গমে আমদানি কমে ব্যয় বেড়েছে

September 16, 2023 0 Comments
গত অর্থবছরে গমের আমদানি আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। তবে আমদানি কমলেও ব্যয় বেড়েছে। এক অর্থবছরের ব্যবধানে গমের আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। ভোজ্য তেলের পর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাদ্য আমদানি ব্যয় হচ্ছে এখন গমে। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে (২০২১-২২) আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে ভোজ্য তেলে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে। এ সময় ২১ হাজার ৮৮০ টাকার তেল আমদানি করা হয়। একই অর্থবছরে আমদানি ব্যয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে গম। এ সময় মোট ৪০ লাখ ১২ হাজার টন গম আমদানিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
  ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ৫৩ লাখ ৪৩ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছিল। এতে ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ২১২ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে গম আমদানির পরিমাণ ছিল ৬৪ লাখ ৩৫ হাজার টন।
আমদানি ব্যয় ছিল ১২ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। গড়ে গত তিন অর্থবছরে ৫২ লাখ ৬৩ হাজার টন গম আমদানি হয়েছে। গড়ে প্রতিবছর ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা।  চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) গম আমদানি হয়েছে ৯ লাখ ৮৪ হাজার টন। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে গম আমদানি হয়েছিল ১৫ লাখ ৩০ হাজার টন।
এ হিসাবে চার মাসে গম আমদানি কমেছে পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার টন বা ৩৫.৬৮ শতাংশ। নানা উদ্যোগের পরও গম আমদানি বাড়ানো যাচ্ছে না। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও বিশ্ববাজারে গমের দাম বাড়ার কারণে এই খাদ্যপণ্যের আমদানি কমতির দিকে।চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গম আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৮৬ হাজার টন। এর মধ্যে সরকারিভাবে তিন লাখ ৭১ হাজার এবং বেসরকারিভাবে সাত লাখ ১৫ হাজার টন গম আমদানি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গম আমদানিতে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। এ বিষয়ে সাবেক খাদ্যসচিব আব্দুল লতিফ মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, গম আমদানির পরিমাণ কমার যথেষ্ট কারণ থাকতে পারে। কিন্তু গম আমদানি ব্যয় বাড়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। আটার দাম বাড়ার কারণে মানুষ গম খাওয়া কমিয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি আমাদের কিছু কুকিজ পণ্য রপ্তানি হতো, সেটি কমে যাচ্ছে কি না, তা দেখার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমে যাওয়া ছাড়াও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যয় বাড়তে পারে। তবে অযৌক্তিকভাবে গম আমদানি কমে যাওয়া খাদ্য নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের। এই উদ্বেগ কাটাতে সরকারকে গম আমদানিতে বাধা দূর করতে হবে। বিশেষ করে বর্তমানের সংকটময় পরিস্থিতিতে গমের চাহিদা ও উৎপাদন সঠিকভাবে নির্ধারণ করে আমদানির পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে। গত এক যুগের গম আমদানি ও উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছরই স্বল্প পরিমাণে চাল ও গমের ব্যবহার বাড়ছে। সেখানে চালের তুলনায় গমের ব্যবহার অধিক হারে বাড়ছে। গত ১২ বছরে গড়ে ৪৩ লাখ টন গম আমদানি হচ্ছে। অন্যদিকে গত তিন বছরে গড়ে প্রতিবছর ৫৩ লাখ টন গম আমদানি হচ্ছে। তুলা ও ভোজ্য তেলের পরই এখন আমদানিতে শীর্ষ ব্যয় গমে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় এক লাখ ১৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকার খাদ্য ও কৃষিপণ্যের আমদানি হয়েছে। চাল, গম, দুধ ও দুগ্ধজাত, তেল, ডাল, তুলা, মসলাসহ বেশ কিছু প্রক্রিয়াজাত কৃষি ও খাদ্যপণ্য আমদানিতে বড় ধরনের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হচ্ছে। যদিও এই সময়ে রপ্তানি ১০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। এতে এক লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।

Leave A Comment

To Top