Category Archives: Blog

  • প্রতিদিন রাতে ঠিক ৯টা বাজলেই অন্যরকম এক চাঞ্চল্য তৈরি হয় পাঞ্জাবের ভাতিন্ডা রেলস্টেশনে। রোজকার মতোই ১২ কোচের যাত্রীবাহী একটি ট্রেন এসে দাঁড়ায় রেলস্টেশনের ২ নম্বর প্লাটফর্মে। যাত্রীরা ছাড়াও ট্রেনটিকে এক নজর দেখতে আসা উত্সুক মানুষের সংখ্যাও কম থাকে না। ট্রেনটি প্লাটফর্ম ত্যাগ করে ঠিক ৯টা ২৫ মিনিটে। এরপর ৩২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভোর ৬টা নাগাদ পৌঁছায় রাজস্থানের বিকানিরে। ট্রেনটিকে নিয়ে সবার আগ্রহের কারণ এর নামেই স্পষ্ট—‘ক্যান্সার ট্রেন’। ট্রেনটির মোট যাত্রীর প্রায় ৬০ শতাংশ থাকে ক্যান্সারের রোগী। এর কারণ হলো, ভাতিন্ডা থেকে বিকানির পর্যন্ত ট্রেনটির যাত্রীভাড়া ২১০ রুপি হলেও ক্যান্সার রোগীদের জন্য ফ্রি। রোগীর সঙ্গে থাকা অ্যাটেনডেন্টদের জন্য ভাড়ায় ছাড় থাকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। এ ট্রেনের যাত্রীদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য থাকে বিকানিরের আচার্য তুলসি রিজিওনাল ক্যান্সার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার। ভাতিন্ডায় যাত্রা করে পথে ২৬টি স্টপেজ থেকে পাঞ্জাবের বিভিন্ন এলাকার ক্যান্সার আক্রান্ত যাত্রীদের তুলে নেয় ট্রেনটি। এ রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই থাকেন আবার কৃষক। ট্রেনটির যাত্রী সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশ বেড়েছে। এর কারণ হলো ‘ভারতের রুটি ঝুড়ি’ খ্যাত পাঞ্জাবের কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে। রাজ্যটির কৃষকদের মধ্যে প্রাণঘাতী ব্যাধিটির প্রকোপ বেশি হওয়ার পেছনে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার, দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি ও কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্যকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা। পাঞ্জাবের কৃষিজীবীদের জনস্বাস্থ্যে বিপর্যয়ের এ চিত্রের প্রতিফলন এখন বাংলাদেশী কৃষকদের মধ্যেও স্পষ্ট। এখানেও কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে দেশের জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঞ্জাবের কৃষকদের মতো বাংলাদেশী কৃষকদের মধ্যেও কীটনাশক ও কৃষি রাসায়নিকের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারের প্রবণতা অনেক বেশি। দেশের একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি ক্যান্সার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিআরএইচ)। হাসপাতালটির ক্যান্সার এপিডেমিওলজি বিভাগের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট: ২০১৫-১৭’ প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর হাসপাতালটিতে যত রোগী ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশই কৃষক। এছাড়াও শনাক্তকৃতদের মধ্যে কৃষকের হারও এখন উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে হাসপাতালটিতে ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয় ১০ হাজার ৩১০ জন। তাদের মধ্যে ৩০ দশমিক ২ শতাংশই কৃষক। ২০১৬ সালে শনাক্তকৃত ১১ হাজার ১৫ জনের মধ্যে কৃষক ছিলেন ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৭ সালে ১৪ হাজার ৪৪ জন ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়, তাদের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ছিলেন কৃষক। দেশের কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বাড়ার পেছনে কীটনাশকসহ কৃষি রাসায়নিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারকেই দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) ও গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (জিএপি) নীতিমালার পরামর্শ হলো, রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহারের সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার ও শরীরের অন্যান্য অংশে কীটনাশকের অনুপ্রবেশ রোধের প্রতিরোধক ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়া বাতাসের উল্টো দিকে তা প্রয়োগ করা যাবে না। কিন্তু সিংহভাগ কৃষকই এসব পরামর্শ মানছেন না। কোনো ধরনের সুরক্ষা উপকরণ বা ব্যবস্থা ছাড়াই কীটনাশক প্রয়োগ করছেন ৮৫ শতাংশের বেশি কৃষক। ফলে এসব রাসায়নিক ও কীটনাশকের মারাত্মক এবং ক্ষতিকারক সূক্ষ্ম উপাদানগুলো দেহে প্রবেশ করে মারণব্যাধির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একই সঙ্গে তা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ও অনিরাপদভাবে কীটনাশক প্রয়োগের কারণে ক্যান্সার ছাড়াও স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কৃষকরা। দীর্ঘমেয়াদে তা হয়ে উঠছে কিডনি, হূদযন্ত্র ও ফুসফুসের ক্ষতির কারণ। ফলে ফসলের রোগবালাই দমনের পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অবহেলা করছেন কৃষকরা। এভাবে কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকের যেমন বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ওপরও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গত বছরের আগস্টে ফুসফুসের ক্যান্সার শনাক্ত হয় নোয়াখালীর বাসিন্দা আব্দুর রহমানের (৫৫)। এরপর রাজধানীতে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন তিনি। চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী থেকে ঢাকায় এসে কেমোথেরাপি নিতে হয় তাকে। মারাত্মক অসুস্থতা ও দুর্বলতার কারণে তিনি গত ডিসেম্বরে বাথরুমে পড়ে মাথায় আঘাত পান। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন সপ্তাহ কোমায় থাকার পর ১ জানুয়ারি তিনি মারা যান। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী মনে করছেন, যথাযথভাবে নিরাপত্তা উপকরণ ব্যবহার না করা এবং অতিমাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহারের কারণেই কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের হার বাড়ছে। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এখন কৃষির সঙ্গে সবকিছুই হয়ে পড়েছে রাসায়নিকনির্ভর। বিশেষ করে কীটনাশক ব্যবহারের সময় কৃষি পেশায় জড়িতরা কোনো ধরনের সুরক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা করছেন না। আমাদের দেশে কৃষকরা মাটি উর্বর করা, ফল পাকানো ও অধিক ফলনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। এভাবে অনিয়ন্ত্রিত ও অরক্ষিতভাবে কীটনাশক প্রয়োগের কারণে তাদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের হার বাড়ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফসলের রোগবালাই ও কীটপতঙ্গ দমনের জন্য কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক, পতঙ্গনাশক ও রোডেন্টিসাইড (ইঁদুর মারা বিষ) ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতি বছর এসব কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার হচ্ছে গড়ে ৩৫-৩৭ হাজার টন। এছাড়া বার্ষিক রাসায়নিক সারের ব্যবহার হচ্ছে ৫০ লাখ টনেরও বেশি। কৃষকের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি এসব উপকরণের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে সার্বিক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশেও দেখা যাচ্ছে বিরূপ প্রভাব। পাঞ্জাবের কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রকোপ বৃদ্ধির উৎস নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিক ধ্রুবি মহাজনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেও উঠে এসেছিল একই কথা। ওই প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, ষাট-সত্তরের দশকে ওই অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে সনাতনী কৃষি ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে কীটনাশক, সার ও উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার শুরু হয়। তবে এর নিয়ন্ত্রিত ও পরিমিত ব্যবহার নিয়ে কৃষকদের সচেতন করে তোলার বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি কখনই। উপরন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিল না। এর ধারাবাহিকতায় ভারত ক্ষুধা ও খাদ্যের জন্য পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পেলেও তার মূল্য চুকাতে হয়েছে স্থানীয় কৃষকদের। জারনাইল সিং নামে স্থানীয় এক কৃষকের বরাত দিয়ে ধ্রুবি মহাজন জানাচ্ছেন, এলাকা থেকে ময়ূর উধাও হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে কৃষকরা প্রথম টের পান, কোথাও কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে। জারনাইল সিং যখন বিষয়টি পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারেন, ততদিনে তার পরিবারের সাত সদস্য ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিজ গ্রাম ও আশপাশের অন্য অনেক গ্রামের বাসিন্দাদের ক্যান্সারের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব জারনাইল সিংকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। তিনি লক্ষ্য করলেন, তার এলাকার কৃষকদের মধ্যে ফসলে বারবার কীটনাশক স্প্রে করার প্রবণতা রয়েছে। এছাড়া তারা স্প্রে করার সময় কোনো ধরনের সুরক্ষা উপকরণ বা পোশাক ব্যবহার করেন না। বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে যোগাযোগ শুরু করেন জারনাইল সিং। এক পর্যায়ে তার আবেদনে সাড়া দিয়ে পাঞ্জাবের পোস্টগ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের গবেষকরা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। তারা দেখতে পান, জারনাইল সিংয়ের ধারণাই সঠিক। যেসব এলাকায় কৃষকদের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে, সেসব এলাকায় ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাবও অনেক বেশি। পাঞ্জাবের মতো বাংলাদেশেও কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে কীটনাশক ও কৃষি রাসায়নিকের অনিরাপদ ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারকেই চিহ্নিত করেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোস্যাল মেডিসিনের (নিপসম) সাবেক অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক খান। এ বিষয়ে তিনি বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পরিসরেই বলা হয়, কৃষিতে জড়িতদের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পেছনে অন্যতম প্রধান দায়ী উপকরণ হলো কীটনাশক ও কৃষি রাসায়নিক। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও বলা যায়, পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতির কারণেই কৃষকদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরো অনেক বেশি। এছাড়া কীটনাশক কোম্পানিগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে কীটনাশক বিপণন ও প্ররোচনার মাধ্যমে কৃষককে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের। তাদের ভাষ্যমতে, এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত বিপণন ও প্ররোচনার ফাঁদে পড়ে কৃষকরা যথেচ্ছভাবে কীটনাশক ও কৃষি রাসায়নিক ব্যবহার করছেন। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করেই ফসলের ক্ষেতে এসব রাসায়নিক প্রয়োগ করছেন তারা। এজন্য কৃষকের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কীটনাশক ও কৃষি রাসায়নিকের দায়িত্বশীল ব্যবহার নিয়ে নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি কৃষকের সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ কৃৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বাড়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে একটি প্রধান কারণ হতে পারে কৃষিচর্চার ধরন। অর্থাৎ যখন একজন কৃষক কীটনাশক বা রাসায়নিক স্প্রে করছেন, তখন তিনি নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন না। কৃষকরা কাজের অধিকাংশ সময় ডাস্টের সঙ্গেই থাকেন। ফসল ও জমির ডাস্ট তাদের ফুসফুসের জন্য অনেক ক্ষতিকর এবং ফুসফুসের ক্যান্সারেরও কারণ। মোটা দাগে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার তেমন কোনো ব্যবস্থা কৃষকরা ব্যবহার করেন না। পর্যাপ্ত ও সময়মতো সুরক্ষা ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে তাদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি। আমাদের দেশে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ঘাটতি আছে। এগুলো নিশ্চিত করতে পারলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। কৃষকরা নিজেদের অজান্তে যাতে আক্রান্ত না হয় তা নিশ্চিত করতেই এ বিষয়গুলো জরুরি। কৃষকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে। তবে শুধু কৃষক নয়, দেশে সার্বিকভাবেই ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন এনআইসিআরএইচের ক্যান্সার এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার। তার অভিমত, দেশে ক্যান্সার রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে বড় পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আরো গভীরে গিয়ে গবেষণা চালালে কোন পেশায় কী কারণে ক্যান্সার রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া যাবে।

  • ধারে কৃষি উপকরণ ক্রয় ও গ্রামের মজুদাগার ব্যবস্থা উঠে যাওয়ার কারণে  দ্রুত ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা। সংগ্রহের এক মাসের মধ্যে ৫২ শতাংশ ধান বিক্রি করে দেন তারা। ‘বাংলাদেশে চালের প্রাপ্যতা ও দামের অস্থিরতা: একটি আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা প্রতিবেদন-২০২০’ শীর্ষক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ব্রি) এ গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মৌসুমের শুরুতেই এক মাসের মধ্যে উদ্বৃত্ত ধানের ৫২ শতাংশ বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষক। আর এক থেকে দুই মাসের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে ২৫ শতাংশ, দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ১৮ শতাংশ এবং চার মাস বা তার বেশি সময়ের মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে ৫ শতাংশ ধান। অর্থাৎ বেশি দামের আশায় ধান মজুদ করার প্রবণতা কম। অবশ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান বিক্রির পরিমাণে বেশ পরিবর্তন এসেছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে এক মাসের মধ্যে বিক্রির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৯ সালে এক মাসের মধ্যে বিক্রি হয়েছিল ৬৫ শতাংশ ধান, যেখানে এক থেকে দুই মাসের মধ্যে ছিল ২০ শতাংশ, দুই-তিন মাসের মধ্যে ১৩ এবং চার মাস বা ততোধিক ছিল ২ শতাংশ। মূলত গত বোরো মৌসুমে ধানের ভালো দাম পাওয়ার কারণে প্রথম মাসে বিক্রির প্রবণতা কিছুটা কমেছে। তবে এখনো প্রথম মাসের মধ্যে যে পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে, তা কৃষকের জন্য বেশ ক্ষতির কারণ হচ্ছে। ধানের মজুদাগার ও আর্থিকভাবে কৃষকদের সক্ষম করে তুলতে পারলে কৃষকের ধানের মাধ্যমে আরো বেশি লাভবান করা সম্ভব বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষক দলের প্রধান ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) সাবেক মহাপরিচালক কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, কৃষক যে ভালো নেই এটি তার একটি প্রতীকী চিত্র। প্রধানত দুটো কারণে মৌসুমের শুরুতে কৃষক ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রথমত, কৃষক ধারদেনা করে ধান উৎপাদন করে বিধায় দ্রুত অর্থ পরিশোধের তাড়া থাকে। অন্যদিকে কৃষকের ঘরে এখন আর বাড়তি জায়গা নেই। ফলে আর্থিক সক্ষমহীনতা ও মজুদাগারের অভাবে বাধ্য হয়েই ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষক। এ কারণে ধানের বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে মিলার ও ট্রেডার্সদের হাতে। আবার কৃষকের ধান উৎপাদন খরচ এক যুগ ধরে প্রতি বছর গড়ে ২-৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে এই এক যুগে মুনাফা কমে গেছে প্রায় ৮ শতাংশ। ফলাফল ধানের প্রকৃত দামে হ্রাস। একদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, অন্যদিকে মুনাফার কমতি কৃষকদের আর্থিক সক্ষমতায় দারুণভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে। এজন্য মোট উৎপাদিত ধানের ন্যূনতম ১০ শতাংশ কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহের পরামর্শ দেন তিনি। