Blog

  • দেশের বেসরকারি পাটকলগুলো মুনাফায় থাকলেও ক্রমাগত লোকসানেই চলেছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন সরকারি পাটকলগুলো। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও বিজেএমসির অধীন পাটকলগুলো লোকসান দিয়েছে প্রায় ৫৭৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু শ্রমিক আন্দোলন থামাতেই ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনবার মুনাফার দেখা পেয়েছে বিজেএমসি। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল সংস্থাটি। এর পর থেকে প্রতি বছর ক্রমাগত লোকসানেই রয়েছে সংস্থাটি। এ বিপুল পরিমাণ ক্ষতির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর অব্যবস্থাপনা ও পরিচালনাগত অদক্ষতাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয়, ব্যয় ও লোকসানের পরিসংখ্যান (প্রভিশনাল) এবং লোকসানের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিজেএমসি দেখিয়েছে, এ সময় বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক আন্দোলন থামানো ও গেট মিটিং পরিচালনায় সংস্থাটির ব্যয় হয়েছে ৬৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা মোট লোকসানের প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ। এছাড়া সিবিএ কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা মোট লোকসানের দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত দুই বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন বা কারখানাগুলোর আধুনিকায়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া শ্রমিকদের জন্য কোনো বরাদ্দ বা সহযোগিতার কোনো অর্থও দেয়া হয়নি বলে দাবি তাদের। একই সঙ্গে আন্দোলন থামাতে শ্রমিকদের কোনো অর্থ দেয়া হয়নি বলেও জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্প প্রধান কামরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, শ্রমিক আন্দোলন থামাতে শ্রমিকদের অর্থ প্রদানের প্রশ্নই ওঠে না। আমরা গত কয়েক বছরে শুধু কারখানার নিয়মিত পরিচালনা ঠিক রাখার জন্য কিছু যন্ত্রাংশ মেরামত করেছি। কিন্তু নতুন কোনো যন্ত্র বসানো হয়নি। আধুনিকায়ন কিংবা এ ধরনের কোনো বিনিয়োগ এ কারখানায় হয়নি। এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বণিক বার্তাকে বলেন, এ ধরনের ব্যয় করার আইনি বৈধতা আছে কিনা, বা থাকলেও কী ধরনের ব্যয়ের স্বাধীনতা আছে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ব্যয়কে বিভিন্ন নামে চালিয়ে দেয়ার যে প্রবণতা, সেটি এ ধরনের তথ্যের মাধ্যমে উঠে এসেছে। শ্রমিকদের ঠিকভাবে বেতন দিতে পারে না, অথচ কিছু শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ ধরনের নামে কিংবা সুবিধাজনক খাত দেখিয়ে অর্থ সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে শ্রমিকদের উন্নয়নে যে অর্থ সরকার দিচ্ছে, সেটি আসলে তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের অনৈতিক ব্যয় ও খরচ দেখিয়ে আসছে কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠী। তাই বিজেএমসি থেকে কতটুকু কারা কীভাবে সুবিধা নিয়েছে, সেটি দেখার জন্য আন্তর্জাতিক মানের অডিটের মাধ্যমে এগুলো বের করা দরকার। সেটি কারখানা পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হতে হবে। বিষয়টি নিয়ে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও মোট ৪৯৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছিল বিজেএমসি। অন্যদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লোকসান ৫৭৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। লোকসানের কারণ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এ সময় কারখানাগুলোয় অতিরিক্ত ৯ হাজার ১৭৭ জন অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োজিত করতে হয়েছে। এজন্য ৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে, যা মোট লোকসানের ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ব্যাংকঋণের সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৭৫ দশমিক ১১ কোটি টাকা, যা ক্ষতির ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ। সক্ষমতা অনুসারে উৎপাদন না হওয়ার কারণেই ২০১৮-১৯ অর্থবছর সবচেয়ে বেশি লোকসানে পড়তে হয়েছে সংস্থাটিকে, যার পরিমাণ ৩৩৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা বা মোট লোকসানের ৫৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। বিশ্লেষণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট বাবদ ২৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ক্ষতির কথাও তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামাজিক দায়বদ্ধতা বাবদ ২২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ের কথা জানানো হয়েছে বিশ্লেষণে। যদিও বিষয়টিতে আপত্তি তুলছেন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার বেশ কয়েকটি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এ বিষয়ে যশোরের কার্পেটিং জুট মিল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাদশা মিয়া এবং খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির খান বণিক বার্তাকে জানান, সিবিএ অফিস চালানোর জন্য কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বরাদ্দ তারা পান না। কোনো ধরনের আন্দোলন হলে মিল বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা থেকে তারা নিজ উদ্যোগে শ্রমিকদের বুঝিয়েছেন। টাকার বিনিময়ে কোনো কাজ করেননি। ফলে এখানে অর্থ আসার কোনো প্রয়োজনও নেই। জানা গেছে, বর্তমানে দেশে পাটপণ্য উৎপাদনে বিজেএমসির অবদান মাত্র ৮ দশমিক ২১ শতাংশ। রফতানিতে এ হার আরো কম, ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। নামমাত্র উৎপাদন ও অনুল্লেখ্য রফতানির জন্য সরকারি বাজেট থেকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির মাধ্যমে সংস্থাটির মিলগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রয়োজনের অধিক শ্রমিক দিয়ে এসব মিল পরিচালনা করা হলেও সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে না পারারও অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রতি বছরই বাড়তে থাকে লোকসানের পরিমাণ। স্বাধীনতার পর অল্প কয়েকবার মুনাফার দেখা পেয়েছে সংস্থাটি। এদিকে অপ্রয়োজন হলেও সংস্থাটির কারখানাগুলোয় প্রতি বছর নিয়োগ দেয়া হয়েছে প্রচুর শ্রমিক। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও বিজেএমসির কারখানাগুলোয় শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৬২ হাজার ১১৩ জন। প্রয়োজনের অধিক শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হলেও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়নি। উল্টো তা ছিল বরাবরের মতোই নিম্নমুখী। ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও সংস্থাটির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬৪১ টন, এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৬৯ হাজার ১১১ টন। এ সময় দৈনিক গড় উৎপাদন ছিল ২৪৯ দশমিক ৬২ টন, যা আগের অর্থবছরেও (২০১৭-১৮) ছিল ৪৭০ দশমিক ৫৭ টন।

  • গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) দেশে চাল ও গম আমদানি হয়েছে প্রায় ৬৪ লাখ ৩৪ হাজার টন, যা গত চার দশকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর মধ্যে চালের পরিমাণ খুবই সামান্য। আমদানির সিংহভাগই...

  • ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১১ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) গড়ে প্রতি মাসে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ছিল গড়ে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছরের শেষ মাসে গিয়ে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে ব্যয় ও বাস্তবায়নে। জুনে ব্যয় হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে এডিপিতে মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা, আর বাস্তবায়নের হার ছিল ৮০ দশমিক ২৮ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে এডিপি ব্যয় ও বাস্তবায়নের এসব তথ্য উঠে এসেছে। বার্ষিক প্রতিবেদনটি শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ও ব্যয়ে রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। এ সময়ে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নের হার ছিল ৯৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। তবে রেকর্ডের পরের অর্থবছরে এসে বাস্তবায়নে আবারো পতন ঘটে। দুই যুগের বেশি সময় পর বাস্তবায়নের হার সর্বনিম্নে ঠেকে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে। আইএমইডির সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের নিজস্ব কিছু উদ্ভাবনী কর্মসূচির মাধ্যমে ব্যয় ও বাস্তবায়নে রেকর্ড অর্জন করেছিলাম। কিন্তু সংগত কারণেই সেটি ধরে রাখতে পারিনি। তবে আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। করোনার আগেই পরিকল্পনামন্ত্রী বিভাগীয় পর্যায়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক শুরু করেছিলেন। প্রতি মাসে ডিসিদের নিয়ে আমিও বৈঠক করেছি। আইএমইডির মহাপরিচালকরা পিডিদের সঙ্গে প্রতি মাসে কমপক্ষে ছয়টি বৈঠক করতেন। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের শেষদিকে সাধারণ ছুটির কারণে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়ি। অর্থবছরের শেষ মাসে অর্থ ব্যয় ও বাস্তবায়নে এমন উল্লম্ফন কতটা যৌক্তিক এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আমাদের আর্থিক ব্যয়টা সব সময়ই ফিজিক্যাল ব্যয় থেকে কম হয়। সাধারণত বছরের শেষদিকে এসে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। তবে তদারকির মাধ্যমে এ দুটি ক্ষেত্রে আরো সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর দিকনির্দেশনা এসেছে। উন্নয়ন ও জীবন দুটিকে একসঙ্গে এগিয়ে নিতে যথাসময়ে এডিপি বাস্তবায়ন এবং আরো কার্যকরভাবে অর্থের ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা নতুন কর্ম-উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১১ মাস পর্যন্ত এডিপিতে মোট ব্যয় ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২১ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নের হার ছিল ৫৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে অর্থবছর শেষে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ শুধু জুনেই ৪৬ হাজার ১০৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। যদিও পূর্ববর্তী মাসগুলোতে এটি ছিল খুবই কম। গত অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের এডিপি ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে ১৬ হাজার ৫৮১ কোটি, এপ্রিলে ৮ হাজার ১৩৬ কোটি, মার্চে ১০ হাজার ৫৬১ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ১১ হাজার ১৬৩ কোটি, জানুয়ারিতে ১২ হাজার ২৬১ কোটি এবং ডিসেম্বরে ১৫ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বিগত অর্থবছরগুলোয় এডিপি বাস্তবায়ন হার ৯০ শতাংশের বেশি হলেও ২৭ বছর পর এবারই তা ৮০ শতাংশে নামল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। কিন্তু মাঝপথে এসে গত মার্চে বরাদ্দ কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ১ হাজার ১৯৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ফলে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের আরএডিপির অর্থ ব্যয় হয়নি ৩৯ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়ের প্রয়োজন হবে না। যদি অর্থ মন্ত্রণালয় এ অর্থ ছাড়ও করে, তাহলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেরত চলে যাবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত অর্থবছর এডিপি বাস্তবায়ন হার কম হওয়ার প্রধান কারণ নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। করোনার কারণে চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। মার্চ পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৪৫ শতাংশ। এপ্রিল পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ এক মাসে মাত্র ৪ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছিল। মে মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৫৭ শতাংশে উন্নীত হয়। আর বছর শেষে এডিপি বাস্তবায়িত হয় ৮০ শতাংশ। সে হিসেবে এক মাসে ২৩ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। টাকার অংকে ৪৬ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। এর আগে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ৭৯ হাজার ৭৮৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। নয় মাসে অর্থাৎ মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছিল ৯০ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ছিল ৪৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বা এপ্রিল পর্যন্ত যা ছিল ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং টাকার অঙ্কে ব্যয় হয়েছিল ৯৮ হাজার ৮৪০ টাকা। সাধারণ ছুটিতে এপ্রিল, মে ও জুনে উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম স্থবির ছিল। বেশির ভাগ প্রকল্পের কাজ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আরএডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শুধু বিল পরিশোধ ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি। আইএমইডির প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত অর্থবছর সবচেয়ে কম ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এ তালিকায় পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ৩৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ, খাদ্য মন্ত্রণালয় ৪৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ, জননিরাপত্তা বিভাগ ৫১ শতাংশ, আইন ও বিচার বিভাগ ৫১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তবে সর্বোচ্চ আরএডিপি বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ, স্থানীয় সরকার, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক, সেতু বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।

