোঁয়া নির্গমন হচ্ছে। এই কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যহানি যেমন হচ্ছে তেমনি বৈশ্বিক তাপমাত্রাও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কালো ধোঁয়া নিরোধে সঠিকভাবে কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াতে হবে। কাঠ পোড়ানোসহ অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির নেতারা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। ইটের প্রয়োজন স্বীকার করে এ খাতের উন্নয়ন যাতে হয় তা তাঁরা চান। ইটখোলার মালিকদের নিজস্ব প্রচেষ্টা এবং সরকারের নির্দেশনায় দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ ইটখোলায় উন্নত প্রযুক্তির রূপান্তর করা হয়েছে বলে তাঁরা দাবি করেন।

Leave A Comment

To Top