Blog

  • অর্থ সংকট মেটাতে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বড় অংকের ঋণ নেয় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীন চিনিকলগুলো। শুধু আখচাষীদের ঋণ দেয়ার উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন সময়ে...

  • কয়েক বছর আগেও প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানীকৃত গরু দিয়েই মিটত দেশের মাংসের চাহিদা। প্রতি বছর কোরবানির সময় দেশ দুটি থেকে আমদানি হতো ২২-২৫ লাখ গবাদিপশু। কিন্তু...

  • মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ৫ শতাংশ হলে সে মাটিকে সবচেয়ে ভালো বলা হয়। ন্যূনতম ২ শতাংশ থাকলে সেটিকে ধরা হয় মোটামুটি মানের। কিন্তু দেশের মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ এখন গড়ে ২ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। এছাড়া জৈব পদার্থের ঘাটতি রয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে, যা দেশের মোট জমির প্রায় ৭৯ শতাংশ। মাটির উর্বরতা শক্তি ও জৈব পদার্থের উপস্থিতি নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)। ‘ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সমীক্ষায় মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে মাটিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি ও নানা পুষ্টিকণা কমে যাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। পাশাপাশি ভূমিক্ষয়, অম্লমাটির পরিমাণ, উপকূলের লবণাক্ত এলাকা ও খরাপ্রবণ এলাকায় কী পরিমাণ মাটি রয়েছে—তারও পূর্ণাঙ্গ তথ্য উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠানটির সমীক্ষায়। এতে দেখা যায়, দেশে সব ধরনের বিশেষ করে আবাদি, বনভূমি, নদী, লেক, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সুন্দরবন ইত্যাদি এলাকা মিলিয়ে জমির পরিমাণ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ফসফরাস ঘাটতিযুক্ত এলাকার পরিমাণ ৬৬ লাখ হেক্টর, যা মোট জমির প্রায় ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে পটাশিয়ামের ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৫২ লাখ ৭০ হাজার বা ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশে। সালফারের ঘাটতি রয়েছে ৬৫ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর বা ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ এলাকায়। এর বাইরে বোরনের ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৫১ লাখ ১০ হাজার হেক্টরে (মোট জমির ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ)। জৈব পদার্থের ঘাটতি রয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর বা মোট জমির প্রায় ৭৮ দশমিক ৯০ শতাংশে। এসআরডিআইয়ের তথ্যমতে, পদ্মা অববাহিকা ও হাওড়াঞ্চলের কৃষিজমিতে স্বাভাবিকের তুলনায় দস্তার পরিমাণ কম। এর মধ্যে পদ্মা নদীর অববাহিকার মাটিগুলোয় চুন ও ক্ষারের (পিএইচ) মাত্রা অনেক বেশি। অন্যদিকে হাওড়াঞ্চলের জেলাগুলোয় আবাদি এলাকা নিচু এলাকা হওয়ার কারণে কৃষিজমিগুলো অধিকাংশ সময় জলমগ্ন থাকে। এজন্য সেখানে দেখা দেয় দস্তার অভাব। সব মিলিয়ে দেশে এখন দস্তার ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৫৫ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে, যা মোট জমির প্রায় ৩৮ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমাগত ফসল ফলানোর কারণে দেশের মাটিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে জৈব পদার্থ নেই। মাটিকে যথাযথভাবে ব্যবহার না করায় উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। অপরিকল্পিত চাষাবাদ, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন, দূষণ, ব্যাপক হারে বনভূমি ধ্বংস এবং অপরিকল্পিতভাবে সারের ব্যবহারের কারণে মাটির উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ইটভাটার জন্য মাটির উপরিভাগের অংশ তুলে নেয়া ছাড়াও মাটির টেকসই ব্যবস্থাপনার অভাবে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির ফলে মৃত্তিকা এখন হুমকির মুখে রয়েছে। এসব কারণে মাটির স্বাস্থ্যহীনতায় এখন প্রতি বছর ফসল উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও এগ্রেরিয়ান রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আবদুল হামিদ বলেন, জমির উর্বরতা শক্তি সংরক্ষণে অবহেলা খাদ্যনিরাপত্তায় বড় হুমকি হতে পারে। টেকসই উন্নয়নের স্বার্থেই প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ জরুরি। মনে রাখতে হবে শুধু টেকসই কৃষি উৎপাদনই নয়, সমগ্র জীবমণ্ডলের অস্তিত্বও এখন মাটির স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভরশীল। এটা ঠিক, একই জমি বারবার ব্যবহারে মাটি উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে। এ ব্যাপারে পতিত রেখে জমির উর্বরতা শক্তি পুনরুদ্ধারে পরামর্শ দেয়া যেতে পারে ঠিকই। কিন্তু কোনো কৃষক জমি পতিত রাখার ঝুঁকি নিতে চাইবেন না। ক্ষুদ্র কৃষকের খাদ্য ও আর্থিক প্রয়োজনের কারণেই তাকে উপর্যুপরি ফসল ফলাতে হচ্ছে। সমভূমিতে হোক বা পার্বত্যাঞ্চল—একই জমি বারবার চাষ করে কৃষি ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার ঝুঁকি থেকে রক্ষার জন্য কৃষক ও সরকারি পর্যায়ে অনুকূল নীতিকৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। কৃষকরা সংঘবদ্ধ না হলে কার্যকরভাবে নীতিকৌশল বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন দরকার। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের ১ কোটি ১৬ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি রয়েছে। তার মধ্যে খুব খারাপ (ভেরি সিভিয়ার) অবস্থায় রয়েছে দেশের ১১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমি। খারাপ (সিভিয়ার) অবস্থায় আছে ২৮ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর, মাঝারি (মডারেট) ধরনের খারাপ অবস্থায় আছে ৩৫ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর ও হালকা (লাইট) খারাপ অবস্থায় আছে ৩৩ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমি। অন্যদিকে দেশে অম্লযুক্ত মৃত্তিকার উপস্থিতি রয়েছে প্রায় ৮৩ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর বা মোট জমির প্রায় ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশে। পাহাড়ে ভূমিক্ষয় প্রাপ্ত এলাকা রয়েছে ১৭ লাখ হেক্টর। উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকার পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ ২০ হাজার হেক্টর। খরাপ্রবণ এলাকার পরিমাণ প্রায় ১৪ দশমিক ৩০ লাখ হেক্টর। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বণিক বার্তাকে বলেন, অধিকাংশ কৃষকই প্রধান প্রধান ফসলের জন্য নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম সার ব্যবহার করেন। প্রশিক্ষণ ও জানাশোনার অভাবে সুষম সার ব্যবহার করেন খুব কমসংখ্যক কৃষক। অপরিমিত ও মাত্রাতিরিক্ত সার ব্যবহারে ফলনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং জমিতে ব্যবহূত সারের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে একসময়ে জমিগুলো অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়বে এবং কৃষিতে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে। এজন্য রাসায়নিক ও জৈব সারের মিশ্র প্রয়োগের মাধ্যমে জমি থেকে ফসলের আহরিত খনিজ ও জৈব পদার্থের মাত্রা যদি ঠিকঠাক ধরে রাখা যায়, তাহলে মাটির উর্বরতা শক্তি ধরে রাখা সম্ভব। ঘাটতি কমানোর পাশাপাশি উর্বরতা শক্তি ধরে রাখতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি জমি চাষে রোটেশন পদ্ধতি অনুসরণ ও কৃষি উপকরণ ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনধারণের জন্য উদ্ভিদ মাটি থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য হিসেবে খনিজ পদার্থ ও পানি সংগ্রহ করে। এজন্য ১৬টি পুষ্টি মৌল অপরিহার্য। এর কোনো একটির অভাব হলে ফসল তথা