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে ধানের উৎপাদন খরচ বাড়লেও কমে গেছে শস্যটির প্রকৃত দাম। কোনো কোনো বছর বোরো ধানে কৃষক লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। যেখানে দেশের আবাদি জমির সিংহভাগেই বোরো ধান চাষ হয়। বোরো আবাদে কৃষকের হেক্টরপ্রতি লোকসান এখন প্রায় ৬ হাজার টাকা। এ লোকসানের অন্যতম কারণ শ্রমিক ব্যয়। পারিবারিক ও ভাড়া শ্রমিকের পেছনে ব্যয় হচ্ছে মোট উপকরণ খরচের প্রায় ৪৬ শতাংশ। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষিপণ্যের আধুনিক বাজার ব্যবস্থা ও বাণিজ্যিকীকরণ দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে এসিআই এগ্রিবিজনেসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ড. ফা হ আনসারী বণিক বার্তাকে বলেন, ধান কাটা থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে যান্ত্রিকীকরণ করতে পারলে কৃষকদের বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। কম্বাইন হারভেস্টার জমির ধান কাটা থেকে মাড়াই ও বস্তাবন্দি করে বাড়িতে নিয়ে আসা পর্যন্ত কৃষকের খরচ ও সময়ের বড় ধরনের সাশ্রয় করে। এছাড়া প্রথাগতভাবে ধান কাটা ও মাড়াই করলে ধানের ১২-১৫ শতাংশ নষ্ট হয়। যন্ত্রের মাধ্যমে সেই কাজটি করলে ক্ষতির পরিমাণ ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। পাশাপাশি যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে তরুণ কর্মসংস্থানকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। তিনি আরো বলেন, শস্যের নিবিড়তা বাড়ানোর মধ্যেমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং ইন্টারক্রপিং গ্যাপ (আন্তঃফসল বিরতি) কমিয়ে এনে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। কৃষকের উৎপাদন খরচের বহুমুখী মাধ্যম প্রয়োগ করে মুনাফা বৃদ্ধি করতে হলে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই। আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইএফপিআরআই) একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জমির পরিমাণ বা আকারের হিসাবে দেশের প্রায় ৮৩ শতাংশ কৃষকই প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র। শূন্য দশমিক ৫ একরের নিচে এমন আকারের জমি আবাদ করে থাকেন ৩৬ শতাংশ কৃষক। তাদের বলা হয় প্রান্তিক কৃষক। আর শূন্য দশমিক ৫ থেকে দেড় একরের কম জমি আবাদ করেন ৪৭ শতাংশ, সংজ্ঞানুযায়ী তারা ক্ষুদ্র কৃষক। ফলে দেশের সিংহভাগ কৃষকই ক্ষুদ্র ও ছোট জমিতে আবাদ করেন। এসব জমিতে আবাদের মাধ্যমে কৃষক নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য আর্থিক এবং সামাজিক চাহিদা পূরণ করেন। এতে চাহিদা মেটানোর জন্য কাটার শুরুতেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষক। এটির সুযোগ নিচ্ছেন মিলার ও ফড়িয়ারা। এ বিষয়ে ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, একদিকে ক্ষুদ্র কৃষক অন্যদিকে আর্থিক সক্ষমতাহীনতা। এ দুটোর প্রভাবে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বেশ ঝুঁকিতে থাকেন কৃষক। মিলারদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো কৃষকের এ আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাজার থেকে সবচেয়ে কম দামে ধান কিনতে পারা। তাই কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা বাড়াতে হবে। সংগ্রহ পদ্ধতির আধুনিকায়ন করতে হবে। উৎপাদন খরচ কমাতে উন্নত জাতের ধান ও প্রযুক্তি কৃষকের মধ্যে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে ভালো দাম পাওয়া যায় এমন জাতের আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ধান আবাদে কৃষককে লাভবান করতে না পারলে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে।

  • স্বাধীনতার পর পাঁচ দশকে খাদ্যশস্যের উৎপাদন দেশে তিন গুণ বেড়েছে। বৈশ্বিক চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন তৃতীয় অবস্থানে। এ কারণে কভিডকালেও খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে হয়নি বাংলাদেশকে। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে এসে খাদ্যশস্য নিয়ে এ উচ্ছ্বাস এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে আসছে। করোনাজনিত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বড় ধরনের খাদ্যঘাটতিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। খাদ্যশস্যের দামে এর প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) গ্লোবাল এগ্রিকালচারাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের (গেইন) প্রতিবেদনের তথ্যেও এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। প্রতিবেদনটি চলতি সপ্তাহেই প্রকাশ হয়েছে। ‘গ্রেইন অ্যান্ড ফিড আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) দেশে চালের উৎপাদন হবে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টন কম। যদিও এ সময় দেশে খাদ্যপণ্যটির চাহিদা থাকবে প্রায় ৩ কোটি ৫৯ লাখ টন। সে হিসেবে দেশে এবার চালের ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় ১১ লাখ টনে। অন্যদিকে এ সময় দেশে গমের চাহিদা থাকবে প্রায় ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টন। যদিও উৎপাদন হবে মাত্র ১২ লাখ ২০ হাজার টন। সব মিলিয়ে দেশে এবার প্রায় ৭৪ লাখ ৩০ হাজার টন খাদ্যঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যে দেখা যায়, গত  অর্থবছরে (২০১৯-২০) দেশে মোট চাল উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৮৭ লাখ ২৪ হাজার টন। চলতি অর্থবছরে এ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ টন। যদিও ইউএসডিএর প্রক্ষেপণ বলছে, এবার চালের উৎপাদন হবে লক্ষ্যের তুলনায় অনেক কম। ইউএসডিএর ভাষ্যমতে, এ ঘাটতি পূরণের জন্য আমদানিনির্ভরতায় ফিরতে হবে বাংলাদেশকে। সেক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে শুধু গমই আমদানি করতে হবে প্রায় ৬৬ লাখ টন। সব মিলিয়ে দেশে এবার খাদ্যঘাটতি মেটাতে চাল ও গম আমদানি করতে হতে পারে প্রায় ৭৭ লাখ টন। সেক্ষেত্রে এবার স্বাধীনতার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হতে পারে বাংলাদেশকে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ যাবত্কালের সর্বোচ্চ খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। ওই সময় এর পরিমাণ ছিল ৯৭ লাখ ৭৪ হাজার টন। মূলত চালের আমদানি শুল্ক কমানোর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ওই বছর উৎপাদন কমে যায়। ফলে আমদানি বাড়াতে হয়। