আমদানি ব্যয় দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়াবে

September 19, 2023 0 Comments
চলতি অর্থবছরে সারসহ ১০ খাদ্যপণ্য ও কৃষিপণ্য আমদানি করতে খরচ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। গত অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯২ কোটি টাকা।রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, পণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, খাদ্যপণ্য সরবরাহে অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতা চলতি বছরে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির মূল কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সার, কৃষিপণ্য ও খাদ্যপণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৯৫ হাজার ৯০২ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরে ৪৩ শতাংশ বেড়ে এই ব্যয় দাঁড়ায় এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯২ কোটি টাকা।গত অর্থবছরে শুধু চাল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে চার হাজার ৬৮০ কোটি এবং গমে ১৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। মাত্র দুটি দানাদার খাদ্যশস্য আমদানিতে ব্যয় হয় প্রায় ২২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। একই সময়ে সারে ২৪ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, ভোজ্য তেলে ২১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, তেলবীজে ১৩ হাজার ৮৫৪ কোটি এবং চিনিতে ১০ হাজার ২৪০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়।
তবে একক পণ্য হিসেবে আমদানিতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় তুলায়, ৩৫ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা।দেশের কৃষি অর্থনীতিবিদদের মতে, চলতি অর্থবছরে দেশে চালের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। আবার স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিশ্ববাজারে চাল ও গমের দাম বেড়েছে।
ফলে এবার চাল, গমে আমদানি ব্যয় আরো বাড়বে। দেশের ভেতরে সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে সরকারের কাছে এই দুই পণ্য আমদানির কোনো বিকল্প নেই। তা মাথায় রেখে সরকার মজুদও বাড়ানোর চেষ্টা করছে।গত অর্থবছরে সারের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এমওপি সারের একটা বড় উৎস রাশিয়া ও বেলারুশ।
যুদ্ধের কারণে ওই দুই দেশ থেকে স্বাভাবিক মাত্রায় সার আনা যাচ্ছে না। বিকল্প উৎস থেকে বেশি দামে সার আনতে হচ্ছে।পাশাপাশি দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, মসলা, ভোজ্য তেল ও তেলবীজ, ডালের দামও বাড়তির দিকে। ফলে সার, কৃষি ও খাদ্য খাতের ১০ পণ্য আমদানি ব্যয় দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কৃষি অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মুদ্রা বিনিময় হার অনুকূলে না থাকায় কৃষিপণ্য ও খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে কিছু পণ্যের দাম কমতির দিকে থাকলে এখনো পণ্যবাজার অস্থিতিশীল। তিনি বলেন, বিকল্প হিসেবে দেশে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, ইউরিয়া সারের আমদানিনির্ভরতা কমানো এবং বৈশ্বিক বাজার থেকে কম দামে পণ্য কেনায় আরো দক্ষতা অর্জন করতে হবে। চলতি বছরের ২২ জুন চালের আমদানি শুল্ক ও করভার ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এর মাধ্যমে বেসরকারিভাবে প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। গত ২৮ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় শুল্ক ও করভার ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামানো হয়। এখন সরকারিভাবে প্রায় ১২ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরই মধ্যে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে গত অর্থবছরের তুলনায় এ বছরে অন্তত ১০ লাখ টন বেশি চাল আমদানি হতে পারে। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ পুলের সদস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, শুধু কৃষিপণ্য ও খাদ্যপণ্য আমদানিতে লাখ কোটি টাকার ব্যয় অর্থনীতির জন্য ভালো খবর নয়। আমদানিনির্ভরতা বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপও বেড়েছে। আমদানিনির্ভরতা কমাতে হলে কৃষিপণ্যের উৎপাদন সম্ভাবনা কাজে লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। হামিদুর রহমান বলেন, বোরো ও আমন মৌসুমে আরো উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্যবহার বাড়াতে হবে। আর চাষের সময় কমিয়ে আনতে পারলে কয়েক লাখ হেক্টর জমিতে বাড়তি চাষের সুযোগ হবে। এসব জমিতে তেল ও ডালজাতীয় শস্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আবহাওয়াগত বিষয় থাকায় গম উৎপাদান সেই হারে বাড়বে না। জাতীয় কৃষিনীতিতে বলা হয়েছে, আমদানিনির্ভর খাদ্যশস্য দেশে উৎপাদনে জোর দিতে হবে। এর জন্য শস্যের নিবিড়তা (এক জমিতে একাধিক ফসল) বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডেইরি খাতেও উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। আমদানি গুঁড়া দুধ বিশেষ করে বাল্ক ফিল্ড মিল্ক আমদানিতে শুল্ক হার বাড়াতে হবে। দেশেই গুঁড়া দুধের প্লান্ট তৈরি করার সব ধরনের সহযোগিতা দিতে হবে। খামারিদের দুধ সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি গবাদি পশুর জাত উন্নয়ন, পশুখাদ্য ও চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণ করতে হবে। তা না হলে আমদানিনির্ভরতা কমানো যাবে না।  

Leave A Comment

To Top