উদ্ভিদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে ও ফসলহানি ঘটে। ফসলের খাদ্য চাহিদা নিরূপণ করে জমির উর্বরতা বিচারে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত খাদ্য মৌল সার হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। তবে উদ্ভিদের সব খাদ্য মৌল সরবরাহের জন্য সার ব্যবহার হয় না। এ কারণে ক্রমাগত ফসল ফলানোর কারণে মাটিতে অনেক খাদ্য মৌলের ঘাটতি সৃষ্টি হয়। এজন্য লবণাক্ত ও পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন, মাটির উর্বরতা মানের ভিত্তিতে সুষম সার প্রয়োগের ওপর অ্যাডাপ্টিভ ট্রায়াল চালানো, উপজেলা ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা (উপজেলা নির্দেশিকা) নবায়ন, ইউনিয়নভিত্তিক ভূমি, মাটি ও সার সুপারিশ সহায়িকা প্রণয়ন এবং কৃষকদের চাহিদামাফিক ফসল বিন্যাসের জন্য উপজেলাভিত্তিক সার ব্যবহার নির্দেশিকা প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে এসআরডিআইয়ের মহাপরিচালক বিধান কুমার ভান্ডার বলেন, ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার ও মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সুষম সার ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়া হচ্ছে। ভূমি জরিপের মাধ্যমে বিভিন্ন কলাকৌশল উদ্ভাবন করে দেশের অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে। মাটি পরীক্ষা ছাড়াও সারের গুণগত মান নিশ্চিত করতে বিভাগীয় গবেষণাগারের মাধ্যমে সার পরীক্ষা করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষাগারের মাধ্যমে মাটি পরীক্ষা করে তাত্ক্ষণিক বিভিন্ন ফসলের জন্য সুষম সার সুপারিশ করা হচ্ছে। উপজেলা ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা ব্যবহার করে বছরে কৃষককে সুষম সার সুপারিশ প্রদান করা হয়। এদিকে গতকাল ‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস’ পালন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনার, শোকেসিং ও সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি দেয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে গিয়ে শস্যের নিবিড়তা বাড়ছে, কিন্তু মাটির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। টেকসই মাটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির উৎপাদনশীলতা, মাটিতে গাছের অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানের মান বজায় রাখতে হবে। কারণ মানুষের জীবন-জীবিকা ও খাদ্যনিরাপত্তা নির্ভর করে টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার ওপর। সেজন্য মাটিকে সজীব রাখতে হবে, মাটির গুণাগুণ বজায় রাখতে হবে।

  • সেচকাজে যান্ত্রিকীকরণের শুরুটা দেশ ভাগের পর পরই। পাম্পের সাহায্যে হাওড়-বাঁওড়, খাল-বিল কিংবা নদীর পানি ফসলি জমিতে ব্যবহার তখন থেকেই শুরু করেন এ অঞ্চলের কৃষক। স্বাধীনতার পর নলকূপ আর গভীর নলকূপে আরো গতি পায় বাংলাদেশের সেচ কার্যক্রম। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছরে পা রাখতে চললেও দেশের বিপুলসংখ্যক সেচযোগ্য জমি রয়ে গেছে সেচ সুবিধার বাইরে। বছর বছর মোটা অংকের বিনিয়োগ করেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সেচের পরিধি বাড়াতে পারছে না সরকার। এতে ছেদ পড়ছে উৎপাদনশীলতায়। নিম্নগামী প্রবৃদ্ধি হচ্ছে শস্য খাতে। বাংলাদেশে আবাদের জন্য সেচযোগ্য জমি আছে ৭৭ দশমিক ৬ লাখ হেক্টর। এর মধ্যে সর্বশেষ অর্থবছর পর্যন্ত সেচের আওতায় এসেছে ৫৬ লাখ হেক্টর। ২৭ শতাংশ বা প্রায় ২১ লাখ হেক্টর জমি এখনো রয়ে গেছে সেচ সুবিধার বাইরে। সেচের পানির দক্ষ ব্যবহারও করতে পারছেন না বাংলাদেশের কৃষক। সেচকাজে ব্যবহার হওয়া ৬০ শতাংশ পানিই অপচয় হচ্ছে। ফলে বিপুল পরিমাণ জমি সেচ সুবিধার বাইরে থাকার পাশাপাশি সেচকাজে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। প্রতি বছর খাতটিতে মোটা অংকের অর্থ বিনিয়োগ করছে সরকার। তবে এর খুব একটা প্রভাব পড়ছে না মাঠ পর্যায়ে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর ৩১৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছর ২৮৩ কোটি ৩৬ লাখ, ২০১৭-১৮ অর্থবছর ২১৫ কোটি ৫৪ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছর ৪৩৯ কোটি ৩০ লাখ ও ২০১৯-২০ অর্থবছর ৪৮৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা—সব মিলিয়ে গত পাঁচ বছরে সেচ সম্প্রসারণে সরকারি বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার বেশি। এর বিপরীতে সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে মোটে এক লাখ হেক্টর জমি। ৫৪ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৫ লাখ ৯৮ হাজার হেক্টর। এসব জমি আবাদে ব্যবহূত হয়েছে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪১৩টি সেচযন্ত্র। শ্যালো টিউবওয়েল ছিল ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩২টি, শ্যালোর বাইরে সেচে ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৩৭ হাজার ৬৩৪টি গভীর নলকূপ ও ১ লাখ ৮৭ হাজার ১৮৮টি লো লিফট পাম্প। বিনিয়োগের বিপরীতে বাড়ছে না সেচ সুবিধায় আসা জমি। এর প্রভাব পড়ছে শস্য উৎপাদনে। কয়েক বছর ধরেই শস্য খাতে দেখা দিয়েছে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত প্রবণ এলাকা, চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমের চরাঞ্চলে সেচ সুবিধা এখনো পর্যাপ্ত সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়নি। বেশকিছু বিভাগে ব্যাপক হারে আবাদি জমি সেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। কিছু এলাকায় পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপ ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশের সেচ কার্যক্রমে এ গতিহীন ভাব বজায় থাকলে সামনের দিনে কৃষির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ বণিক বার্তাকে বলেন, কী কারণে এসব অঞ্চলে সেচ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না, সেটি নিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে। আবার সেচ সম্প্রসারণ করলে পরিবেশগত ও আর্থিকভাবে কতটুকু লাভবান হওয়া সম্ভব, সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। তবে সেচযোগ্য জমিতে যদি সেচ সুবিধা পৌঁছানো সম্ভব না হয়, তাহলে সেটি কৃষির জন্য বড় ক্ষতি হবে। এর মাধ্যমে আমরা শস্য বা কৃষি খাতের উৎপাদন যেমন হারাচ্ছি, তেমনি কৃষকের আর্থিক সুবিধা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। হয়তো এর মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের একটি বড় অংশকে আর্থিক সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে। তাই সেচ সুবিধা সম্প্রসারণে একটি বড় ধরনের ধাক্কা প্রয়োজন। প্রয়োজনে আগের পদ্ধতি থেকে বের হয়ে এসে ভর্তুকি সুবিধা আরো বাড়াতে হবে। দেশের সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণে এককভাবে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। ১৯৬৭-৬৮ সালে বিএডিসি গভীর নলকূপ স্থাপন করে সেচকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার শুরু করে এবং ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে অগভীর নলকূপ স্থাপন শুরু করে। ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার নির্মাণের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি ও ভূ-উপরিভাগের পানির সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানো প্রকল্প হাতে নিয়েছে। রাবার ড্যাম (চলমান), হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম (চলমান), সৌর শক্তিচালিত সেচপাম্প স্থাপন, সেচযন্ত্রে স্মার্ট বেজড প্রিপেইড মিটার স্থাপন ও ডাগওয়েলসহ টেকসই সেচ অবকাঠামো নির্মাণ করছে। আধুনিক ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ড্রিপ ইরিগেশন ও স্প্রিঙ্কলার ইরিগেশনের মতো লাগসই প্রযুক্তি ও ভ্রাম্যমাণ সেচপাম্প চালু করতে কার্যক্রম চালু করেছে। বিএডিসির সেচ কার্যক্রমের সার্বিক অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার পাশাপাশি উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দ বিষয়ে কৃষি সচিব মো. মেসবাহুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিএডিসির সঙ্গে আলাপের পরামর্শ দেন তিনি। পরে বিএডিসির ক্ষুদ্রসেচ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. জিয়াউল হক বণিক বার্তাকে বলেন, কয়েক বছর ধরে সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণের পাশাপাশি সেচ ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়া হয়েছে। ফলে সেচের আওতা এখন আর জ্যামিতিক হারে নয়, গাণিতিক হারে বাড়ছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর ভারসাম্য রক্ষা করেই একটি টেকসই সেচ ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়া হচ্ছে। আবার কয়েকটি বিশেষ অঞ্চলে সেচের কার্যক্রম কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। এসব অঞ্চলে ঢালাওভাবে কার্যক্রম নিয়ে সেচের আওতা বাড়ানো সম্ভব হবে না। অঞ্চলগুলোর প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়েই সেচের কার্যক্রম সম্প্রসারণে আলাদা কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। চরাঞ্চলের ভাসমান সেচযন্ত্র দিয়ে নতুনভাবে জমিকে সেচের আওতায় আনা হচ্ছে। ডাগওয়েল বা ফিতা পাইপের মাধ্যমে দূরের জমিগুলোতে পানি নেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেচের পানির অপচয় কমানো ও ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা, সংরক্ষণ ও নিষ্কাশনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বেশি পরিমাণে খাল-নালা খনন ও পুনঃখনন করা হচ্ছে। ভূ-উপরিভাগের পানি ব্যবহার করে সেচকৃত জমির পরিমাণ ৬০ লাখ হেক্টরে উন্নীত করতে মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

  • চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে শুল্কহার কমিয়ে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি উন্মুক্ত করেছে সরকার। তবে আমদানি হবে নিয়ন্ত্রিতভাবে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গতকাল এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। ২৪ ডিসেম্ব্বর বেসরকারিভাবে চালের আমদানি শুল্ক কমাতে প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিয়েছেন। সে আলোকে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি শুল্ক আগের ৬২ দশমিক ৫০ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বৈধ আমদানিকারকরা বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারির মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবেন। পরবর্তী সময়ে একটা নীতিমালার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে খাদ্য মন্ত্রণালয় তাদের চাল আমদানির অনুমতি দেবে। নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। সরকার নির্ধারিত দামে মিলাররা চাল দেবে না বলে যে ঘোষণা দিয়েছে, সেটিকে মন্ত্রণালয় কীভাবে দেখেছেন—সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার কারো কাছে মাথা নত করে না। তারা এ ধরনের হুমকি নিয়ে থাকুক। আমরা পীড়াপীড়ি করিনি। তবে চুক্তি করে চাল না দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। মজুদ সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনে কৃষকের কাছ থেকে ১৫-২০ লাখ টন ধান সরাসরি ক্রয় করা হবে। এজন্য ধান বিক্রিও উন্মুক্ত করা হয়েছে। যেকোনো কৃষক ১ হাজার ৪০ টাকা দরে ধান বিক্রি করতে পারবেন। যদিও বাজারে একটু বেশি দাম পাচ্ছেন বিধায় কৃষকরা এ মুহূর্তে আগ্রহী হচ্ছেন না। আর সরকারিভাবে এরই মধ্যে চার লাখ টন চাল আমদানির টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ভারতের সঙ্গে জিটুজি ভিত্তিতে দেড় লাখ টন চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে চাল আমদানির মাধ্যমে মজুদ বাড়ানো সম্ভব হবে। চাল আমদানির অনুমতির ক্ষেত্রে উৎপাদন পরিস্থিতি কতটুকু বিবেচনায় নেয়া হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের চালের বাজারে দাম স্থিতিশীল থাকলেও তা এখনো বেশ উঁচুতে রয়েছে। বাজারে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আরো বাড়ানো হবে। সরকারিভাবে চাল আমদানি করে মজুদ বাড়ানোর পাশাপাশি বাজারে সরবরাহও বাড়ানো হবে। এছাড়া দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমনের উৎপাদন কম হতে পারে। তবে সেটি কোনোভাবেই ঘাটতিতে নেই। আবাদি জমির পরিমাণ ঠিক রয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলন কমার কারণে উৎপাদন কিছুটা কমতে পারে। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে এমন কোনো মানদণ্ড নেই যেটির মাধ্যমে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই সন্তুষ্ট থাকবেন। চালের দাম বাড়লে কিংবা ধানের দাম কমে গেলে হাহাকার শুনতে হয়। কিন্তু এ দুটি পণ্যের দাম কতটা হলে স্বাভাবিক বা ন্যায্য এমন কোনো মানদণ্ড নেই। সে বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে। এজন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা চাল ও ধানের সহনীয় দাম নিয়ে নীতিমালা তৈরি করবে। খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক আজিজ মোল্লাসহ খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, চলতি বছরের ১৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিলেন। সে ধারাবাহিকতায় সরকারিভাবে চাল আমদানি শুরু হয়। কিন্তু কৃষকের ধানের দাম নিশ্চিত করতে বেসরকারিভাবে একটু দেরিতে অনুমোদন দেয়া হলো। তবে সেটিও ঢালাওভাবে নয়। চাল আমদানিকারকদের আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে কাকে কতটুকু চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া যায় সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শুধু বৈধ ও অভিজ্ঞ আমদানিকারকদের চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো ধরনের চাল আমদানি করতে পারবে না।

  • বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপেই মিটছে সেচ চাহিদার বড় অংশ। এ দুইয়ের মধ্যে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রে খরচটা তুলনামূলক বেশি। এক্ষেত্রে সেচযন্ত্রে ডিজেল ও ইঞ্জিন অয়েলের পাশাপাশি সেচ মৌসুম শুরুতে ওভারহোলিং ও মেরামতের প্রয়োজন পড়ে, যা কৃষকের খরচ বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) এক সমীক্ষার তথ্য বলছে, ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রে প্রতি বছর বাড়তি খরচ হয় প্রায় ৫ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। বিএডিসির তথ্যমতে, দেশে জমিতে সেচ প্রদানের ক্ষেত্রে এখনো অগভীর নলকূপের প্রাধান্য রয়েছে। সেচকাজে গভীর নলকূপের অবদান ১৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে শক্তিচালিত পাম্পের অবদান ২২ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও অগভীর নলকূপের ৫৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০১৮-১৯ সেচ মৌসুমের সেচযন্ত্র জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই মৌসুমে মোট সেচকৃত জমির পরিমাণ ছিল ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর , যা মোট সেচযোগ্য জমির ৭৩ শতাংশ। মোট সেচকৃত এলাকার ৪৪ শতাংশ জমিতে সেচ প্রদানে ব্যবহার করা হয়েছে বিদ্যুত্চালিত যন্ত্র। অন্যদিকে ৫৬ শতাংশ জমিতে সেচ দিতে ব্যবহার করা হয় ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র। খরচ কম হওয়ার পরও দেশে বিদ্যুত্চালিত সেচযন্ত্রের সম্প্রসারণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা হলো বিদ্যুৎ সংযোগ। সাধারণত ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র যেকোনো দোকান থেকে কিনে যেকোনো স্থানে স্থাপন করা সম্ভব। কিন্তু বিদ্যুত্চালিত সেচযন্ত্র স্থাপন করতে গেলে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতির পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংযোগও থাকতে হয়। এ অনুমতি ও সংযোগ পেতে যে পরিমাণ ভোগান্তি ও দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়, তাতে এক পর্যায়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন কৃষক। এছাড়া বিদ্যুৎ ও সৌরশক্তিচালিত সেচযন্ত্রের ব্যবহার ও সুবিধার বিষয়ে জ্ঞানের অভাবও রয়েছে তাদের মধ্যে। পাহাড়, চরাঞ্চল ও দুর্গম এলাকায় জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সুবিধা না থাকা এবং সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ ও পূর্ণমাত্রার ভোল্টেজের অনিশ্চয়তা থাকায় অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুত্চালিত সেচযন্ত্র পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এছাড়া দক্ষ পানি ব্যবহারকারী গ্রুপ গড়ে না ওঠা, বিদ্যুৎ ও সৌরশক্তিচালিত সেচ পাম্পের প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি হওয়া এবং সর্বোপরি কৃষকের মূলধন ও সরকারি সহায়তার অভাবও রয়েছে। ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের বাড়তি খরচের নানান তথ্য উঠে এসেছে বিএডিসির সমীক্ষায়। সমীক্ষাটি পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ক্ষুদ্র সেচ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. জিয়াউল হক। তিনি দেখিয়েছেন, ডিজেলচালিত ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫৪টি অগভীর নলকূপে ডিজেল ও ইঞ্জিন অয়েল বাবদ বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হয় প্রায় ২ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এসব অগভীর নলকূপে সেচ মৌসুমে ওভারহোলিং, মেরামত ও পরিচালন খরচ পড়ে ২ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। ডিজেলচালিত ২ লাখ ৯ হাজার ৬৪৪টি অগভীর নলকূপকে বিদ্যুৎ বা সৌরশক্তিচালিত সেচ পাম্পে রূপান্তরকরণে সেচযন্ত্র পরিচালনা বাবদ বাড়তি খরচ হবে ১১৬ কোটি টাকা। ফলে মোট সাশ্রয় হবে ৫ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০১৯ অনুযায়ী দুটি নলকূপের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব, কমান্ড এরিয়া সুনির্দিষ্টকরণসহ সেচযন্ত্রের লাইসেন্স গ্রহণ এবং অগভীর নলকূপের কমান্ড এরিয়া ৬ হেক্টর নির্ধারিত রয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী সারা দেশে মোট ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৭৮টি অগভীর নলকূপ প্রয়োজন। বর্তমানে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩৪টি বিদ্যুত্চালিত অগভীর নলকূপ রয়েছে। সে হিসেবে আরো ২ লাখ ৯ হাজার ৬৪৪টি বিদ্যুত্চালিত সেচযন্ত্র দরকার। অন্যদিকে বর্তমানে অপসারণযোগ্য সেচযন্ত্রের সংখ্যা ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫৪। এর মধ্যে ২ লাখ ৯ হাজার ৬৪৪টি ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপকে দ্রুত বিদ্যুৎ অথবা সৌরচালিত সেচযন্ত্রে রূপান্তর করতে হবে। এটি করতে হলে বাড়তি তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হতে পারে। এ বিষয়ে বিএডিসির ক্ষুদ্র সেচ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট গবেষক মো. জিয়াউল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রে খরচ বেশি হওয়ায় কৃষক ও মালিক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র অপসারণ করে তা দ্রুত পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ বা সৌরশক্তিচালিত সেচযন্ত্রে রূপান্তর প্রয়োজন। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটি করতে হলে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র অপসারণের জন্য ‘কৃষিকাজে পানি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা’ অনুযায়ী সব সেচযন্ত্রে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনকারী সেচযন্ত্র অপসারণ করা, লাইসেন্সবিহীন সেচযন্ত্র ও যেসব সেচযন্ত্রের সেচ খরচ বেশি তা দ্রুত অপসারণ করে কৃষিকে স্মার্ট করা সম্ভব হবে।

  • প্রতিদিন রাতে ঠিক ৯টা বাজলেই অন্যরকম এক চাঞ্চল্য তৈরি হয় পাঞ্জাবের ভাতিন্ডা রেলস্টেশনে। রোজকার মতোই ১২ কোচের যাত্রীবাহী একটি ট্রেন এসে দাঁড়ায় রেলস্টেশনের ২ নম্বর প্লাটফর্মে। যাত্রীরা ছাড়াও ট্রেনটিকে এক নজর দেখতে আসা উত্সুক মানুষের সংখ্যাও কম থাকে না। ট্রেনটি প্লাটফর্ম ত্যাগ করে ঠিক ৯টা ২৫ মিনিটে। এরপর ৩২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভোর ৬টা নাগাদ পৌঁছায় রাজস্থানের বিকানিরে। ট্রেনটিকে নিয়ে সবার আগ্রহের কারণ এর নামেই স্পষ্ট—‘ক্যান্সার ট্রেন’। ট্রেনটির মোট যাত্রীর প্রায় ৬০ শতাংশ থাকে ক্যান্সারের রোগী। এর কারণ হলো, ভাতিন্ডা থেকে বিকানির পর্যন্ত ট্রেনটির যাত্রীভাড়া ২১০ রুপি হলেও ক্যান্সার রোগীদের জন্য ফ্রি। রোগীর সঙ্গে থাকা অ্যাটেনডেন্টদের জন্য ভাড়ায় ছাড় থাকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। এ ট্রেনের যাত্রীদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য থাকে বিকানিরের আচার্য তুলসি রিজিওনাল ক্যান্সার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার। ভাতিন্ডায় যাত্রা করে পথে ২৬টি স্টপেজ থেকে পাঞ্জাবের বিভিন্ন এলাকার ক্যান্সার আক্রান্ত যাত্রীদের তুলে নেয় ট্রেনটি। এ রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই থাকেন আবার কৃষক। ট্রেনটির যাত্রী সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশ বেড়েছে। এর কারণ হলো ‘ভারতের রুটি ঝুড়ি’ খ্যাত পাঞ্জাবের কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে। রাজ্যটির কৃষকদের মধ্যে প্রাণঘাতী ব্যাধিটির প্রকোপ বেশি হওয়ার পেছনে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার, দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি ও কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্যকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা। পাঞ্জাবের কৃষিজীবীদের জনস্বাস্থ্যে বিপর্যয়ের এ চিত্রের প্রতিফলন এখন বাংলাদেশী কৃষকদের মধ্যেও স্পষ্ট। এখানেও কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে দেশের জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঞ্জাবের কৃষকদের মতো বাংলাদেশী কৃষকদের মধ্যেও কীটনাশক ও কৃষি রাসায়নিকের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারের প্রবণতা অনেক বেশি। দেশের একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি ক্যান্সার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিআরএইচ)। হাসপাতালটির ক্যান্সার এপিডেমিওলজি বিভাগের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট: ২০১৫-১৭’ প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর হাসপাতালটিতে যত রোগী ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশই কৃষক। এছাড়াও শনাক্তকৃতদের মধ্যে কৃষকের হারও এখন উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে হাসপাতালটিতে ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয় ১০ হাজার ৩১০ জন। তাদের মধ্যে ৩০ দশমিক ২ শতাংশই কৃষক। ২০১৬ সালে শনাক্তকৃত ১১ হাজার ১৫ জনের মধ্যে কৃষক ছিলেন ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৭ সালে ১৪ হাজার ৪৪ জন ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়, তাদের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ছিলেন কৃষক। দেশের কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বাড়ার পেছনে কীটনাশকসহ কৃষি রাসায়নিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারকেই দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) ও গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (জিএপি) নীতিমালার পরামর্শ হলো, রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহারের সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার ও শরীরের অন্যান্য অংশে কীটনাশকের