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানির নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের সংশোধিত চাহিদা অনুযায়ী, এবার খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে ২৪ লাখ ৫৫ হাজার ৭ টন। এর মধ্যে চাল ১৮ লাখ ৬৫ হাজার টন ও গম ৫ লাখ ৯০ হাজার টন। অন্যদিকে খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আনুমানিক প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টন। এ বিষয়ে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বণিক বার্তাকে বলেন, খাদ্যশস্যের উৎপাদনে গতি ধরে রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সময়ে সঠিক পরিমাণে খাদ্যশস্য আমদানির মাধ্যমে মানুষের চাহিদা পূরণে খাদ্য মন্ত্রণালয় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে মহামারী পরিস্থিতিতে দেশের কোথাও খাদ্য সরবরাহে সংকট তৈরি হয়নি। আবার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খাদ্যের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ ছিল। এ কারণে দেশের খাদ্য সরবরাহ বেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে খাদ্যশস্যের মজুদ বাড়ানোর সব ধরনের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও আমদানি—উভয় বাজার থেকে সংগ্রহ প্রক্রিয়ার গতি বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে আমদানীকৃত চাল ও গম আসতে শুরু করেছে। প্রায় ছয় লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানির উদ্যোগ নেয়ার মাধ্যমে আগামী জুন পর্যন্ত খাদ্যশস্যের মজুদ নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই উৎপাদনে যদি কিছুটা কমতিও থাকে সরবরাহে কোনো ধরনের ঘাটতি বা সংকট তৈরি হবে না। খাদ্যশস্যের উৎপাদনে ঐতিহাসিক সাফল্যের পরও চলতি অর্থবছরে এ আমদানিনির্ভরতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর কারণ অনুসন্ধানের প্রয়াস চালিয়েছে বণিক বার্তা। এ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও। এসব আলোচনায় বেশকিছু বিষয়ও উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে বড় একটি কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের আশঙ্কা, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব এবার খাদ্যশস্য উৎপাদনে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত ও রোগের প্রাদুর্ভাবে কয়েক বছর ধরেই গমের উৎপাদন নিম্নমুখী। উপরন্তু দেশে চাল সরবরাহের সবচেয়ে বড় উৎস বোরো ধানেও কৃষকের তেমন কোনো মুনাফা নেই। কৃষি সরবরাহ চেইনের নানা জটিলতা এখনো গ্রামের কৃষকের অর্থবিত্ত বৃদ্ধির পথে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে রয়েছে। যদিও ট্রেডার ও মধ্যস্বত্বভোগীরা সম্পদ বাড়িয়ে ক্রমেই বিত্তশালী হয়ে উঠছে। অন্যদিকে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণের পথেও রয়েছে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। মানসম্মত বীজের প্রাপ্যতা নিয়েও সংকট রয়েছে। তথ্য বলছে, দেশের মোট আবাদি জমির প্রায় ৭৫ শতাংশেই এখনো ধানচাষ হচ্ছে। বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে প্রায় ৪৮ লাখ হেক্টরে। সে বোরো আবাদে মুনাফার দিক থেকে কৃষকের অর্জন শূন্য। উল্টো প্রতি হেক্টর বোরো আবাদে কৃষকের এখন ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার টাকা। এ কারণে অনেক কৃষকই বোরো আবাদে নিরুৎসাহিত হয়েছেন, যা সার্বিক উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে নীতিনির্ধারকরা বলছেন, কৃষি খাতের বড় একটি দুর্বলতা হলো পরিসংখ্যানের গরমিল। খোদ কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাকও সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। নীতিনির্ধারকদের এ অভিযোগের যথার্থতা পাওয়া যায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যানে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৬ সালের মাথাপিছু দৈনিক চালভোগের পরিমাণ নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইফপ্রি)। ওই জরিপে উঠে আসে, ওই বছর দেশে দৈনিক মাথাপিছু চাল ভোগের পরিমাণ ছিল ৪২৬ গ্রাম। যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপের হিসাব বলছে, ওই বছর দেশের জনগণের দৈনিক মাথাপিছু চাল ভোগের পরিমাণ ছিল ৩৬৭ গ্রাম। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি মানেই ঘাটতির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলে সুন্দরভাবে লিখিত পরিকল্পনাও বাস্তবায়নে গলদ দেখা দিতে পারে। জনপ্রতি চালের যে ভোগ দেখানো হচ্ছে, তাতে উৎপাদনের তথ্যের সঙ্গে বড় ধরনের চাল উদ্বৃত্তের তথ্যও থাকতে হবে। কিন্তু বাজার তথ্য সেটি বলছে না। ফলে উৎপাদন বা ভোগের তথ্যে গরমিল রয়েছে। বাজার তথ্যের সঙ্গে আমাদের প্রকাশিত সব তথ্যের এক পর্যায়ে মিল থাকা প্রয়োজন। তা না হলে নীতি প্রণয়নে বিশেষ করে চাল আমদানি কিংবা রফতানির বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া মুশকিল হয়ে পড়বে। আমরা তথ্যের বিষয়ে বিবিএসের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হতে চাই। প্রয়োজনে আরো সঠিকতার জন্য বৈজ্ঞানিক বিকল্প পদ্ধতি প্রয়োগের উদ্যোগ বিবিএসকেই নিতে হবে। কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও সামগ্রিক তথ্যের সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। তার ভাষ্যমতে, বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বছরে কতটুকু উৎপাদিত হচ্ছে, চাহিদা কতটুকু বা উৎপাদন বছরে কতটুকু বাড়ছে—এসবের প্রকৃত ও সঠিক তথ্য দরকার। সেটি যৌক্তিকভাবেই করা হচ্ছে না বলে মনে করছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে আলু ও ধান-চালের দাম বৃদ্ধি এ বিষয়ে তার সন্দেহের উদ্রেক করেছে বলে সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি। তার মতে, দেশে এসব কৃষিপণ্যের আবাদ, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতার (একরপ্রতি) যে পরিসংখ্যান রয়েছে, তা সঠিক নয়। তবে দেশে খাদ্যশস্যের চাহিদা মেটাতে হলে আমদানিনির্ভরতা কোনো টেকসই সমাধান নয়। কারণ অর্থ থাকলেও বৈদেশিক বাজার থেকে খাবার পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। এজন্য কৃষিসংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে বিশেষ নজর বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্য হলো প্রতি বছরই দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে। করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই চালের উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। সুতরাং মহামারীর মধ্যে খাদ্যের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে, যেটি আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে পরিসংখ্যানগত ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও খাদ্য উৎপাদনে কোনো ধরনের সংকট তৈরি হবে না। চলতি অর্থবছরে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে এরই মধ্যে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, যান্ত্রিকীকরণ বৃদ্ধিসহ উন্নত বীজের সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। কৃষকদের আর্থিকভাবে লাভবান করতে মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

  • চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের প্রাক্কলন ২ হাজার ২২৭ ডলার। এদিকে ভারতের হালনাগাদ তথ্য বলছে, কভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশব্যাপী লকডাউনের প্রভাবে দেশটির মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৪৭ ডলার। এ হিসাবে মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে মাথাপিছু আয়ে ভারতকে বাংলাদেশের ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেশটির সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামানিয়ামকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, সংখ্যাগুলো তুলনাযোগ্য নয়। সময় ও এলাকাভেদে কল্যাণমূলক কার্যক্রমের তুলনার জন্য বাজার বিনিময় হার বিবেচনা যথার্থ নয়। এতে করে অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি অথবা উৎপাদনশীলতার চিত্র সঠিকভাবে ফুটে নাও উঠতে পারে। স্থিরমূল্যে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), ক্রয়ক্ষমতার বিনিময় হার তুলনা করা সমীচীন, যা বিবেচনায় নিলে ভারত এগিয়েই থাকবে। মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়া বাংলাদেশের উন্নয়নের একটা প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। তবে তাদেরও মতামত হলো, তুলনা যথার্থ হবে ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনার নিরিখে। মাতৃমৃত্যু হার, শিশুদের টিকা প্রদান কার্যক্রম, প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলেমেয়ের পার্থক্য—এমন বেশকিছু আর্থসামাজিক সূচকে বাংলাদেশ ভারত থেকে ভালো আছে। কিন্তু দুই দেশের অর্থনীতির আকারে ভিন্নতা অনেক বড়। বাংলাদেশের যেখানে সাড়ে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি সেখানে ভারতের ২ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের। ক্রয়ক্ষমতায় পার্থক্যটা আরো বেশি। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, পরিসংখ্যানগুলো বাজারমূল্যের ওপর ভিত্তি করে বলা হয়। ক্রয়ক্ষমতার বিচারে দেখলে হয়তো ভিন্ন চিত্র পাওয়া যাবে। ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি খারাপ, করোনার কারণে দেশটির নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি প্রায় ১০ শতাংশ। কভিড চলে গেলে ভারতের প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাবে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে মাথাপিছু আয়ের এ পার্থক্য নিয়ে খুব বেশি উল্লসিত বা উচ্ছ্বসিত হওয়ার কারণ নেই। এর পেছনে যুক্তি হলো মাথাপিছু আয় গড় চিত্র তুলে ধরছে। আমাদের দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠীর বিষয়টি যদি খতিয়ে দেখি, সাম্প্রতিক সমীক্ষাগুলোয় এটা ১৯-২৩ শতাংশ। কোনো কোনো সমীক্ষায় ৪০ শতাংশের হিসাবও বলা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজের সুযোগের ক্ষেত্রটি এখন অনেক বড়। দারিদ্র্যসীমার নিচে যে বেশি মানুষ যাচ্ছে, অর্থাৎ দারিদ্র্য বিমোচনের যে অবনতি হচ্ছে, সেটা কীভাবে প্রতিহত করতে পারি সেই দিকটায় দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। দুই দেশের তুলনামূলক অবস্থানটি আরো স্পষ্ট হবে ক্রয়ক্ষমতার বিচারে। বণ্টন বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশে বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে। কভিডের কারণে আয়, ভোগ ও সম্পদের বৈষম্য আরো বেড়েছে। সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে বণ্টন বড় সমস্যা। ক্রয়ক্ষমতার নিরিখে ভারত এগিয়ে—এমন তথ্য উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়া অবশ্যই বাংলাদেশের উন্নয়নের একটা প্রতিফলন। কিন্তু ভারতের সঙ্গে তুলনাটা ঠিক না হওয়ার কারণ হলো গত বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক, প্রায় ১০ শতাংশের মতো। কিন্তু এটা আবার পাল্টে যেতে পারে এমন ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে যে পার্থক্যটা এবার আমরা দেখতে পাচ্ছি, আগামীতে তার বিপরীত চিত্র দেখা যাবে। সাধারণত ভারতে পণ্যসামগ্রী তুলনামূলক সস্তা। সুতরাং ক্রয়ক্ষমতার বিচারে ভারত এখনো বাংলাদেশের উপরে। আবার কেবল ক্রয়ক্ষমতা দেখলে হবে না, বণ্টনও দেখতে হবে। বণ্টন বিবেচনায় বাংলাদেশে আয়বৈষম্য ২০১০ থেকেই বাড়ছে—এমন পর্যবেক্ষণ জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কভিডের কারণে আয়, ভোগ, সম্পদবৈষম্য আরো বেড়েছে। তাই আমাদের কেবল মাথাপিছু দেখা উচিত না। বণ্টনে নজর দিতে হবে। ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তার দেয়া তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাক্কলিত হিসাবে মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা বা  ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। গত অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ২৪ ডলার। ফলে এক অর্থবছরের ব্যবধানে মাথাপিছু আয় ১০ শতাংশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ১১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে দেশের জিডিপি ছিল ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের অর্থনীতি মহামারীর কারণে চাপে রয়েছে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে সে চাপ মোকাবেলা করেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সব প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। ফলে অর্থনীতির নানা সূচকে উন্নতির তথ্য উঠে এসেছে। আমরা ঘুরে দাঁড়াব।

  • মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে দেশে দেশে নেয়া হয়েছে কৃচ্ছ্র সাধনের নানা উদ্যোগ। গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সুরক্ষা ও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়গুলো। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় গত বছরই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয় কাতার ও ভিয়েতনাম। পরবর্তী সময়ে অন্য অনেক দেশই সরকারি ব্যয়ের খাত সংকুচিত করার পথে হেঁটেছে। যদিও চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই দেশে গত অর্থবছরের মতো এবারো সরকারি কর্মীর বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মহামারীর অনেক আগে থেকেই এ ব্যয় বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেতন-ভাতায় সরকারের ব্যয় ছিল ২৮ হাজার ৮২০ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছর নাগাদ ৯২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেক্ষেত্রে এক দশকে বেতন-ভাতা বাবদ সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির হার দাঁড়াচ্ছে ২২১ শতাংশের বেশিতে। বৃহস্পতিবার সংসদে অর্থমন্ত্রীর উপস্থাপিত তথ্যে দেখা যায়, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এ ব্যয় মোট পরিচালন বাজেটের ১৯ শতাংশ। আর পরিচালন বাজেটের ৭ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে পেনশন পরিশোধে। সে হিসেবে বেতন-ভাতা ও পেনশন পরিশোধেই পরিচালন বাজেটের ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় হবে। ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪’ শীর্ষক বাজেট প্রকাশনার তথ্যমতে, বেতন-ভাতা খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারের ব্যয় ছিল ৪০ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় বাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত হিসাবে এ খাতে সরকারের ব্যয় ৬৫ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছরে মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যয় ধরা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে সরকারের ব্যয় ৮১ হাজার ৪৩০ কোটি ও পরের অর্থবছরে তা ৯২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ বেড়েই চলছে। সরকার নানাভাবে আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভর হয়ে যাওয়ার কারণে এমনটি ঘটছে। এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অর্থনীতি দুদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে আমলাদের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে গিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে বড় অংকের বেতন-ভাতা নিয়েও বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমলারা চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। চলতি অর্থবছরেও বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমলারা অদক্ষতা, সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনার অনেক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। এত টাকা বেতন-ভাতা নেয়ার পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতিও থেমে নেই। আমলারা দিন দিন আরো শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান হয়ে উঠছেন, যা সুশাসনের অন্তরায়। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বৃহস্পতিবার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরে জিডিপির বিপরীতে ঘাটতির প্রাক্কলিত হার দাঁড়াচ্ছে ৬ দশমিক ২ শতাংশে। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ হার ছিল ৬ দশমিক ১ শতাংশ। এ ঘাটতি পূরণের জন্য আগামী অর্থবছরে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপরই নির্ভর করতে চাইছে বেশি। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার কর আয় বাড়ানোর লক্ষ্য ধরা হয়েছে প্রস্তাবে। সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান বণিক বার্তাকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পারফরম্যান্সের সঙ্গে যুক্ত নয়। এটি অনেকটা উপহার হিসেবে দেয়া হয়। এর সঙ্গে সেবা দেয়ার বিষয়টি যুক্ত না হওয়ায় তাদের মধ্যে সেবা প্রদানের মানসিকতা গড়ে উঠছে না। আগে সরকারি চাকরিকে আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করা হতো। পারফরম্যান্স ভালো করার জন্য প্রতিযোগিতা চলত। এখন প্রতিযোগিতা করতে হয় না, এমনিতেই বছর শেষে বেতন-ভাতা নির্ধারিত নিয়মে বেড়ে যাচ্ছে। এটি সঠিক প্রক্রিয়া নয়। নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোটাই আন্তর্জাতিক রীতি। তারা এখন এসিআর নিয়ে মাথা ঘামান না। কারণ এটি আর এখন কোনো কাজেই ব্যবহার হয় না। তিনি আরো বলেন, সিঙ্গাপুরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা কত বাড়বে, সেটি নির্ধারণ করে দেশটির ন্যাশনাল প্রডাক্টিভিটি কমিশন। বাংলাদেশেও এমন কমিশন করে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ ও বাড়ানো উচিত। আর করোনার মধ্যে সবাই যখন টিকে থাকার যুদ্ধে ব্যস্ত, সারা বিশ্বের সরকারগুলো নিজস্ব পরিচালন ব্যয় কমাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে রক্ষণশীল পথে হাঁটা উচিত ছিল। যেখানে মানুষ খেতে পারছে না, বিপুলসংখ্যক কাজ হারিয়েছে, নতুন করে দরিদ্র হয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ, সেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানো সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত হয়নি। একটি দুর্যোগ হলে সবাই স্বেচ্ছায় একদিনের বেতন দান করেন। আর করোনা তো মহামারী, যেটি প্রায় দেড় বছর ধরে চলছে, সেখানে তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানো যৌক্তিক হয়নি। তাদের বেতন-ভাতা না বাড়িয়ে ক্ষেত্রবিশেষে কমানো যেত। এ অর্থ করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা হিসেবে দেয়া যেত, এমনকি নিচের দিকের কর্মচারীদের জন্যও ব্যয় করা যেত। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাদের বেতনের একটি অংশ করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দেয়া উচিত ছিল। সংকটকালীন এ মুহূর্তে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাড়ানো অনৈতিক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শূন্য পদের সংখ্যা তিন লাখের বেশি। পর্যায়ক্রমে শূন্য পদ পূরণে নিয়মিত বিসিএসের মাধ্যমে জনবল নিয়োগও হচ্ছে। তবে কয়েক দফায় বড় ধরনের পদোন্নতিতে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে স্ফীত হয়েছে জনবল। এতে সাংগঠনিক কাঠামোয় না থাকলেও পদায়ন করতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। সর্বশেষ বেতন কাঠামোয় এমনিতেই সরকারি কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আর উচ্চপদগুলোয় বেশি জনবল থাকায় এ খাতে ব্যয় বেড়ে চলেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুমোদিত পদসংখ্যা ১৭ লাখ ১০ হাজার ৭০৪। অনুমোদিত এসব পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ১৩ লাখ ৮২ হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৯ জন আর দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা রয়েছেন ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৬৫ জন। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী রয়েছেন যথাক্রমে ৮ লাখ ৪০ হাজার ও ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫৭২ জন। গত এক দশকে রাজস্ব খাতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর ও সংস্থা বিভিন্ন ক্যাটাগরির ছয় লাখের বেশি পদ সৃজন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এসব নতুন পদ সৃজন করা হয়। এছাড়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো অর্ধলাখের মতো পদ সৃষ্টির কার্যক্রম। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ধারা জনসেবার মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের এখানে সেবার প্রত্যাশিত মান অনুপস্থিত। এটির গুণগত মান কীভাবে বাড়ানো হবে তা দেখতে হবে। আর বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় যৌক্তিকীকরণের সুযোগ রয়েছে। প্রচলিত ব্যয়-উত্তর মূল্যায়ন ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্যয়-পূর্ব মূল্যায়ন থাকা উচিত। এতে সংযম ও নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হবে।

  • ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফআই) সংগৃহীত তহবিলের প্রায় ২০ শতাংশই আসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১২-১৪ শতাংশ সুদহারে তাদের নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৩৬৬ কোটি...

  • কৃষিপণ্যের সরবরাহ চেইনে জড়িত সব পক্ষের মধ্যে কৃষক শ্রম ও সময় দেয় সবচেয়ে বেশি। যদিও এসব পণ্যের মুনাফায় ভাগ সবচেয়ে কম থাকে সে কৃষকেরই। প্রচলিত উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থায়...

  • খাদ্য অধিদপ্তর গত বছর বোরো মৌসুমে উৎপাদিত চাল সংগ্রহ করেছিল ১৪ লাখ টনের কিছু কম। এর মধ্যে আট লাখ টনের কাছাকাছি এখনো মজুদ অবস্থাতেই রয়ে গিয়েছে। খোদ খাদ্য অধিদপ্তর নিজেই এখন দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা এসব চাল মানহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে। এজন্য গত বছর সংগৃহীত বোরো চাল দ্রুত ছাড়করণের নির্দেশনা দিয়েছে অধিদপ্তর। সারা দেশে চলতি বছরের বোরো মৌসুমের আবাদ কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও খাদ্য অধিদপ্তরের গত বছর সংগৃহীত বোরো চালের মজুদ এখনো অর্ধেকও ফুরায়নি। বোরো মৌসুমের চাল দীর্ঘদিন সংগ্রহে রাখা যায় না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে খাদ্য অধিদপ্তরকেও। অধিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বোরো মৌসুমে চাল সংগৃহীত হয়েছিল প্রায় ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৫৫২ টন। এর মধ্যে মিলারদের কাছ থেকে কেনা হয়েছিল ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৩ টন। সর্বশেষ ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের এলএসডি ও সিএসডিগুলোয় এখনো গত বছর সংগ্রহ করা ৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৬৯ টন বোরো চাল মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে সেদ্ধ চাল ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫৭১ টন ও আতপ চাল ১২ হাজার ২৯৮ টন। বোরো চালের সবচেয়ে বেশি মজুদ রয়েছে রাজশাহীতে—১ লাখ ৮৮ হাজার ১৫৩ টন। এরপর সবচেয়ে বেশি রয়েছে রংপুর বিভাগে। ওই বিভাগের গুদামগুলোয় এখনো ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬৭ টন বোরো চালের মজুদ রয়ে গিয়েছে। খুলনা বিভাগে মজুুদ রয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬ টন। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ৮৭ হাজার ৩৩১ টন, ময়মনসিংহে ৭৭ হাজার ৩৯৬, চট্টগ্রামে ৮৬ হাজার ৩৬২, সিলেটে ২ হাজার ৭৪৯ ও বরিশালে ২০ হাজার ৯৪৫ টন বোরো চালের মজুদ রয়ে গিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা বেশি। এ ধরনের আবহাওয়া কীটপতঙ্গ জন্মানোর জন্য আদর্শ। দেশের গুদামগুলো বর্তমানে বেশ পুরনো হয়ে পড়েছে। এ কারণে এসব গুদামে পোকামাকড়ের উপদ্রবও বেশি। পুরনো এসব খাদ্যগুদামে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিবেশের অভাবও রয়েছে। আবার বোরো চালের সংরক্ষণ সক্ষমতা বেশ কম। ফলে দ্রুত বিতরণ করতে না পারলে এসব বোরো চাল দ্রুত মানহীন হয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থায় জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ের খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের দ্রুত চাল ছাড় করার বিষয়ে চিঠি দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। এ বিষয়ে সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের গুদামের মান খুব বেশি ভালো না। আবহাওয়ার কারণে চালে দ্রুত পোকার আক্রমণ হয়। আবার আমাদের মজুদ ব্যবস্থাপনাও খুব বেশি উন্নত নয়। ফলে চার-ছয় মাসের বেশি মজুদ রাখা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আবার চালের সংগ্রহের সময়ও চালের মান যাচাই-বাছাই করে নেয়া দরকার। সংগ্রহের সময়ে এমনিতেই বিভিন্ন চাপে মানহীন চাল নেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। ফলে সে চাল বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। নিশ্চিত মানহীনতার বিষয় যদি এসে যায় তাহলে বাজারে এ চাল দেয়া যৌক্তিক হবে না। তাই বোরো চালের এ মজুদ খালি করার উদ্যোগ আরো আগেই নেয়া প্রয়োজন ছিল। তাহলে বাজারে চালের দামও আরো নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। আবার দ্রুত গুদাম থেকে চাল ছাড় করতে গিয়ে যাতে গুদামই খালি না হয়ে যায়, সেটিও নজরে রাখতে হবে। অন্যথায় বাজারে নেতিবাচক বার্তা যেতে পারে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের উদ্দেশে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ মামুন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন মজুদের ফলে বোরো চালের গুণগতমান হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য এসব চাল সংরক্ষণে যথাযথ পরিচর্যার জন্য সংশ্লিষ্টদের অধিকতর যত্নবান হওয়া দরকার। এ পরিস্থিতিতে গুদামগুলোয় সংরক্ষিত বোরো/২১ চাল ওয়ারেন্টি অনুযায়ী বিভিন্ন খাতে বিলি-বিতরণ করে নিঃশেষ করা প্রয়োজন। যেসব জেলা বা বিভাগের এলএসডি ও সিএসডিগুলোয় গত বছরের বোরো চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে, সেগুলো থেকে ঘাটতিতে থাকা জেলা বা বিভাগের এলএসডি-সিএসডিগুলোয় পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য অভ্যন্তরীণ সড়ক পরিবহন ঠিকাদার (আইআরটিসি), অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন ঠিকাদার (আইবিসিসি), বিভাগীয় সড়ক পরিবহন ঠিকাদারের (ডিআরটিসি) মাধ্যমে যথাসময়ে সূচি জারি করে গত বছরের বোরো চাল পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে। এ নির্দেশনা অমান্য করে কোনো এলএসডি ও সিএসডি থেকে গত বছরের বোরো চালের পরিবর্তে সদ্য সংগৃহীত আমন চাল যাতে কোনো অবস্থাতেই বিলি-বিতরণ করা না হয়, সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিটরিং করবেন। জানা গেছে, দেশের বেশির ভাগ গুদামেরই অবকাঠামো বেশ পুরনো। আবার দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক ব্যবস্থারও ঘাটতি রয়েছে। ফলে এসব খাদ্যগুদামে কীটের আক্রমণের শঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। আবার সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় আগেও বিভিন্ন সময়ে গুদামজাত খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে এখন খাদ্যশস্য মজুদের জন্য সনাতনী পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হয়েছে। সেজন্য আধুনিক সাইলো তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব সাইলোয় খাদ্যশস্য মজুদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ থাকে। আবার কীটপতঙ্গ প্রতিরোধে স্থাপনা নির্মাণকালে ব্যবহার করা হচ্ছে বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন পদ্ধতি। তাছাড়া বাতাসের আর্দ্রতা ও উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত কারিগরি সক্ষমতার ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বণিক বার্তাকে বলেন, প্রথাগত গুদাম ও চাল সংরক্ষণ ব্যবস্থার কারণে চালের মান ধরে রাখাটা একটু কঠিন। তবে চেষ্টা চলছে আধুনিক মানের গুদাম তৈরি করার। বেশকিছু আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির গুদাম নির্মাণাধীন রয়েছে। আবার আমন মৌসুমের জন্য চাল সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য গত বছরের বোরো মৌসুমের সংগৃহীত চাল দ্রুত খালি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে বোরোর মজুদ খালি হলেও আমন মৌসুমের চাল দিয়ে সেটি দ্রুতই পূরণ করা সম্ভব হবে। ফলে মোট মজুদে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

  • দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে শস্যের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বেশি। উৎপাদন বাড়ানোর প্রত্যাশা থাকে কৃষকেরও। কিন্তু এ প্রত্যাশাও কোনো ধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে পারছে না অধিকাংশ কৃষকের মধ্যে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উৎপাদন হ্রাসের আশঙ্কাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। আবার উৎপাদন বাড়লেও এর ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে কিনা বা বাড়তি ফসল ঘরে তোলা যাবে কিনা, সে বিষয়গুলো নিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকেন অনেক কৃষক। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, আত্মবিশ্বাসের সংকট ও দুশ্চিন্তা নিয়েই শস্য উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন দেশের কৃষক। কভিডকালে এ সংকট তাদের মধ্যে আরো প্রকট হয়ে উঠেছে। ‘বাংলাদেশ: শকস, এগ্রিকালচারাল লাইভলিহুড অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি মনিটরিং রিপোর্ট ২০২২’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এফএওর এ পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে সারা দেশের প্রায় ৩ হাজার ৭১৬ কৃষক ও সংশ্লিষ্ট খানার তথ্যের ভিত্তিতে। গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। শস্য উৎপাদন ও এর মুনাফা নিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান দেশের কৃষকের আত্মবিশ্বাসে বড় ধরনের চিড় ধরিয়েছে। এফএওর তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩৩ শতাংশ কৃষক মনে করছেন, চলতি বছর তাদের শস্য উৎপাদনে কোনো পরিবর্তন আসবে না। নানা মাত্রায় উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কৃষক। ৩২ শতাংশ কৃষকের আশঙ্কা, তাদের উৎপাদন ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। ২ শতাংশ কৃষক আশঙ্কা করছেন, তাদের শস্য উৎপাদন কমতে পারে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ। ফলে সব মিলিয়ে শস্য উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ৩৬ শতাংশ কৃষক। আবার কোনো ধরনের উৎপাদন প্রত্যাশা করেন না এমন কৃষকের সংখ্যা কম নয়। দেশের ৫ শতাংশ কৃষক মনে করেন, তারা এবার উৎপাদনবঞ্চিত হতে পারেন। সব মিলিয়ে দেশের ৭৪ শতাংশ কৃষক মনে করছেন, তাদের উৎপাদন এবার কোনোভাবেই বাড়বে না। উৎপাদন নিয়ে কৃষকের এ মনোভাবের সঙ্গে জাতীয়ভাবে শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির সংগতি খুঁজে পাচ্ছে এফএও। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে শস্য বেড়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে শস্য ও শাকসবজি খাতের প্রবৃদ্ধি দশমিক ৫৮ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গেও শস্য উৎপাদন খাতের বড় ধরনের অসামঞ্জস্য রয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায়ও উঠে এসেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ভিত্তিমূল্যে শস্য ও শাকসবজি খাতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে এর আশপাশেই ঘুরপাক খেয়েছে শস্য ও শাকসবজির উৎপাদন প্রবৃদ্ধি, যা কভিডকালে আরো নিচে নেমে এসেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের এ উৎপাদন প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে দশমিক ৫৮ শতাংশ। কৃষির এ উপখাতে প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে আসার পেছনে প্রধানত কৃষককে যথাসময়ে ও সঠিক মানের বীজ না দিতে পারা, শস্যের ন্যায্যমূল্য দিতে না পারা, দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ভালো হলেও কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতের বদলে আমদানি অবারিত করে রাখা, কৃষি উপকরণ সুবিধার অভাব ইত্যাদি বিষয়কে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কৃষককে ন্যায্যমূল্য না দেয়ার পাশাপাশি বিপণন ও বাণিজ্যনীতিকে কৃষকের পুরোপুরি অনুকূলে আনা হচ্ছে না। তবে কৃষিতে এমন নানাবিধ সংকট সত্ত্বেও অবারিত সম্ভাবনা রয়েছে। ক্ষুদ্রায়তনের জমি, উন্নত বীজ ও প্রযুক্তির অভাব মোকাবেলা করেই কৃষককে এগিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি কৃষকের জ্ঞানের স্বল্পতা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিও মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য গবেষণা ও সম্প্রসারণে জোর দিতে হবে। সেজন্য উন্নয়ন পরিকল্পনায় কৃষককে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এছাড়া শস্য খাতের প্রথাগত প্রতিবন্ধকতা ছাড়াও পোস্ট-হারভেস্ট লস বা ফসলোত্তর ক্ষতি, উন্নত কৃষি উপকরণ, বিশেষ করে যন্ত্রাংশের অভাব, দুর্বল বিপণন ও গুদামজাতের ব্যবস্থা এবং অপচয় কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিলে কৃষকের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বিভিন্ন ফসলের স্বল্পমেয়াদি জাতসহ ঘাতসহিষ্ণু, বিশেষ করে খরা, বন্যা এমনকি লবণাক্ততাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া কৃষিবিষয়ক সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে সমন্বয় করা প্রয়োজন, যাতে কৃষকরা দ্রুত এসব সংস্থার কাছ থেকে সেবা নিতে পারেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এমএ সাত্তার মন্ডল বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের কৃষকের মধ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রবলভাবে তৈরি হয়েছে। সরকারের নানা ধরনের চেষ্টা রয়েছে কৃষকদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। তবে সেখানে কৃষককে কোনোভাবেই ভারাক্রান্ত করে রাখা যাবে না। কৃষকের আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটা আসলে নির্ভর করবে কখন কী পরিস্থিতি এবং কীভাবে কৃষকের সাক্ষাত্কার নেয়া হচ্ছে। তবে হ্যাঁ এটা সত্য, যাদের আয় কেবল শস্য আবাদের ওপর নির্ভরশীল তারাই সবচেয়ে বেশি সংকটে থাকেন। এছাড়া ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা এর পরই ঝুঁকিতে থাকেন। ফলে এ দুই শ্রেণীর কৃষকদের আত্মবিশ্বাস এমনিতেই কম। কৃষক কী চান সেটি বুঝতে হবে নীতিনির্ধারকদের। সে অনুসারে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এফএওর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে শস্য উৎপাদন ৫-২০ শতাংশ বাড়তে পারে এমন প্রত্যাশা করছেন ২৩ শতাংশ কৃষক। ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়ার প্রত্যাশা করছেন ২ শতাংশ কৃষক। ১ শতাংশ কৃষক মনে করছেন, উৎপাদন বাড়তে পারে ৫০ শতাংশের বেশি। এছাড়া চলতি বছরে গত বছরের তুলনায় উৎপাদন বেশি মাত্রায় হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে বেশি। অন্যদিকে উৎপাদন আগের বছরের মতোই থাকার সম্ভাবনা বেশি দেখতে পাচ্ছেন চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের কৃষকরা। পরিবেশগত ঝুঁকি ও অন্যান্য ক্ষতির কারণে একেবারেই উৎপাদন না হওয়ার আশঙ্কা সিলেট ও ঢাকা বিভাগের কৃষকদের বেশি। অন্যদিকে উৎপাদন ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন ময়মনসিংহ বিভাগের কৃষকরা। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, কৃষকের আত্মবিশ্বাসটা ধরে রেখে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোই আমাদের প্রধান কাজ। সেটি সঠিকভাবে করতে পারার কারণেই খাদ্যশস্যসহ সব ধরনের কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ছে। কৃষকের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য আমরা তাদের কাছে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্যের পাশাপাশি নানা ধরনের প্রযুক্তি ও সরকারের সুবিধাগুলো পৌঁছে দিচ্ছি। প্রদর্শনীর মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তির বিষয়ে কৃষকের আস্থা আনছি। সেটি দেখেই তারা নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছেন। কৃষকের জন্য সহায়ক সব ধরনের প্রযুক্তি দ্রুততার সঙ্গে তাদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে। কৃষিকে লাভজনক পর্যায়ে উন্নীত করতে বাণিজ্যিক কৃষিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে রফতানি বাড়ানোর জন্য আমাদের নানা ধরনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উপকরণ সহায়তা, অপ্রচলিত শস্যকে জনপ্রিয় করা এবং কৃষিপণ্যকে রফতানিমুখী করতে নীতিসহায়তা বাড়ানো হচ্ছে।

  • সিলেট বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার-এ চার জেলায় ১৮ শতাংশ কৃষকই ভূমিহীন। এছাড়া এ চার জেলার ৩৬ শতাংশই প্রান্তিক কৃষক। এসব জেলায় মোট জমির মাত্র ৬১ শতাংশ চাষযোগ্য। এ অঞ্চলে মোট পতিত জমি প্রায় দুই লাখ হেক্টর। আবার চাষযোগ্য জমির ৪৯ শতাংশে এক ফসলি আবাদ হয়। গতকাল সকালে সিলেট সার্কিট হাউজে সিলেট অঞ্চলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপির মতবিনিময়কালে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সিলেট অঞ্চল ও বিভাগের কৃষির সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) উপপরিচালক কাজী মজিবুর রহমান। ডিএই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমি পতিত থাকার অন্যতম কারণ হলো অনুপস্থিত কৃষক বা মালিক। প্রবাসী কৃষকরা আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন না। এছাড়া বোরো মৌসুমে সেচের অপর্যাপ্ততা, পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতি, আগাম ও আকস্মিক বন্যা, পাহাড়ি ঢল-অতিবৃষ্টি, টেকসই ফসল রক্ষাবাঁধের অভাব, আগাম-স্বল্পমেয়াদি জাতের অভাবে আবাদ কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মূল প্রবন্ধে কাজী মজিবুর রহমান বলেন, সিলেট অঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় মোট জমির পরিমাণ ১২ লাখ ৫০ হাজার ৫৩২ হেক্টর। চাষযোগ্য বা ফসলি জমি রয়েছে ৭ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৪ হেক্টর। ফলে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ মাত্র ৬১ শতাংশ। যেসব জমি চাষ করা সম্ভব, সেখানে মাত্র একটি ফসলই বেশি আবাদ করা হয়। চাষযোগ্য জমির এক ফসলি জমিই প্রায় ৪৯ শতাংশ। ফসলের নিবিড়তা ১৬০ শতাংশ, যা দেশের অন্য বিভাগের তুলনায় সবচেয়ে কম। সিলেট অঞ্চলে ১৮ শতাংশ কৃষক ভূমিহীন ও ৩৬ শতাংশ প্রান্তিক কৃষক। অন্যদিকে পতিত জমি ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৯৯ হেক্টর। এ বিশাল পতিত জমিতে ফসল উৎপাদনই এখন চ্যালেঞ্জ। গতকালের অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, সিলেট অঞ্চলের ডিএইর অতিরিক্ত পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

To Top