মাস শেষে কমতে পারে চালের দাম

September 16, 2023 0 Comments
দেশের বাজারে চালের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। আমন মৌসুমের ধান কাটা শুরু হলেও এর প্রভাব পড়েনি বাজারে। তবে আশার কথা শোনাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও বাজার বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, চলতি মাসের শেষ দিকে চালের দাম কমতে পারে।
এর কারণও ব্যাখ্যা করেন তাঁরা। দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা কাটিয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমনের আবাদ বেশি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২১ শতাংশ ধান কাটাও হয়ে গেছে। শুল্ক কমানোয় বাড়ছে চালের আমদানি।
এ পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ টন আমদানি হলেও ডিসেম্বরের মধ্যে আসবে আরো ১০ লাখ টন চাল। খোলাবাজারেও (ওএমএস) সরকারের চাল বিক্রি চলমান। এই বিষয়গুলোর ইতিবাচক প্রভাব পড়লে দাম কমে আসবে বলে আশা তাঁদের। আর চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আসতে সময় লাগতে পারে আরো এক মাস।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের আমন মৌসুমে ৫৬ লাখ ২০ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এবারে মোট এক কোটি ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার আট টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। মৌসুমের শুরুতে খরা ও পরবর্তী সময়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আমন আবাদ কমার শঙ্কা ছিল। তবে সেই শঙ্কা কাটিয়ে এখানো পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএই। এবারে আমন আবাদ হয়েছে ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৭ হেক্টরে।
গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ১১ লাখ ৮১ হাজার ৫১ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে, যা মোট আবাদি জমির প্রায় ২১ শতাংশ। প্রতি হেক্টরে গড়ে তিন টন করে ধান পাওয়া যাচ্ছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এরই মধ্যে শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায়। এ ছাড়া রংপুর জেলায় ২৫ শতাংশ, নীলফামারীতে ৩২, নড়াইলে ৩৮, মাগুরায় ৪৬, ঠাকুরগাঁওয়ে ৪৩ ও পঞ্চগড়ে ৪৬ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। মোটের ওপর উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ২০ শতাংশের কাছাকাছি জমির ধান কাটা হয়েছে। চলতি মাসের শেষেই এসব অঞ্চলের ধান কাটা শেষ হতে পারে। এ ছাড়া বাজারে দ্রুতই ধান আসতে পারে যেসব জেলা থেকে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট। এ বিষয়ে সাবেক খাদ্যসচিব আব্দুল লতিফ মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার চালের দাম কমাতে বা সম্ভাব্য খাদ্যসংকট মেটাতে উৎপাদনে বেশি জোর দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের বণ্টনব্যবস্থায় যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। উৎপাদন বাড়ানোর সম্ভাবনা খুব বেশি নেই। সরবরাহব্যবস্থায় বেশি জোর দিতে হবে। বিশেষ করে সরবরাহ কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বেশ শক্তিশালী। ফলে চালের দাম কমা শুধু সরবরাহ বাড়ানোর ওপর নির্ভর করবে না। তবে আমদানির চাল ঠিকমতো আসা, লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে উৎপাদন হওয়া এবং চালকল মালিকরা যদি বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখেন, তাহলে আগামী মাসের মাঝামাঝি চালের বাজার স্থিতিশীল হতে পারে। পাশাপাশি সরকারের সরবরাহ কার্যক্রম আরো দক্ষতার সঙ্গে বাড়াতে হবে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) এ দেশীয় পরিচালক ডোমেইনিকো স্কালপেলির নেতৃত্বে সংস্থাটির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। বৈঠক শেষে কৃষিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশে এখন আমন ধান কাটা চলছে। শঙ্কার মধ্যেও এবার আমনের ভালো ফলন হয়েছে। আমাদের এবার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার চেয়েও ভালো ধান হয়েছে। দেশে কোনোভাবেই খাদ্যসংকট বা দুর্ভিক্ষ হওয়ার সামান্যতম শঙ্কা নেই।’ চালের সরবরাহ বাড়াতে সরকারের উদ্যোগ : গতকাল থেকে শুরু হয়েছে সরকারের আমন মৌসুমের চাল সংগ্রহ কার্যক্রম। সরকারের মজুদ পরিস্থিতি বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের চালের মজুদ আছে ১৩ লাখ ৭৪ হাজার টন। আমদানি বাড়াতে শুল্কহার কমিয়ে সাড়ে ১৩ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেগুলো আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমদানি করে দেশের বাজারে বিপণন করতে হবে। এর মধ্যে গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত চালের আমদানি হয়েছে তিন লাখ ৬১ হাজার ৫৯০ টন। কিন্তু চালের সরবরাহ বাড়ানোয় নানামুখী উদ্যোগ থাকলেও বিপণন দুর্বলতা ও তদারকির অভাবে চালের দাম কমছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমন মৌসুমের চালও বাজারে এসেছে। আমদানির চাল এসেছে। সরকারিভাবে কম দামে বিপুল চাল বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু দাম কমছে না। এখন সঠিকভাবে কঠোর তদারকি করা ছাড়াই কোনো বিকল্প দেখছি না। সেই তদারকিটা করতে হবে উত্তরবঙ্গের মোকাম, আমদানিকারকের চালের গুদাম, চাল মিল থেকে।’ এই ব্যবসায়ীর মতে, এখন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে না। দাম বাড়ছে কুষ্টিয়ার মিলগেটে : কুষ্টিয়ার বাজারে ১৫ দিন আগে থেকেই নতুন আমন ধান ওঠা শুরু হয়েছে। তবে চালের দাম এখনো কমেনি। এক সপ্তাহ ধরে জেলার খাজানগর মিলগেট এলাকায় সব ধরনের চাল কেজিতে দুই টাকা করে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম বাড়তি থাকায় চালের দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন চালকল মালিকরা। মিলগেটে দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। কুষ্টিয়ার চালকল মালিক হযরত আলী কালের কণ্ঠকে জানান, গত বছর আমন মৌসুমে যে ধান এক হাজার টাকা মণ কিনেছিলাম, এ বছর শুরুতেই সেই ধান এক হাজার ৪২০ টাকা মণ কিনতে হচ্ছে। মোটা ধান ৯০০ টাকা মণ কিনেছিলাম, সেটি এখন এক হাজার ২৬৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তবে ধান কাটা শেষ পর্যায়ে এলে চালের দাম কমবে। বাজারে ধান ও চালের কোনো সংকট নেই, এর পরও কেন দাম বাড়ছে জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, নানা ধরনের গুজব শুনে মানুষ হয়তো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চাল কিনে মজুদ রাখছে। [প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কালের কণ্ঠের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের নিজস্ব প্রতিবেদক আসিফ সিদ্দিকী ও কুষ্টিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক তারিকুল হক তারিক।

Leave A Comment

To Top