মুরগি উৎপাদনে দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় বাংলাদেশ

September 19, 2023 0 Comments
দেশে খাওয়ার মুরগি উৎপাদন বেড়েছে। গত অর্থবছরে খামারে উৎপাদিত মুরগির সংখ্যা ৩৭ কোটি ৫৬ লাখ ছাড়িয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় মুরগি উৎপাদনে এখন তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। এর আগের বছর দেশে ৩৬ কোটি ৫৮ লাখ মুরগি উৎপাদন করা হয়। দেশে আমিষের চাহিদার প্রায় অর্ধেক আসে এই মুরগি থেকে। 
   
দক্ষিণ এশিয়ায় উৎপাদিত মুরগির প্রায় ১৩ শতাংশ এখন বাংলাদেশে হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনিরাপদ খাবারের কারণে খামারের মুরগির গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার মুরগির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মুরগির দামও অনেকের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তা ও ক্ষুদ্র খামারিরা।দক্ষিণ এশিয়ায় মুরগি উৎপাদন এবং বাণিজ্য সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা করে সার্ক অ্যাগ্রিকালচার সেন্টার (এসএসি)। চলতি মাসে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের উৎপাদনকে বিবেচনায় নিয়ে এই গবেষণা করা হয়।
তাতে বাংলাদেশের এই চিত্র উঠে আসে। যদিও এর পরের দুই অর্থবছরে বাংলাদেশে মুরগি উৎপাদন আরো বেড়েছে।পোলট্রি খাত দেশের কর্মসংস্থান ছাড়াও পুষ্টি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৬০ লাখ লোক যুক্ত আছে। ছোট-বড় মিলিয়ে বিনিয়োগ আছে ৩৫ হাজার কোটি টাকার
মুরগির চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে দামও। মূল্যবৃদ্ধি যেমন ভোক্তাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনি উৎপাদন ধরে রাখার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি তৈরি করেছে। এক মাসের ব্যবধানে দেশে সব ধরনের পোলট্রি মুরগির দাম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।রাজধানী ঢাকার আশপাশের জেলা বিশেষ করে গাজীপুরে ব্যাপক হারে মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। তবে এগুলো সব ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামার। দেশের উত্তরবঙ্গেও মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। এর বড় অংশই বৃহৎ বাণিজ্যিক বিনিয়োগ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ২৭৬ কোটি ৫৫ লাখ তিন হাজার ৭১১টি মুরগির উৎপাদন হয়েছে। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তান, উৎপাদন হয়েছে ১৪৪ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার মুরগি। দ্বিতীয় ভারত, উৎপাদন ৮৫ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার। এ ছাড়া নেপালে সাত কোটি ৬১ লাখ ২৫ হাজার ৭৩০, শ্রীলঙ্কায় দুই কোটি ৪২ লাখ ৯১ হাজার ৮৪০ মুরগি উৎপাদন হয়েছে। মুরগি উৎপাদনে এর পরেই আছে আফগানিস্তান, ভুটান ও মালদ্বীপ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) তথ্য বলছে, কয়েক বছর ধরে পোলট্রি খাতের উৎপাদন বাড়ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ৩২ কোটি ৯২ লাখ মুরগি। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৬ কোটি ৫৮ লাখ ৫২ হাজার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৭ কোটি ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার মুরগি উৎপাদন হয়। মান নিয়ে দুশ্চিন্তা কোনো কোনো খামারে মুরগির খাদ্যে ক্ষতিকর ক্রোমিয়াম বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে। খাবার হিসেবে ট্যানারির বর্জ্য ব্যবহার এর একটা কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। ক্রোমিয়াম মাংস ও ডিমের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করলে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সে কারণে পোলট্রি খাদ্য আইনে ট্যানারি বর্জ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। তবে আইন বাস্তবায়নের জন্য আরো কঠোর তদারকি প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার বলেন, প্রণোদনার আওতায় খামারিদের দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জীব-নিরাপত্তা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। কাঁচাবাজারে জীবন্ত মুরগি বিক্রির পর সঠিক পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করতে হবে। খামারিদের মাঝে বিনা মূল্যে জীবাণুনাশক ও পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ বিতরণসহ রোগ প্রতিষেধক টিকা সহজলভ্য করতে হবে। তাতে মুরগির মান উন্নত হবে। জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, কয়েক বছর ধরে পোলট্রি খাত বিকাশে নীতি ও কার্যকর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। এই খাতের অত্যাবশ্যকীয় আমদানি পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে শুল্কছাড় দেওয়া হচ্ছে। ফলে দেশের মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তায় অন্যতম নির্ভরতার খাত হয়ে উঠেছে পোলট্রি। তিনি বলেন, এখন এই খাতে বড় চ্যালেঞ্জ মান বাড়ানো। উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি মানসম্মত উৎপাদনে তদারকি বাড়ানো ও আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হচ্ছে।  

Leave A Comment

To Top