বছরে বাড়তি খরচ সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

September 24, 2023 0 Comments

বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপেই মিটছে সেচ চাহিদার বড় অংশ। এ দুইয়ের মধ্যে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রে খরচটা তুলনামূলক বেশি। এক্ষেত্রে সেচযন্ত্রে ডিজেল ও ইঞ্জিন অয়েলের পাশাপাশি সেচ মৌসুম শুরুতে ওভারহোলিং ও মেরামতের প্রয়োজন পড়ে, যা কৃষকের খরচ বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) এক সমীক্ষার তথ্য বলছে, ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রে প্রতি বছর বাড়তি খরচ হয় প্রায় ৫ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।

বিএডিসির তথ্যমতে, দেশে জমিতে সেচ প্রদানের ক্ষেত্রে এখনো অগভীর নলকূপের প্রাধান্য রয়েছে। সেচকাজে গভীর নলকূপের অবদান ১৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে শক্তিচালিত পাম্পের অবদান ২২ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও অগভীর নলকূপের ৫৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

২০১৮-১৯ সেচ মৌসুমের সেচযন্ত্র জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই মৌসুমে মোট সেচকৃত জমির পরিমাণ ছিল ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর , যা মোট সেচযোগ্য জমির ৭৩ শতাংশ। মোট সেচকৃত এলাকার ৪৪ শতাংশ জমিতে সেচ প্রদানে ব্যবহার করা হয়েছে বিদ্যুত্চালিত যন্ত্র। অন্যদিকে ৫৬ শতাংশ জমিতে সেচ দিতে ব্যবহার করা হয় ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র।

খরচ কম হওয়ার পরও দেশে বিদ্যুত্চালিত সেচযন্ত্রের সম্প্রসারণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা হলো বিদ্যুৎ সংযোগ। সাধারণত ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র যেকোনো দোকান থেকে কিনে যেকোনো স্থানে স্থাপন করা সম্ভব। কিন্তু বিদ্যুত্চালিত সেচযন্ত্র স্থাপন করতে গেলে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতির পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংযোগও থাকতে হয়। এ অনুমতি ও সংযোগ পেতে যে পরিমাণ ভোগান্তি ও দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়, তাতে এক পর্যায়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন কৃষক। এছাড়া বিদ্যুৎ ও সৌরশক্তিচালিত সেচযন্ত্রের ব্যবহার ও সুবিধার বিষয়ে জ্ঞানের অভাবও রয়েছে তাদের মধ্যে। পাহাড়, চরাঞ্চল ও দুর্গম এলাকায় জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সুবিধা না থাকা এবং সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ ও পূর্ণমাত্রার ভোল্টেজের অনিশ্চয়তা থাকায় অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুত্চালিত সেচযন্ত্র পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এছাড়া দক্ষ পানি ব্যবহারকারী গ্রুপ গড়ে না ওঠা, বিদ্যুৎ ও সৌরশক্তিচালিত সেচ পাম্পের প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি হওয়া এবং সর্বোপরি কৃষকের মূলধন ও সরকারি সহায়তার অভাবও রয়েছে।

ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের বাড়তি খরচের নানান তথ্য উঠে এসেছে বিএডিসির সমীক্ষায়। সমীক্ষাটি পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ক্ষুদ্র সেচ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. জিয়াউল হক। তিনি দেখিয়েছেন, ডিজেলচালিত ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫৪টি অগভীর নলকূপে ডিজেল ও ইঞ্জিন অয়েল বাবদ বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হয় প্রায় ২ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এসব অগভীর নলকূপে সেচ মৌসুমে ওভারহোলিং, মেরামত ও পরিচালন খরচ পড়ে ২ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। ডিজেলচালিত ২ লাখ ৯ হাজার ৬৪৪টি অগভীর নলকূপকে বিদ্যুৎ বা সৌরশক্তিচালিত সেচ পাম্পে রূপান্তরকরণে সেচযন্ত্র পরিচালনা বাবদ বাড়তি খরচ হবে ১১৬ কোটি টাকা। ফলে মোট সাশ্রয় হবে ৫ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।

কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০১৯ অনুযায়ী দুটি নলকূপের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব, কমান্ড এরিয়া সুনির্দিষ্টকরণসহ সেচযন্ত্রের লাইসেন্স গ্রহণ এবং অগভীর নলকূপের কমান্ড এরিয়া ৬ হেক্টর নির্ধারিত রয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী সারা দেশে মোট ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৭৮টি অগভীর নলকূপ প্রয়োজন। বর্তমানে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩৪টি বিদ্যুত্চালিত অগভীর নলকূপ রয়েছে। সে হিসেবে আরো ২ লাখ ৯ হাজার ৬৪৪টি বিদ্যুত্চালিত সেচযন্ত্র দরকার।

অন্যদিকে বর্তমানে অপসারণযোগ্য সেচযন্ত্রের সংখ্যা ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫৪। এর মধ্যে ২ লাখ ৯ হাজার ৬৪৪টি ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপকে দ্রুত বিদ্যুৎ অথবা সৌরচালিত সেচযন্ত্রে রূপান্তর করতে হবে। এটি করতে হলে বাড়তি তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হতে পারে।

এ বিষয়ে বিএডিসির ক্ষুদ্র সেচ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট গবেষক মো. জিয়াউল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রে খরচ বেশি হওয়ায় কৃষক ও মালিক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র অপসারণ করে তা দ্রুত পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ বা সৌরশক্তিচালিত সেচযন্ত্রে রূপান্তর প্রয়োজন। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটি করতে হলে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র অপসারণের জন্য ‘কৃষিকাজে পানি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা’ অনুযায়ী সব সেচযন্ত্রে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনকারী সেচযন্ত্র অপসারণ করা, লাইসেন্সবিহীন সেচযন্ত্র ও যেসব সেচযন্ত্রের সেচ খরচ বেশি তা দ্রুত অপসারণ করে কৃষিকে স্মার্ট করা সম্ভব হবে।

Leave A Comment

To Top