অনুপ্রবেশ রোধের প্রতিরোধক ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়া বাতাসের উল্টো দিকে তা প্রয়োগ করা যাবে না। কিন্তু সিংহভাগ কৃষকই এসব পরামর্শ মানছেন না। কোনো ধরনের সুরক্ষা উপকরণ বা ব্যবস্থা ছাড়াই কীটনাশক প্রয়োগ করছেন ৮৫ শতাংশের বেশি কৃষক। ফলে এসব রাসায়নিক ও কীটনাশকের মারাত্মক এবং ক্ষতিকারক সূক্ষ্ম উপাদানগুলো দেহে প্রবেশ করে মারণব্যাধির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একই সঙ্গে তা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ও অনিরাপদভাবে কীটনাশক প্রয়োগের কারণে ক্যান্সার ছাড়াও স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কৃষকরা। দীর্ঘমেয়াদে তা হয়ে উঠছে কিডনি, হূদযন্ত্র ও ফুসফুসের ক্ষতির কারণ। ফলে ফসলের রোগবালাই দমনের পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অবহেলা করছেন কৃষকরা। এভাবে কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকের যেমন বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ওপরও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গত বছরের আগস্টে ফুসফুসের ক্যান্সার শনাক্ত হয় নোয়াখালীর বাসিন্দা আব্দুর রহমানের (৫৫)। এরপর রাজধানীতে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন তিনি। চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী থেকে ঢাকায় এসে কেমোথেরাপি নিতে হয় তাকে। মারাত্মক অসুস্থতা ও দুর্বলতার কারণে তিনি গত ডিসেম্বরে বাথরুমে পড়ে মাথায় আঘাত পান। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন সপ্তাহ কোমায় থাকার পর ১ জানুয়ারি তিনি মারা যান। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী মনে করছেন, যথাযথভাবে নিরাপত্তা উপকরণ ব্যবহার না করা এবং অতিমাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহারের কারণেই কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের হার বাড়ছে। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এখন কৃষির সঙ্গে সবকিছুই হয়ে পড়েছে রাসায়নিকনির্ভর। বিশেষ করে কীটনাশক ব্যবহারের সময় কৃষি পেশায় জড়িতরা কোনো ধরনের সুরক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা করছেন না। আমাদের দেশে কৃষকরা মাটি উর্বর করা, ফল পাকানো ও অধিক ফলনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। এভাবে অনিয়ন্ত্রিত ও অরক্ষিতভাবে কীটনাশক প্রয়োগের কারণে তাদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের হার বাড়ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফসলের রোগবালাই ও কীটপতঙ্গ দমনের জন্য কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক, পতঙ্গনাশক ও রোডেন্টিসাইড (ইঁদুর মারা বিষ) ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতি বছর এসব কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার হচ্ছে গড়ে ৩৫-৩৭ হাজার টন। এছাড়া বার্ষিক রাসায়নিক সারের ব্যবহার হচ্ছে ৫০ লাখ টনেরও বেশি। কৃষকের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি এসব উপকরণের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে সার্বিক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশেও দেখা যাচ্ছে বিরূপ প্রভাব। পাঞ্জাবের কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রকোপ বৃদ্ধির উৎস নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিক ধ্রুবি মহাজনের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেও উঠে এসেছিল একই কথা। ওই প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, ষাট-সত্তরের দশকে ওই অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে সনাতনী কৃষি ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে কীটনাশক, সার ও উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার শুরু হয়। তবে এর নিয়ন্ত্রিত ও পরিমিত ব্যবহার নিয়ে কৃষকদের সচেতন করে তোলার বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি কখনই। উপরন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিল না। এর ধারাবাহিকতায় ভারত ক্ষুধা ও খাদ্যের জন্য পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পেলেও তার মূল্য চুকাতে হয়েছে স্থানীয় কৃষকদের। জারনাইল সিং নামে স্থানীয় এক কৃষকের বরাত দিয়ে ধ্রুবি মহাজন জানাচ্ছেন, এলাকা থেকে ময়ূর উধাও হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে কৃষকরা প্রথম টের পান, কোথাও কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে। জারনাইল সিং যখন বিষয়টি পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারেন, ততদিনে তার পরিবারের সাত সদস্য ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিজ গ্রাম ও আশপাশের অন্য অনেক গ্রামের বাসিন্দাদের ক্যান্সারের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব জারনাইল সিংকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। তিনি লক্ষ্য করলেন, তার এলাকার কৃষকদের মধ্যে ফসলে বারবার কীটনাশক স্প্রে করার প্রবণতা রয়েছে। এছাড়া তারা স্প্রে করার সময় কোনো ধরনের সুরক্ষা উপকরণ বা পোশাক ব্যবহার করেন না। বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে যোগাযোগ শুরু করেন জারনাইল সিং। এক পর্যায়ে তার আবেদনে সাড়া দিয়ে পাঞ্জাবের পোস্টগ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের গবেষকরা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। তারা দেখতে পান, জারনাইল সিংয়ের ধারণাই সঠিক। যেসব এলাকায় কৃষকদের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে, সেসব এলাকায় ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাবও অনেক বেশি। পাঞ্জাবের মতো বাংলাদেশেও কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে কীটনাশক ও কৃষি রাসায়নিকের অনিরাপদ ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারকেই চিহ্নিত করেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোস্যাল মেডিসিনের (নিপসম) সাবেক অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক খান। এ বিষয়ে তিনি বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পরিসরেই বলা হয়, কৃষিতে জড়িতদের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পেছনে অন্যতম প্রধান দায়ী উপকরণ হলো কীটনাশক ও কৃষি রাসায়নিক। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও বলা যায়, পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতির কারণেই কৃষকদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরো অনেক বেশি। এছাড়া কীটনাশক কোম্পানিগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে কীটনাশক বিপণন ও প্ররোচনার মাধ্যমে কৃষককে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের। তাদের ভাষ্যমতে, এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত বিপণন ও প্ররোচনার ফাঁদে পড়ে কৃষকরা যথেচ্ছভাবে কীটনাশক ও কৃষি রাসায়নিক ব্যবহার করছেন। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করেই ফসলের ক্ষেতে এসব রাসায়নিক প্রয়োগ করছেন তারা। এজন্য কৃষকের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কীটনাশক ও কৃষি রাসায়নিকের দায়িত্বশীল ব্যবহার নিয়ে নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি কৃষকের সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ কৃৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, কৃষকদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বাড়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে একটি প্রধান কারণ হতে পারে কৃষিচর্চার ধরন। অর্থাৎ যখন একজন কৃষক কীটনাশক বা রাসায়নিক স্প্রে করছেন, তখন তিনি নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন না। কৃষকরা কাজের অধিকাংশ সময় ডাস্টের সঙ্গেই থাকেন। ফসল ও জমির ডাস্ট তাদের ফুসফুসের জন্য অনেক ক্ষতিকর এবং ফুসফুসের ক্যান্সারেরও কারণ। মোটা দাগে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার তেমন কোনো ব্যবস্থা কৃষকরা ব্যবহার করেন না। পর্যাপ্ত ও সময়মতো সুরক্ষা ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে তাদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি। আমাদের দেশে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ঘাটতি আছে। এগুলো নিশ্চিত করতে পারলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। কৃষকরা নিজেদের অজান্তে যাতে আক্রান্ত না হয় তা নিশ্চিত করতেই এ বিষয়গুলো জরুরি। কৃষকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে অনেক কাজের সুযোগ রয়েছে। তবে শুধু কৃষক নয়, দেশে সার্বিকভাবেই ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন এনআইসিআরএইচের ক্যান্সার এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার। তার অভিমত, দেশে ক্যান্সার রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে বড় পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আরো গভীরে গিয়ে গবেষণা চালালে কোন পেশায় কী কারণে ক্যান্সার রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া যাবে।

  • ধারে কৃষি উপকরণ ক্রয় ও গ্রামের মজুদাগার ব্যবস্থা উঠে যাওয়ার কারণে  দ্রুত ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা। সংগ্রহের এক মাসের মধ্যে ৫২ শতাংশ ধান বিক্রি করে দেন তারা। ‘বাংলাদেশে চালের প্রাপ্যতা ও দামের অস্থিরতা: একটি আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা প্রতিবেদন-২০২০’ শীর্ষক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ব্রি) এ গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মৌসুমের শুরুতেই এক মাসের মধ্যে উদ্বৃত্ত ধানের ৫২ শতাংশ বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষক। আর এক থেকে দুই মাসের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে ২৫ শতাংশ, দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ১৮ শতাংশ এবং চার মাস বা তার বেশি সময়ের মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে ৫ শতাংশ ধান। অর্থাৎ বেশি দামের আশায় ধান মজুদ করার প্রবণতা কম। অবশ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান বিক্রির পরিমাণে বেশ পরিবর্তন এসেছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে এক মাসের মধ্যে বিক্রির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৯ সালে এক মাসের মধ্যে বিক্রি হয়েছিল ৬৫ শতাংশ ধান, যেখানে এক থেকে দুই মাসের মধ্যে ছিল ২০ শতাংশ, দুই-তিন মাসের মধ্যে ১৩ এবং চার মাস বা ততোধিক ছিল ২ শতাংশ। মূলত গত বোরো মৌসুমে ধানের ভালো দাম পাওয়ার কারণে প্রথম মাসে বিক্রির প্রবণতা কিছুটা কমেছে। তবে এখনো প্রথম মাসের মধ্যে যে পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে, তা কৃষকের জন্য বেশ ক্ষতির কারণ হচ্ছে। ধানের মজুদাগার ও আর্থিকভাবে কৃষকদের সক্ষম করে তুলতে পারলে কৃষকের ধানের মাধ্যমে আরো বেশি লাভবান করা সম্ভব বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষক দলের প্রধান ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) সাবেক মহাপরিচালক কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, কৃষক যে ভালো নেই এটি তার একটি প্রতীকী চিত্র। প্রধানত দুটো কারণে মৌসুমের শুরুতে কৃষক ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রথমত, কৃষক ধারদেনা করে ধান উৎপাদন করে বিধায় দ্রুত অর্থ পরিশোধের তাড়া থাকে। অন্যদিকে কৃষকের ঘরে এখন আর বাড়তি জায়গা নেই। ফলে আর্থিক সক্ষমহীনতা ও মজুদাগারের অভাবে বাধ্য হয়েই ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষক। এ কারণে ধানের বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে মিলার ও ট্রেডার্সদের হাতে। আবার কৃষকের ধান উৎপাদন খরচ এক যুগ ধরে প্রতি বছর গড়ে ২-৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে এই এক যুগে মুনাফা কমে গেছে প্রায় ৮ শতাংশ। ফলাফল ধানের প্রকৃত দামে হ্রাস। একদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, অন্যদিকে মুনাফার কমতি কৃষকদের আর্থিক সক্ষমতায় দারুণভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে। এজন্য মোট উৎপাদিত ধানের ন্যূনতম ১০ শতাংশ কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহের পরামর্শ দেন তিনি। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে ধানের উৎপাদন খরচ বাড়লেও কমে গেছে শস্যটির প্রকৃত দাম। কোনো কোনো বছর বোরো ধানে কৃষক লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। যেখানে দেশের আবাদি জমির সিংহভাগেই বোরো ধান চাষ হয়। বোরো আবাদে কৃষকের হেক্টরপ্রতি লোকসান এখন প্রায় ৬ হাজার টাকা। এ লোকসানের অন্যতম কারণ শ্রমিক ব্যয়। পারিবারিক ও ভাড়া শ্রমিকের পেছনে ব্যয় হচ্ছে মোট উপকরণ খরচের প্রায় ৪৬ শতাংশ। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষিপণ্যের আধুনিক বাজার ব্যবস্থা ও বাণিজ্যিকীকরণ দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে এসিআই এগ্রিবিজনেসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ড. ফা হ আনসারী বণিক বার্তাকে বলেন, ধান কাটা থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে যান্ত্রিকীকরণ করতে পারলে কৃষকদের বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। কম্বাইন হারভেস্টার জমির ধান কাটা থেকে মাড়াই ও বস্তাবন্দি করে বাড়িতে নিয়ে আসা পর্যন্ত কৃষকের খরচ ও সময়ের বড় ধরনের সাশ্রয় করে। এছাড়া প্রথাগতভাবে ধান কাটা ও মাড়াই করলে ধানের ১২-১৫ শতাংশ নষ্ট হয়। যন্ত্রের মাধ্যমে সেই কাজটি করলে ক্ষতির পরিমাণ ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। পাশাপাশি যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে তরুণ কর্মসংস্থানকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। তিনি আরো বলেন, শস্যের নিবিড়তা বাড়ানোর মধ্যেমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং ইন্টারক্রপিং গ্যাপ (আন্তঃফসল বিরতি) কমিয়ে এনে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। কৃষকের উৎপাদন খরচের বহুমুখী মাধ্যম প্রয়োগ করে মুনাফা বৃদ্ধি করতে হলে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই। আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইএফপিআরআই) একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জমির পরিমাণ বা আকারের হিসাবে দেশের প্রায় ৮৩ শতাংশ কৃষকই প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র। শূন্য দশমিক ৫ একরের নিচে এমন আকারের জমি আবাদ করে থাকেন ৩৬ শতাংশ কৃষক। তাদের বলা হয় প্রান্তিক কৃষক। আর শূন্য দশমিক ৫ থেকে দেড় একরের কম জমি আবাদ করেন ৪৭ শতাংশ, সংজ্ঞানুযায়ী তারা ক্ষুদ্র কৃষক। ফলে দেশের সিংহভাগ কৃষকই ক্ষুদ্র ও ছোট জমিতে আবাদ করেন। এসব জমিতে আবাদের মাধ্যমে কৃষক নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য আর্থিক এবং সামাজিক চাহিদা পূরণ করেন। এতে চাহিদা মেটানোর জন্য কাটার শুরুতেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষক। এটির সুযোগ নিচ্ছেন মিলার ও ফড়িয়ারা। এ বিষয়ে ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, একদিকে ক্ষুদ্র কৃষক অন্যদিকে আর্থিক সক্ষমতাহীনতা। এ দুটোর প্রভাবে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বেশ ঝুঁকিতে থাকেন কৃষক। মিলারদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো কৃষকের এ আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাজার থেকে সবচেয়ে কম দামে ধান কিনতে পারা। তাই কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা বাড়াতে হবে। সংগ্রহ পদ্ধতির আধুনিকায়ন করতে হবে। উৎপাদন খরচ কমাতে উন্নত জাতের ধান ও প্রযুক্তি কৃষকের মধ্যে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে ভালো দাম পাওয়া যায় এমন জাতের আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ধান আবাদে কৃষককে লাভবান করতে না পারলে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে।

