শেষ মাসেই এডিপির এক-চতুর্থাংশ ব্যয়

September 24, 2023 0 Comments

২০১৯-২০ অর্থবছরের ১১ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) গড়ে প্রতি মাসে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ছিল গড়ে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছরের শেষ মাসে গিয়ে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে ব্যয় ও বাস্তবায়নে। জুনে ব্যয় হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে এডিপিতে মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা, আর বাস্তবায়নের হার ছিল ৮০ দশমিক ২৮ শতাংশ।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে এডিপি ব্যয় ও বাস্তবায়নের এসব তথ্য উঠে এসেছে। বার্ষিক প্রতিবেদনটি শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ও ব্যয়ে রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। এ সময়ে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নের হার ছিল ৯৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। তবে রেকর্ডের পরের অর্থবছরে এসে বাস্তবায়নে আবারো পতন ঘটে। দুই যুগের বেশি সময় পর বাস্তবায়নের হার সর্বনিম্নে ঠেকে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে।

আইএমইডির সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের নিজস্ব কিছু উদ্ভাবনী কর্মসূচির মাধ্যমে ব্যয় ও বাস্তবায়নে রেকর্ড অর্জন করেছিলাম। কিন্তু সংগত কারণেই সেটি ধরে রাখতে পারিনি। তবে আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। করোনার আগেই পরিকল্পনামন্ত্রী বিভাগীয় পর্যায়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক শুরু করেছিলেন। প্রতি মাসে ডিসিদের নিয়ে আমিও বৈঠক করেছি। আইএমইডির মহাপরিচালকরা পিডিদের সঙ্গে প্রতি মাসে কমপক্ষে ছয়টি বৈঠক করতেন। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের শেষদিকে সাধারণ ছুটির কারণে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়ি।

অর্থবছরের শেষ মাসে অর্থ ব্যয় ও বাস্তবায়নে এমন উল্লম্ফন কতটা যৌক্তিক এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আমাদের আর্থিক ব্যয়টা সব সময়ই ফিজিক্যাল ব্যয় থেকে কম হয়। সাধারণত বছরের শেষদিকে এসে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। তবে তদারকির মাধ্যমে এ দুটি ক্ষেত্রে আরো সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর দিকনির্দেশনা এসেছে। উন্নয়ন ও জীবন দুটিকে একসঙ্গে এগিয়ে নিতে যথাসময়ে এডিপি বাস্তবায়ন এবং আরো কার্যকরভাবে অর্থের ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা নতুন কর্ম-উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১১ মাস পর্যন্ত এডিপিতে মোট ব্যয় ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২১ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নের হার ছিল ৫৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে অর্থবছর শেষে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ শুধু জুনেই ৪৬ হাজার ১০৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। যদিও পূর্ববর্তী মাসগুলোতে এটি ছিল খুবই কম।

গত অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের এডিপি ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে ১৬ হাজার ৫৮১ কোটি, এপ্রিলে ৮ হাজার ১৩৬ কোটি, মার্চে ১০ হাজার ৫৬১ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ১১ হাজার ১৬৩ কোটি, জানুয়ারিতে ১২ হাজার ২৬১ কোটি এবং ডিসেম্বরে ১৫ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বিগত অর্থবছরগুলোয় এডিপি বাস্তবায়ন হার ৯০ শতাংশের বেশি হলেও ২৭ বছর পর এবারই তা ৮০ শতাংশে নামল।

২০১৯-২০ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। কিন্তু মাঝপথে এসে গত মার্চে বরাদ্দ কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ১ হাজার ১৯৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ফলে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের আরএডিপির অর্থ ব্যয় হয়নি ৩৯ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়ের প্রয়োজন হবে না। যদি অর্থ মন্ত্রণালয় এ অর্থ ছাড়ও করে, তাহলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেরত চলে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত অর্থবছর এডিপি বাস্তবায়ন হার কম হওয়ার প্রধান কারণ নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। করোনার কারণে চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। মার্চ পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৪৫ শতাংশ। এপ্রিল পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসে মাত্র ৪ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছিল। মে মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৫৭ শতাংশে উন্নীত হয়। আর বছর শেষে এডিপি বাস্তবায়িত হয় ৮০ শতাংশ। সে হিসেবে এক মাসে ২৩ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। টাকার অংকে ৪৬ হাজার ১০৫ কোটি টাকা।

এর আগে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ৭৯ হাজার ৭৮৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। নয় মাসে অর্থাৎ মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছিল ৯০ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ছিল ৪৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বা এপ্রিল পর্যন্ত যা ছিল ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং টাকার অঙ্কে ব্যয় হয়েছিল ৯৮ হাজার ৮৪০ টাকা। সাধারণ ছুটিতে এপ্রিল, মে ও জুনে উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম স্থবির ছিল। বেশির ভাগ প্রকল্পের কাজ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আরএডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শুধু বিল পরিশোধ ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি।

আইএমইডির প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত অর্থবছর সবচেয়ে কম ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এ তালিকায় পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ৩৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ, খাদ্য মন্ত্রণালয় ৪৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ, জননিরাপত্তা বিভাগ ৫১ শতাংশ, আইন ও বিচার বিভাগ ৫১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তবে সর্বোচ্চ আরএডিপি বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ, স্থানীয় সরকার, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক, সেতু বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।

Leave A Comment

To Top