বন্যায় ৩০ শতাংশ প্লাবিত আরো বাড়তে পারে

September 24, 2023 0 Comments

দুই ধাপে চার সপ্তাহ ধরে বন্যা চলছে দেশে। ২৮ জেলায় চলমান এই বন্যায় এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে দেশের ৩০ শতাংশ এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুর্গত এলাকার মানুষ। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের উজানে বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতীয় অংশে ধাপে ধাপে ভারি বৃষ্টিপাতই দীর্ঘমেয়াদি বন্যার মূল কারণ। তৃতীয় ধাপে ভারি বৃষ্টিপাত ও ঢল নামলে বাড়তে পারে বন্যার ব্যাপকতা। সেই সঙ্গে বাড়বে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও।

তবে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শঙ্কা থাকলেও চলতি বছরের বন্যা এখন পর্যন্ত বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেনি। বন্যার পানি আরো তিন থেকে পাঁচদিন পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর পর থেকে পরিস্থিতি ক্রমে স্থিতিশীল হয়ে আসবে এবং উন্নতির দিকে যাবে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আলরাজি বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা আশা করছি আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। হয়তো আরো তিন-চারদিন পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এর পরই বন্যার পানি নামতে শুরু করবে। তবে বন্যা পুরোপুরি শেষ হতে আরো দুই সপ্তাহ সময় নেবে। সব মিলিয়ে এবারের বন্যা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছবে না।

স্থায়িত্ব ও ক্ষতির দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছিল ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৮ সালে বন্যার স্থায়িত্বকাল ছিল ৩৩ দিন। ২০০৭ সালে ইউনাইটেড নেশনস ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত ‘ফ্লাডস ইন বাংলাদেশ: হিস্ট্রি, ডাইনামিকস অ্যান্ড রিথিংকিং দ্য রোল অব দ্য হিমালয়াস’ শীর্ষক এক বইয়ের তথ্য বলছে, ১৯৯৮ সালের বন্যায় দেশের প্রায় ৬৮ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। অন্যান্য বছরের বড় বন্যাগুলোর মধ্যে ১৯৮৮ সালে ৬৩, ২০০৭ সালে ৫৩, ১৯৮৭ সালে ৪০, ১৯৭৪ সালে প্রায় ৩৭, ২০০৪ সালে ৩৭ দশমিক ২৭, ১৯৫৫ সালে প্রায় ৩৬ এবং ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়।

১৯৯৮ সালে বন্যার স্থায়িত্বকাল ছিল ৩৩ দিন। এরপর ২০১৯ সালের বন্যার স্থায়িত্ব ছিল প্রায় তিন সপ্তাহ। এছাড়া চলতি বছরের মতোই বন্যা হয়েছিল ২০০৪ সালে। ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ১৯৯৮ ও ১৯৮৮ সালের বন্যা। ওই দুই বছরই ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সেই ধরনের ক্ষতি না হলেও স্থায়িত্বে সেই বছরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। চলমান বন্যা এরই মধ্যে ২৭ দিন অতিক্রম করেছে। দুই ধাপের বন্যায় এরই মধ্যে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৬ হেক্টর ফসলি জমিতে বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ২৫ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত মোট ১৪টি জেলায় প্রায় ৭৬ হাজার ২১০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৪১ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টাকার অংকে এ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৪৯ কোটি। মোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার। দ্বিতীয় ধাপে ১১ থেকে ২১ জুলাই সময়ে নতুন করে আরো ১২টি জেলায় মোট ১৩টি ফসলের প্রায় ১ লাখ ১ হাজার ৫৯৬ হাজার হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়।

এবারের বন্যার বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বণিক বার্তাকে বলেন, বন্যার স্থায়িত্ব সম্পর্কে এখনই বলা সম্ভব নয়। বন্যার স্থায়িত্বের চেয়ে ফসল উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষার দিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এজন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।

ভূপ্রাকৃতিক কারণেই প্রতি বছর চরে বন্যা দেখা দেয়। এবারো তা-ই হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রামের প্রায় তিন শতাধিক চরাঞ্চলের চার লাখ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। ঘর-বাড়ি ডুবে যাওয়ায় নৌকা, কলাগাছের ভেলা ও ঘরের মাচানে কোনো রকমে দিন পার করছে দুর্গতরা।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বতুয়াতুলির চরের মুসা মিয়া জানান, বন্যা এত দীর্ঘ হবে সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। পানি সামান্য কমার পর আবারো বৃদ্ধি পায়। কাজকর্ম নেই। ঘরে খাবার নেই। বউ, বাচ্চা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে আছি। কোনো ত্রাণ পাইনি। ত্রাণ না পেলে আর বাঁচার উপায় থাকবে না।

Leave A Comment

To Top