১০ বছরের গড় বায়ু দূষণে ৫ নম্বরে ঢাকা

September 19, 2023 0 Comments
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী গড় বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ শহরের মধ্যে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এই শহরের বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ৭১.৪ মাইক্রোগ্রাম পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম২) পাওয়া গেছে। পিএম২.৫ হলো বাতাসে ভাসমান অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা পরিমাপের পদ্ধতি। এটি ১২-১৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত অনুমোদিত।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট’ (এইচইআই)-এর প্রতিবেদনটি গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড হেলথ ইন সিটিজ (নগরের বায়ুমান ও স্বাস্থ্য) শীর্ষক প্রতিবেদনে সারা বিশ্বের সাত হাজারের বেশি শহরের বায়ুমান পর্যবেক্ষণ করে তা তুলে ধরে।  এইচইআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকার বাতাসে পিএম২.৫ ছাড়াও দূষণের অন্য উপাদানের পরিমাণও ছিল বেশি। এতে দেখা যায়, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের (এনও২) পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি।
  প্রতিবেদনটি তৈরিতে ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল—এই ১০ বছরের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করা হয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটখোলার ধোঁয়া ৫৮ শতাংশ দায়ী। বাকি ৪২ শতাংশের জন্য দায়ী নির্মাণ ও মেরামত কাজ থেকে সৃষ্ট ধুলা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের ধোঁয়া। এইচইআইয়ের প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বায়ুদূষণে শীর্ষে রয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি।
শহরটিতে গত ১০ বছরে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে গড়ে ১১০ মাইক্রোগ্রাম ধূলিকণা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ভারতেরই পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় গড়ে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৮৪ মাইক্রোগ্রাম ধূলিকণা পাওয়া গেছে। শহরটি সারা বিশ্বের দ্বিতীয় দূষণকারী। নাইজেরিয়ার কেনো শহরে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে গড়ে ৮৩.৬ মাইক্রোগ্রাম ধূলিকণা পাওয়া গেছে। শহরটি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ দূষণকারী শহর
অন্যদিকে পেরুর লিমা শহরে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ধূলিকণার গড় পরিমাণ ৭৩.২ মাইক্রোগ্রাম। পঞ্চম স্থানে থাকা ঢাকার পরেই ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, সপ্তম স্থানে নাইজেরিয়ার লাগোস, অষ্টম স্থানে পাকিস্তানের করাচি, নবম স্থানে চীনের বেইজিং ও দশম স্থানে ঘানার আক্রা।আইকিউ এয়ারের মূল্যায়ন : সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘আইকিউ এয়ার’ বিশ্বের প্রায় ১০০টি বড় শহরের বায়ুদূষণ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। সংস্থাটি প্রতিদিনের তথ্য প্রদান করে বলে মাঝেমধ্যেই দূষণকারী শহরের শীর্ষে উঠে আসে ঢাকা। তাদের হিসাবে বায়ুমানের সূচক ২০০ অতিক্রম করলে তা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে ধরা হয়। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ২৮৯, যা ওই সময়ে ঢাকাকে বিশ্বের শীর্ষে তুলে নিয়ে আসে।অনেক রোগের কারণ বায়ুদূষণ : চিকিৎসকদের মতে, বায়ুদূষণের কারণে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এআ দূষণের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি উভয় ধরনের প্রভাব রয়েছে। স্বল্পমেয়াদি প্রভাবের মধ্যে রয়েছে—মাথাধরা, ঝিমুনি, শারীরিক শক্তি হ্রাস, শ্বাসনালির জ্বালা, হাঁপানি, কাশি, নাকজ্বালা, শ্বাসনালির স্ফীতি ও ফুসফুসের জ্বালা, চোখ, নাক ও গলার জ্বালা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি। দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের মধ্যে রয়েছে ব্রংকাইটিস, ফুসফুস ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব ও জন্মত্রুটির মতো রোগ। নির্মাণকাজ ও গাড়ির সংখ্যা দায়ী : এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড  ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) অধ্যাপক ড. সালিমুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে বায়ুদূষণে গাড়ি ও শিল্প-কারখানার ধোঁয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধুলা। বাতাসে ধুলা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আগে এত বড় বড় প্রকল্প এবং এত বেশি গাড়ি ছিল না। পাশাপাশি ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জলাশয় ভরাট হওয়ায় ধুলার নতুন উৎস তৈরি হয়েছে। বায়ুদূষণ কমাতে আমাদের সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।’ অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার—মন্ত্রী : বায়ু ও শব্দ দূষণের বিষয়ে গতকাল একটি অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, অসহনীয় মাত্রার শব্দ ও বায়ু দূষণ মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে। এ বিষয়ে নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যকেও সচেতন করতে হবে। শিশুদের শৈশব থেকেই সচেতন করে গড়ে তুলতে পাঠ্যসূচিতে শব্দদূষণ বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা পেলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

Leave A Comment

To Top