চার ধাপ এগিয়েও শ্রীলঙ্কার পেছনে বাংলাদেশ

September 19, 2023 0 Comments
বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০তম। গত বছরের তুলনায় চার ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। তার পরও রাজনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার (৭৯) চেয়ে এক ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ।যুক্তরাজ্যভিত্তিক দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) ‘গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্স ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি তুলে ধরতে ২০১২ সাল থেকে এই সূচক প্রকাশ করে আসছে ইআইইউ।এবারের সূচকে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ১৩টি দেশের মধ্যে লাওস ও পাকিস্তানের ওপরে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮৪তম। আর শ্রীলঙ্কার অবস্থান ছিল ৭২তম।
চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারত ৬৮তম, মিয়ানমার ৭২তম এবং নেপাল ৭৪তম অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, চারটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ১০০ পয়েন্ট প্রদানের মাধ্যমে সূচকটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এগুলো হলো ক্রয়ক্ষমতা, সহজলভ্য বা প্রাপ্তি, গুণগত মান ও নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক সম্পদ ও সহনশীলতা। এসব সূচক মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫৪।
সার্বিক সূচকে ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮০তম। এর মধ্যে খাদ্য ক্রয়ক্ষমতায় ৫২.১ পয়েন্ট পেয়ে অবস্থান ৮৭তম এবং খাদ্যপ্রাপ্তিতে ৬১.৫ পয়েন্ট পেয়ে ৪৬তম। খাদ্যের গুণগত মান ও নিরাপত্তায় ৫৮.৪ পয়েন্ট পেয়ে অবস্থান ৭১তম এবং টেকসই প্রাকৃতিক সম্পদ ও অভিযোজনে ৪৩.৯ পয়েন্ট পেয়ে অবস্থান ৯৩তম।প্রতিবেদনের তথ্য মতে, খাদ্য নিরাপত্তার শীর্ষ দেশের তালিকায় রয়েছে ফিনল্যান্ড। দেশটি ১০০ পয়েন্টের মধ্যে অর্জন করেছে ৮৩.৭।
এর পরই আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস। অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তার তলানিতে সিরিয়া। ১০০ পয়েন্টের মধ্যে দেশটির অর্জন ৩৬.৩। এর পরই যথাক্রমে হাইতি, ইয়েমেন, সিয়েরা লিওন ও মাদাগাস্কার। তবে বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে স্থবিরতা চলে এসেছে। গত ১১ বছরের মধ্যে সারা বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তার মান সর্বোচ্চ উন্নীত হয়েছিল ২০১৯ সালে। পরের বছর ২০২০ সালেও তা অব্যাহত ছিল। অন্যদিকে ২০২১ সলে তা ৬২.২ পয়েন্টে নেমে আসে, যা চলতি বছরও বিদ্যমান। যুদ্ধ পরিস্থিতিসহ সরবরাহ সংকটে বৈশ্বিক খাদ্যমানের উন্নতি হচ্ছে না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।এ বিষয়ে দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ইকোনমিস্ট ইমপ্যাক্টসের প্রিন্সিপাল প্রতিমা সিং কালের কণ্ঠকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি খাদ্য বাণিজ্যের বড় বাধা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবহন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে খাদ্য সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে বৈশ্বিক খাদ্যের সহজলভ্য প্রাপ্তি কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হচ্ছে অনেক দেশকে। সার্বিকভাবে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার কারণে এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য খাদ্য নিরাপত্তা কিছুটা ঝুঁকিতে থাকবে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অবশ্যই সক্ষমতা অনুসারে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক যোগাযোগ সুদৃঢ় করতে হবে।বাংলাদেশ মূলত দুটি মানদণ্ডে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে টেকসই প্রাকৃতিক সম্পদ ও অভিযোজন। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বেশ শক্তিশালী হলেও ব্যবস্থাপনায় বেশ দুর্বলতা রয়েছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। তবে পানি ও ভূমি ব্যস্থাপনায় আরো জোর দেওয়া প্রয়োজন রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ ছাড়া খাদ্য ক্রয়ক্ষমতায় বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে। ১১৩টি দেশের মধ্যে ৮৭তম। এই মানদণ্ডের বেশ কিছু উপসূচকে বাংলাদেশ বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কৃষি গবেষণা ও উৎপাদন এবং কৃষিপণ্যের বাণিজ্য। দেশের খাদ্য ও খাদ্যপণ্যের মান নিয়ে যথেষ্ট উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। তবে কৃষি অবকাঠামো, দারিদ্র্য ইস্যু এবং খাদ্য নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে না পারার কারণে খাদ্য ক্রয়ক্ষমতার সূচকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রবেশগম্যতার জন্য অঙ্গীকারের ঘাটতি রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই মানদণ্ডে বৈশ্বিক গড় যেখানে ৭২.৪ পয়েন্ট, সেখানে বাংলাদেশের অর্জন মাত্র ২৬.৮ পয়েন্ট। কৃষি অবকাঠামো বেশ অনুন্নত এবং টেকসই না হওয়ায় বাংলাদেশের অর্জনকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া দেশের একটি বড় অংশই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। তাদের কাছে খাদ্য প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি দেখছে দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গবেষণা। এ বিষয়ে সাবেক খাদ্যসচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, খাদ্য প্রাপ্তিতে কিছুটা গুরুত্ব দিলেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে কার্যকর টেকসই পদক্ষেপ নেই। এই জায়গায় যেমন সচেতনতার অভাব রয়েছে, তেমনি আইনের প্রয়োগে যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। আমদানিনির্ভর খাদ্য প্রাপ্তি দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই প্রাপ্তি বাড়াতে যেমন কৃষককে দেওয়া সুবিধাগুলোকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, তেমনি জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় শস্য উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হারকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করতে নীতি পুনর্মূল্যায়ন এবং নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে। নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তিতে আইনের কার্যকর প্রয়োগ এবং খাদ্যসংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান থেকে বিরত থাকার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।

Leave A Comment

To Top