  • স্বাধীনতার পর পাঁচ দশকে খাদ্যশস্যের উৎপাদন দেশে তিন গুণ বেড়েছে। বৈশ্বিক চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন তৃতীয় অবস্থানে। এ কারণে কভিডকালেও খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে হয়নি বাংলাদেশকে। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে এসে খাদ্যশস্য নিয়ে এ উচ্ছ্বাস এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে আসছে। করোনাজনিত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বড় ধরনের খাদ্যঘাটতিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। খাদ্যশস্যের দামে এর প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) গ্লোবাল এগ্রিকালচারাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের (গেইন) প্রতিবেদনের তথ্যেও এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। প্রতিবেদনটি চলতি সপ্তাহেই প্রকাশ হয়েছে। ‘গ্রেইন অ্যান্ড ফিড আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) দেশে চালের উৎপাদন হবে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টন কম। যদিও এ সময় দেশে খাদ্যপণ্যটির চাহিদা থাকবে প্রায় ৩ কোটি ৫৯ লাখ টন। সে হিসেবে দেশে এবার চালের ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় ১১ লাখ টনে। অন্যদিকে এ সময় দেশে গমের চাহিদা থাকবে প্রায় ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টন। যদিও উৎপাদন হবে মাত্র ১২ লাখ ২০ হাজার টন। সব মিলিয়ে দেশে এবার প্রায় ৭৪ লাখ ৩০ হাজার টন খাদ্যঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যে দেখা যায়, গত  অর্থবছরে (২০১৯-২০) দেশে মোট চাল উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৮৭ লাখ ২৪ হাজার টন। চলতি অর্থবছরে এ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ টন। যদিও ইউএসডিএর প্রক্ষেপণ বলছে, এবার চালের উৎপাদন হবে লক্ষ্যের তুলনায় অনেক কম। ইউএসডিএর ভাষ্যমতে, এ ঘাটতি পূরণের জন্য আমদানিনির্ভরতায় ফিরতে হবে বাংলাদেশকে। সেক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে শুধু গমই আমদানি করতে হবে প্রায় ৬৬ লাখ টন। সব মিলিয়ে দেশে এবার খাদ্যঘাটতি মেটাতে চাল ও গম আমদানি করতে হতে পারে প্রায় ৭৭ লাখ টন। সেক্ষেত্রে এবার স্বাধীনতার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হতে পারে বাংলাদেশকে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ যাবত্কালের সর্বোচ্চ খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। ওই সময় এর পরিমাণ ছিল ৯৭ লাখ ৭৪ হাজার টন। মূলত চালের আমদানি শুল্ক কমানোর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ওই বছর উৎপাদন কমে যায়। ফলে আমদানি বাড়াতে হয়। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানির নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের সংশোধিত চাহিদা অনুযায়ী, এবার খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে ২৪ লাখ ৫৫ হাজার ৭ টন। এর মধ্যে চাল ১৮ লাখ ৬৫ হাজার টন ও গম ৫ লাখ ৯০ হাজার টন। অন্যদিকে খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আনুমানিক প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টন। এ বিষয়ে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বণিক বার্তাকে বলেন, খাদ্যশস্যের উৎপাদনে গতি ধরে রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সময়ে সঠিক পরিমাণে খাদ্যশস্য আমদানির মাধ্যমে মানুষের চাহিদা পূরণে খাদ্য মন্ত্রণালয় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে মহামারী পরিস্থিতিতে দেশের কোথাও খাদ্য সরবরাহে সংকট তৈরি হয়নি। আবার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খাদ্যের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ ছিল। এ কারণে দেশের খাদ্য সরবরাহ বেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে খাদ্যশস্যের মজুদ বাড়ানোর সব ধরনের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও আমদানি—উভয় বাজার থেকে সংগ্রহ প্রক্রিয়ার গতি বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে আমদানীকৃত চাল ও গম আসতে শুরু করেছে। প্রায় ছয় লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানির উদ্যোগ নেয়ার মাধ্যমে আগামী জুন পর্যন্ত খাদ্যশস্যের মজুদ নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই উৎপাদনে যদি কিছুটা কমতিও থাকে সরবরাহে কোনো ধরনের ঘাটতি বা সংকট তৈরি হবে না। খাদ্যশস্যের উৎপাদনে ঐতিহাসিক সাফল্যের পরও চলতি অর্থবছরে এ আমদানিনির্ভরতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর কারণ অনুসন্ধানের প্রয়াস চালিয়েছে বণিক বার্তা। এ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও। এসব আলোচনায় বেশকিছু বিষয়ও উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে বড় একটি কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের আশঙ্কা, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব এবার খাদ্যশস্য উৎপাদনে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত ও রোগের প্রাদুর্ভাবে কয়েক বছর ধরেই গমের উৎপাদন নিম্নমুখী। উপরন্তু দেশে চাল সরবরাহের সবচেয়ে বড় উৎস বোরো ধানেও কৃষকের তেমন কোনো মুনাফা নেই। কৃষি সরবরাহ চেইনের নানা জটিলতা এখনো গ্রামের কৃষকের অর্থবিত্ত বৃদ্ধির পথে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে রয়েছে। যদিও ট্রেডার ও মধ্যস্বত্বভোগীরা সম্পদ বাড়িয়ে ক্রমেই বিত্তশালী হয়ে উঠছে। অন্যদিকে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণের পথেও রয়েছে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। মানসম্মত বীজের প্রাপ্যতা নিয়েও সংকট রয়েছে। তথ্য বলছে, দেশের মোট আবাদি জমির প্রায় ৭৫ শতাংশেই এখনো ধানচাষ হচ্ছে। বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে প্রায় ৪৮ লাখ হেক্টরে। সে বোরো আবাদে মুনাফার দিক থেকে কৃষকের অর্জন শূন্য। উল্টো প্রতি হেক্টর বোরো আবাদে কৃষকের এখন ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার টাকা। এ কারণে অনেক কৃষকই বোরো আবাদে নিরুৎসাহিত হয়েছেন, যা সার্বিক উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে নীতিনির্ধারকরা বলছেন, কৃষি খাতের বড় একটি দুর্বলতা হলো পরিসংখ্যানের গরমিল। খোদ কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাকও সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। নীতিনির্ধারকদের এ অভিযোগের যথার্থতা পাওয়া যায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যানে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৬ সালের মাথাপিছু দৈনিক চালভোগের পরিমাণ নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইফপ্রি)। ওই জরিপে উঠে আসে, ওই বছর দেশে দৈনিক মাথাপিছু চাল ভোগের পরিমাণ ছিল ৪২৬ গ্রাম। যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপের হিসাব বলছে, ওই বছর দেশের জনগণের দৈনিক মাথাপিছু চাল ভোগের পরিমাণ ছিল ৩৬৭ গ্রাম। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি মানেই ঘাটতির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলে সুন্দরভাবে লিখিত পরিকল্পনাও বাস্তবায়নে গলদ দেখা দিতে পারে। জনপ্রতি চালের যে ভোগ দেখানো হচ্ছে, তাতে উৎপাদনের তথ্যের সঙ্গে বড় ধরনের চাল উদ্বৃত্তের তথ্যও থাকতে হবে। কিন্তু বাজার তথ্য সেটি বলছে না। ফলে উৎপাদন বা ভোগের তথ্যে গরমিল রয়েছে। বাজার তথ্যের সঙ্গে আমাদের প্রকাশিত সব তথ্যের এক পর্যায়ে মিল থাকা প্রয়োজন। তা না হলে নীতি প্রণয়নে বিশেষ করে চাল আমদানি কিংবা রফতানির বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া মুশকিল হয়ে পড়বে। আমরা তথ্যের বিষয়ে বিবিএসের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হতে চাই। প্রয়োজনে আরো সঠিকতার জন্য বৈজ্ঞানিক বিকল্প পদ্ধতি প্রয়োগের উদ্যোগ বিবিএসকেই নিতে হবে। কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও সামগ্রিক তথ্যের সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। তার ভাষ্যমতে, বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বছরে কতটুকু উৎপাদিত হচ্ছে, চাহিদা কতটুকু বা উৎপাদন বছরে কতটুকু বাড়ছে—এসবের প্রকৃত ও সঠিক তথ্য দরকার। সেটি যৌক্তিকভাবেই করা হচ্ছে না বলে মনে করছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে আলু ও ধান-চালের দাম বৃদ্ধি এ বিষয়ে তার সন্দেহের উদ্রেক করেছে বলে সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি। তার মতে, দেশে এসব কৃষিপণ্যের আবাদ, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতার (একরপ্রতি) যে পরিসংখ্যান রয়েছে, তা সঠিক নয়। তবে দেশে খাদ্যশস্যের চাহিদা মেটাতে হলে আমদানিনির্ভরতা কোনো টেকসই সমাধান নয়। কারণ অর্থ থাকলেও বৈদেশিক বাজার থেকে খাবার পাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। এজন্য কৃষিসংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে বিশেষ নজর বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্য হলো প্রতি বছরই দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে। করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই চালের উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। সুতরাং মহামারীর মধ্যে খাদ্যের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে, যেটি আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে পরিসংখ্যানগত ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও খাদ্য উৎপাদনে কোনো ধরনের সংকট তৈরি হবে না। চলতি অর্থবছরে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে এরই মধ্যে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, যান্ত্রিকীকরণ বৃদ্ধিসহ উন্নত বীজের সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। কৃষকদের আর্থিকভাবে লাভবান করতে মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

  • চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের প্রাক্কলন ২ হাজার ২২৭ ডলার। এদিকে ভারতের হালনাগাদ তথ্য বলছে, কভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশব্যাপী লকডাউনের প্রভাবে দেশটির মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৪৭ ডলার। এ হিসাবে মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে মাথাপিছু আয়ে ভারতকে বাংলাদেশের ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেশটির সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামানিয়ামকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, সংখ্যাগুলো তুলনাযোগ্য নয়। সময় ও এলাকাভেদে কল্যাণমূলক কার্যক্রমের তুলনার জন্য বাজার বিনিময় হার বিবেচনা যথার্থ নয়। এতে করে অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি অথবা উৎপাদনশীলতার চিত্র সঠিকভাবে ফুটে নাও উঠতে পারে। স্থিরমূল্যে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), ক্রয়ক্ষমতার বিনিময় হার তুলনা করা সমীচীন, যা বিবেচনায় নিলে ভারত এগিয়েই থাকবে। মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়া বাংলাদেশের উন্নয়নের একটা প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। তবে তাদেরও মতামত হলো, তুলনা যথার্থ হবে ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনার নিরিখে। মাতৃমৃত্যু হার, শিশুদের টিকা প্রদান কার্যক্রম, প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলেমেয়ের পার্থক্য—এমন বেশকিছু আর্থসামাজিক সূচকে বাংলাদেশ ভারত থেকে ভালো আছে। কিন্তু দুই দেশের অর্থনীতির আকারে ভিন্নতা অনেক বড়। বাংলাদেশের যেখানে সাড়ে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি সেখানে ভারতের ২ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের। ক্রয়ক্ষমতায় পার্থক্যটা আরো বেশি। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, পরিসংখ্যানগুলো বাজারমূল্যের ওপর ভিত্তি করে বলা হয়। ক্রয়ক্ষমতার বিচারে দেখলে হয়তো ভিন্ন চিত্র পাওয়া যাবে। ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি খারাপ, করোনার কারণে দেশটির নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি প্রায় ১০ শতাংশ। কভিড চলে গেলে ভারতের প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাবে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে মাথাপিছু আয়ের এ পার্থক্য নিয়ে খুব বেশি উল্লসিত বা উচ্ছ্বসিত হওয়ার কারণ নেই। এর পেছনে যুক্তি হলো মাথাপিছু আয় গড় চিত্র তুলে ধরছে। আমাদের দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠীর বিষয়টি যদি খতিয়ে দেখি, সাম্প্রতিক সমীক্ষাগুলোয় এটা ১৯-২৩ শতাংশ। কোনো কোনো সমীক্ষায় ৪০ শতাংশের হিসাবও বলা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজের সুযোগের ক্ষেত্রটি এখন অনেক বড়। দারিদ্র্যসীমার নিচে যে বেশি মানুষ যাচ্ছে, অর্থাৎ দারিদ্র্য বিমোচনের যে অবনতি হচ্ছে, সেটা কীভাবে প্রতিহত করতে পারি সেই দিকটায় দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। দুই দেশের তুলনামূলক অবস্থানটি আরো স্পষ্ট হবে ক্রয়ক্ষমতার বিচারে। বণ্টন বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশে বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে। কভিডের কারণে আয়, ভোগ ও সম্পদের বৈষম্য আরো বেড়েছে। সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে বণ্টন বড় সমস্যা। ক্রয়ক্ষমতার নিরিখে ভারত এগিয়ে—এমন তথ্য উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়া অবশ্যই বাংলাদেশের উন্নয়নের একটা প্রতিফলন। কিন্তু ভারতের সঙ্গে তুলনাটা ঠিক না হওয়ার কারণ হলো গত বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক, প্রায় ১০ শতাংশের মতো। কিন্তু এটা আবার পাল্টে যেতে পারে এমন ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে যে পার্থক্যটা এবার আমরা দেখতে পাচ্ছি, আগামীতে তার বিপরীত চিত্র দেখা যাবে। সাধারণত ভারতে পণ্যসামগ্রী তুলনামূলক সস্তা। সুতরাং ক্রয়ক্ষমতার বিচারে ভারত এখনো বাংলাদেশের উপরে। আবার কেবল ক্রয়ক্ষমতা দেখলে হবে না, বণ্টনও দেখতে হবে। বণ্টন বিবেচনায় বাংলাদেশে আয়বৈষম্য ২০১০ থেকেই বাড়ছে—এমন পর্যবেক্ষণ জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কভিডের কারণে আয়, ভোগ, সম্পদবৈষম্য আরো বেড়েছে। তাই আমাদের কেবল মাথাপিছু দেখা উচিত না। বণ্টনে নজর দিতে হবে। ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তার দেয়া তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাক্কলিত হিসাবে মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা বা  ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। গত অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ২৪ ডলার। ফলে এক অর্থবছরের ব্যবধানে মাথাপিছু আয় ১০ শতাংশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ১১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে দেশের জিডিপি ছিল ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের অর্থনীতি মহামারীর কারণে চাপে রয়েছে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে সে চাপ মোকাবেলা করেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সব প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। ফলে অর্থনীতির নানা সূচকে উন্নতির তথ্য উঠে এসেছে। আমরা ঘুরে দাঁড়াব।

To Top