  • দুই ধাপে চার সপ্তাহ ধরে বন্যা চলছে দেশে। ২৮ জেলায় চলমান এই বন্যায় এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে দেশের ৩০ শতাংশ এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুর্গত এলাকার মানুষ। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের উজানে বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতীয় অংশে ধাপে ধাপে ভারি বৃষ্টিপাতই দীর্ঘমেয়াদি বন্যার মূল কারণ। তৃতীয় ধাপে ভারি বৃষ্টিপাত ও ঢল নামলে বাড়তে পারে বন্যার ব্যাপকতা। সেই সঙ্গে বাড়বে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও। তবে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শঙ্কা থাকলেও চলতি বছরের বন্যা এখন পর্যন্ত বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেনি। বন্যার পানি আরো তিন থেকে পাঁচদিন পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর পর থেকে পরিস্থিতি ক্রমে স্থিতিশীল হয়ে আসবে এবং উন্নতির দিকে যাবে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আলরাজি বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা আশা করছি আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। হয়তো আরো তিন-চারদিন পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এর পরই বন্যার পানি নামতে শুরু করবে। তবে বন্যা পুরোপুরি শেষ হতে আরো দুই সপ্তাহ সময় নেবে। সব মিলিয়ে এবারের বন্যা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছবে না। স্থায়িত্ব ও ক্ষতির দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছিল ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৮ সালে বন্যার স্থায়িত্বকাল ছিল ৩৩ দিন। ২০০৭ সালে ইউনাইটেড নেশনস ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত ‘ফ্লাডস ইন বাংলাদেশ: হিস্ট্রি, ডাইনামিকস অ্যান্ড রিথিংকিং দ্য রোল অব দ্য হিমালয়াস’ শীর্ষক এক বইয়ের তথ্য বলছে, ১৯৯৮ সালের বন্যায় দেশের প্রায় ৬৮ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। অন্যান্য বছরের বড় বন্যাগুলোর মধ্যে ১৯৮৮ সালে ৬৩, ২০০৭ সালে ৫৩, ১৯৮৭ সালে ৪০, ১৯৭৪ সালে প্রায় ৩৭, ২০০৪ সালে ৩৭ দশমিক ২৭, ১৯৫৫ সালে প্রায় ৩৬ এবং ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। ১৯৯৮ সালে বন্যার স্থায়িত্বকাল ছিল ৩৩ দিন। এরপর ২০১৯ সালের বন্যার স্থায়িত্ব ছিল প্রায় তিন সপ্তাহ। এছাড়া চলতি বছরের মতোই বন্যা হয়েছিল ২০০৪ সালে। ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ১৯৯৮ ও ১৯৮৮ সালের বন্যা। ওই দুই বছরই ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সেই ধরনের ক্ষতি না হলেও স্থায়িত্বে সেই বছরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। চলমান বন্যা এরই মধ্যে ২৭ দিন অতিক্রম করেছে। দুই ধাপের বন্যায় এরই মধ্যে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৬ হেক্টর ফসলি জমিতে বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ২৫ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত মোট ১৪টি জেলায় প্রায় ৭৬ হাজার ২১০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৪১ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টাকার অংকে এ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৪৯ কোটি। মোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার। দ্বিতীয় ধাপে ১১ থেকে ২১ জুলাই সময়ে নতুন করে আরো ১২টি জেলায় মোট ১৩টি ফসলের প্রায় ১ লাখ ১ হাজার ৫৯৬ হাজার হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়। এবারের বন্যার বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বণিক বার্তাকে বলেন, বন্যার স্থায়িত্ব সম্পর্কে এখনই বলা সম্ভব নয়। বন্যার স্থায়িত্বের চেয়ে ফসল উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষার দিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এজন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ভূপ্রাকৃতিক কারণেই প্রতি বছর চরে বন্যা দেখা দেয়। এবারো তা-ই হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রামের প্রায় তিন শতাধিক চরাঞ্চলের চার লাখ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। ঘর-বাড়ি ডুবে যাওয়ায় নৌকা, কলাগাছের ভেলা ও ঘরের মাচানে কোনো রকমে দিন পার করছে দুর্গতরা। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বতুয়াতুলির চরের মুসা মিয়া জানান, বন্যা এত দীর্ঘ হবে সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। পানি সামান্য কমার পর আবারো বৃদ্ধি পায়। কাজকর্ম নেই। ঘরে খাবার নেই। বউ, বাচ্চা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে আছি। কোনো ত্রাণ পাইনি। ত্রাণ না পেলে আর বাঁচার উপায় থাকবে না।

  • দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশ ভুটান। আয়তন ও অর্থনৈতিকভাবে ছোট হলেও নাগরিকদের পরিশোধিত পানির প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে কোনো কার্পণ্য নেই দেশটির। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, ভুটানের ৯৯ শতাংশের বেশি মানুষ পাইপলাইনে সরবরাহ করা পরিশোধিত পানি পাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশে এখনো পরিশোধিত পানি সুবিধার আওতায় রয়েছে মাত্র ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ মানুষ। বিশ্বব্যাংক তাদের ওই প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পানি সরবরাহ, গুণগত মান এবং দাম নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে। সেখানে পাইপলাইনে সরবরাহকৃত পানির বিষয়ে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সরবরাহকৃত পরিশোধিত পানি প্রাপ্তির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভুটান। দেশটির ৯৯ শতাংশের বেশি মানুষ সরবরাহকৃত পানি সুবিধা পায়। অন্যদিকে মালদ্বীপে ৪৭ দশমিক ৮০ শতাংশ, নেপালে ৪৭ দশমিক ৪০ শতাংশ, ভারতে ৪৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ, শ্রীলংকায় ৩৮ দশমিক ২৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ ও আফগানিস্তানে ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ মানুষ পাইপলাইনে সরবরাহ করা পানি সুবিধার আওতায় রয়েছে। জনগোষ্ঠীর পাইপলাইনে পানি সুবিধা প্রাপ্তির তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার নিচে রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। দেশে মাত্র ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ মানুষ এ সুবিধার আওতায় আছে। এক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যে পার্থক্যও বেশ। শহরের প্রায় ২২ দশমিক ৬৬ শতাংশ মানুষ পাইপলাইনে পরিশোধিত পানি পেলেও গ্রামে এ হার মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরাপদ পানি সরবরাহের বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। পাশাপাশি দেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ বিষয়ে সুস্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু এত কমসংখ্যক মানুষ নিরাপদ পানি সুবিধার আওতায় থাকলে সেসব লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ওয়াটার এইড বাংলাদেশের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, নেপাল ও আফগানিস্তানের তুলনায় আমাদের পিছিয়ে থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক। এটি প্রেস্টিজ ইস্যু, পিছিয়ে থাকা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকার যদি রাজনৈতিকভাবে কোনো টেকসই অঙ্গীকার না নেয়, তাহলে দেশের মানুষের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছানো খুব কষ্টসাধ্য হবে। ভারতে এরই মধ্যে প্রতিটা ঘরে পাইপলাইনে পানি যাবে এমন অঙ্গীকার ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। সব দেশেরই নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন দরকার। আমাদের দেশে কিছুটা পরিকল্পনা করা হচ্ছে, কিন্তু সেটি একেবারেই শহরকেন্দ্রিক। ফলে পানি নিয়ে শহর ও গ্রামে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি করছি আমরা। আবার সরবরাহকৃত পানির মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন ও জটিলতা। মহামারী পরিস্থিতিতে হাত ধোয়ার যে প্রচলন আমরা দেখছি, সেটিও সরবরাহকৃত পানি ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে ২২৫ কোটি থেকে ২৩০ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন। আবার ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে, তার ২২ শতাংশ ভূূ-উপরস্থ উৎস থেকে এবং ৭৮ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে। ‘জাতীয় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন নীতিমালা, ১৯৯৮ অনুযায়ী’ সমগ্র দেশের পল্লী এলাকায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক নিরাপদ পানির উৎস স্থাপনের লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সবার জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ করা, স্যানিটারি ল্যাট্রিন সুবিধাভোগী নগরবাসীর অনুপাত ১০০ শতাংশে এবং গ্রামীণ জনগণের অনুপাত ৯০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। সেই লক্ষ্যে সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবনমান উন্নয়নের পরিকল্পনায় সম্প্রতি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। চলতি বছরের শুরুতে সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮৫০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এজন্য সারা দেশে ৯০ হাজার ৬৩৬টি অগভীর নলকূপ এবং ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৭৭টি গভীর নলকূপ স্থাপন হবে। সাবমার্সিবল পাম্প ও জলাধারসহ অগভীর নলকূপ ২ লাখ ৬ হাজার ৬৬৪টি এবং সাবমার্সিবল পাম্প ও জলাধারসহ গভীর নলকূপ হবে ১ লাখ ৭০ হাজার ২২২টি। এছাড়া অন্যান্য যন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে গ্রামে পানি সরবরাহ বাড়ানো হবে। এদিকে শহরে পানি সরবরাহ বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নে রয়েছে ধীরগতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট ও মাঝারি শহর অঞ্চল এবং সেসব শহরে বস্তিতে বসবাসকারীদের পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ বাড়াতে হবে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারলে নারীদের পানি সংগ্রহ সহজ হবে। শিশুরা পানিবাহিত রোগ থেকে দূরে থাকতে পারবে। ফলে তাদের স্কুলে উপস্থিত নিশ্চিত হবে। তাছাড়া এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ হবে।

  • উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে দেশের ৮৫ শতাংশ কৃষিজমি। অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিপজ্জনকভাবে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতও। একই সঙ্গে জমি, উপকরণ ও প্রযুক্তিগত দিক থেকেও রয়েছে নানা ধরনের সংকট। এসব প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গে করেই এগিয়ে চলেছে দেশের শস্য উৎপাদন খাত। এরই মধ্যে সাত কোটি টনের মাইলফলক অতিক্রম করেছে দেশের বার্ষিক শস্য উৎপাদনের পরিমাণ। ২০৩০ সালের মধ্যে খাতটির উৎপাদনশীলতাকে দ্বিগুণে উন্নীত করতে চাইছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন হলে নিঃসন্দেহে তা হয়ে উঠবে কৃষি খাতের জন্য অনেক বড় একটি অর্জন। তবে এ অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আরো গতিশীল করে তোলার জন্য শস্য খাতের প্রতিবন্ধকতাকে দূর করার ওপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, খাদ্যে টেকসই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে শস্য উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু শস্য খাতের নানা প্রতিবন্ধকতা ও দুর্বলতা থেকে গেলে খাদ্যে দীর্ঘমেয়াদি স্বয়ংসম্পূর্ণতার লক্ষ্য অর্জনের বিষয়টি ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে। কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের মোট উৎপাদন হয়েছে ৭ কোটি ১৫ লাখ টন। এর মধ্যে প্রধান দানাদার খাদ্যশস্যগুলোর (চাল, ভুট্টা ও গম) উৎপাদন চার কোটি টন ছাড়িয়েছে। আলু উৎপাদন হয়েছে ৯৭ লাখ টন। তেলবীজ উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ টন। উৎপাদনের এ ধারাকে আরো বেগবান করতে শস্যের উৎপাদনশীলতাকে ২০৩০ সালের মধ্যে ২০১৫ সালের তুলনায় দ্বিগুণ করার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ২০১৫ সালে দেশে চাল ও গমের হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদনশীলতা ছিল তিন টনের বেশি। ২০৩০ সালের মধ্যে তা ছয় টনের বেশি উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। ভুট্টার উৎপাদনশীলতা ছিল প্রায় সাত টন, যা প্রায় ১৪ টনে উন্নীত করতে চাইছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৫ সালে আলুর হেক্টরপ্রতি উৎপাদনশীলতা ছিল ২০ দশমিক ৭৬ টন। ২০৩০ সালের মধ্যে এটিকে ৪১ টনে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়া একই সময়ের মধ্যে ডাল শস্যের উৎপাদনশীলতা ১ দশমিক ১৪ থেকে ২ দশমিক ২৮ টন ও তেলবীজের হেক্টরপ্রতি উৎপাদনশীলতা ১ দশমিক ১৮ টন থেকে ২ দশমিক ৩৬ টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। পরিসংখ্যান বিবেচনায় বলা চলে, এখন পর্যন্ত এ বর্ধিত উৎপাদনশীলতার লক্ষ্য অর্জনের পথেই রয়েছে দেশের কৃষি খাত। ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত চাল ও গমের হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদনশীলতা অর্জন করা গিয়েছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ১২ টন ও ৬ দশমিক ৬ টন পর্যন্ত। ভুট্টার ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা অর্জন হয়েছে ৮ দশমিক ৭১ টন। এ সময়ে আলুর হেক্টরপ্রতি উৎপাদনশীলতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ টনে। পাশাপাশি ডাল শস্যের ক্ষেত্রে হেক্টরপ্রতি উৎপাদনশীলতা বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ২৭ টন। তেলবীজের ক্ষেত্রে এ বর্ধিত উৎপাদনশীলতার পরিমাণ ১ দশমিক ৩৪ টন। শস্য খাতের এ মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রায় সবক’টি শস্যের উৎপাদনশীলতাকে দ্বিগুণ করার লক্ষ্য অর্জন করা গেলে তা হবে অসম্ভবকে সম্ভব করার নামান্তর। এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা গেলে দেশে শস্য উৎপাদনের বহুমুখীকরণ কার্যক্রমও অনেক বেশি গতিশীল হয়ে উঠবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যদি উৎপাদন খরচ বাড়েও তার পরও বাড়তি শস্য উৎপাদনের মাধ্যমে মুনাফার ধারা ধরে রাখতে সক্ষম হবেন কৃষকরা। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের কৃষি খাতের কার্যক্রম এখন শুধু উৎপাদন বাড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। কৃষি খাতই এখন দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রধান হাতিয়ার। পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচকের উন্নয়নের অন্যতম অনুষঙ্গ কৃষি খাত। শস্য খাতে যেসব কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হলে যেকোনো অসম্ভবকেই সম্ভব করা যাবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, আমার এ বিশ্বাসের মূল কারণ সরকার থেকে কৃষকদের নীতিসহায়তা দেয়ার পাশাপাশি বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণকর্মী ও বেসরকারি খাতও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। কৃষিকে লাভজনক পর্যায়ে উন্নীত করতে বাণিজ্যিক কৃষিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। উপকরণ সহায়তা, অপ্রচলিত শস্যকে জনপ্রিয় করা ও কৃষিপণ্যকে রফতানিমুখী করতে নীতিসহায়তাও বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি সব ধরনের প্রযুক্তিও দ্রুততার সঙ্গে কৃষকের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে। তবে এ লক্ষ্যপূরণের পথে বড় বাধা হয়ে উঠতে পারে দেশের কৃষি খাতের বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো। জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৭০ সাল নাগাদ দেশে ধানের উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ার বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে কৃষকদের এখন খরা, লবণাক্ততা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি বা জলাবদ্ধতার মতো প্রতিকূলতাগুলোকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি, যা শস্য খাতের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় বাধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি মৌসুমেও ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও দীর্ঘমেয়াদি বন্যার মতো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে কৃষকদের। শুধু এ দুই দুর্যোগের কারণেই কৃষি খাতের সামগ্রিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকায়। এ কারণে সংশ্লিষ্টরাও বর্তমানে বিভিন্ন শস্যের ঘাতসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের ওপর জোর দিচ্ছেন বেশি। শস্য উৎপাদন খাতের আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস। বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) গবেষণা বলছে, দেশে আবাদযোগ্য জমির প্রায় ৮৫ শতাংশেরই উর্বরতা শক্তি হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় জমিতে রাসায়নিক সারের বদলে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে নীতিমালা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাসায়নিক সারের সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সারের মূল্যে ভারসাম্য আনারও। অতিমাত্রায় সেচনির্ভর ফসল উৎপাদনে ঝুঁকে পড়া, সেচের পানির অদক্ষ ব্যবহার ও ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণে জোর না দেয়ার কারণে বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ জেলায়ই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আবার সেচব্যয়ও বাড়ছে কৃষকদের। দেশে বর্তমানে প্রতি কেজি বোরো আবাদে পানির প্রয়োজন পড়ছে প্রায় তিন হাজার লিটার। এজন্য সেচের চাপ কমাতে আউশ আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করছে সরকার। উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম হওয়ার পাশাপাশি সেচের ওপর কম নির্ভরতা, সরকারের ভর্তুকি সহায়তা কার্যক্রম ও পরিবেশগত দিক বিবেচনায় কৃষকরাও এখন আউশ আবাদের দিকে ঝুঁকছেন বেশি। তবে এক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। আউশ ও আমন আবাদের ক্ষেত্রে বোরোর মতো উচ্চফলনশীল জাতের সংখ্যা বেশ কম। নতুন জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এ সংকট দূর করা গেলে সামনের দিনগুলোয় ধানের হেক্টরপ্রতি উৎপাদনশীলতা ছয় টনে উন্নীত করার লক্ষ্য অর্জনের বিষয়টি অনেক সহজ হবে। পাশাপাশি অন্যান্য শস্য আবাদের ক্ষেত্রেও জমির ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, সারা দেশে ধানের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। ভূপ্রাকৃতিক গঠন, কৃষক ও ভোক্তাদের চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে শতাধিক জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে আট টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে এমন জাতও উদ্ভাবন করা হয়েছে। আউশ ও আমনের নতুন এসব জাত কৃষকের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে। সামনের দিনগুলোয় ধানের জমি অন্যান্য শস্যে স্থানান্তর হবে। ফলে উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করার মাধ্যমে চালের প্রয়োজনীয় উৎপাদন ধরে রাখার পাশাপাশি অন্যান্য শস্যের আবাদ বাড়ানোও সম্ভব হবে। কম উৎপাদনশীলতার কারণে কৃষকদের মধ্যে এখন চারটি প্রধান ডাল শস্য আবাদে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে কম। ফলে এসব পণ্যের যেটুকু উৎপাদন হচ্ছে, তা দিয়ে স্থানীয় চাহিদার এক-তৃতীয়াংশও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়ে চললেও গত দুই অর্থবছরে দেশে ডাল শস্যের আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার হেক্টর। কম উৎপাদনশীলতার কারণে কৃষক সেভাবে লাভবান হতে না পারলেও পণ্যগুলো আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে বাংলাদেশের। গত ১০ অর্থবছরে দেশে ডাল শস্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় ডালের হেক্টরপ্রতি উৎপাদনশীলতা সোয়া এক টন থেকে আড়াই টনে উন্নীত করা গেলে কৃষকের পণ্যগুলো আবাদে উৎসাহিত করার পাশাপাশি আমদানিনির্ভরতা কমানোও সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে দেশে বার্ষিক ৬০ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে গম উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১৩ লাখ টন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পণ্যটির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের বিষয়টি এখন গতি হারিয়েছে। তবে ঘাতসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করা গেলে এ উৎপাদন সহজেই বাড়ানো সম্ভব হবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের কৃষিতে সম্ভাবনার সবটুকুই রয়েছে। সামনের দিনগুলোয় অর্থনৈতিক কাঠামোর অন্যতম শক্তিশালী ভিত্তিই হবে কৃষি। তবে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে শস্যগুলোর মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ জরুরি। তা না হলে কৃষকের কাছে সেটি পৌঁছানো কঠিন হবে। যে শস্য কম লাভজনক, সেটি কৃষকের কাছে পৌঁছানো কষ্টকর হবে। এটির পাশাপাশি কৃষকের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে সব ধরনের প্রযুক্তি পৌঁছাতে হবে। প্রণোদনা ও অর্থায়ন কাঠামোয় পরিবর্তন এনেই সেটি করতে হবে। উৎপাদনের পাশাপাশি নজর দিতে হবে বিপণনেও। এখনই কৃষিপণ্যের বিপণনে ডিজিটাল মাধ্যমের প্রবর্তন করতে হবে। কৃষকের খরচ কমিয়ে এনে মুনাফা বৃদ্ধির দিকে নজর বাড়াতে হলে এ খাতে উন্নত বিশ্বের মতো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ছোঁয়া দ্রুত পৌঁছাতে হবে। তাহলে দেশের কৃষি খাত একটি টেকসই রূপান্তর পাবে।

  • দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২৪ লাখ টন। পণ্যটির উৎপাদন মূলত একটি মৌসুমভিত্তিক হওয়ায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজে পুরো চাহিদা মেটে না। প্রতি বছর ৮-১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আর এতেই প্রায় প্রতি বছর অস্থিতিশীলতা দেখা দেয় কৃষিপণ্যটির দামে। মূলত আমদানির উৎস দেশগুলোয় মূল্যবৃদ্ধি বা শুল্কারোপের ফলে দেশে বছরের শেষ তিন মাসে মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পায় পেঁয়াজের দাম। গত এক দশকের ব্যবধানে পণ্যটির দামের ওঠানামা করেছে প্রায় ১৯ শতাংশ হারে। আর ২০১৮ সালেই স্থানভেদে পণ্যটির দামের পার্থক্য ছিল প্রায় ৭০ শতাংশ। প্রতি বছরই দামের অস্থিতিশীলতা দেখা দেয় এমন আরেকটি কৃষিপণ্য হলো মরিচ। বিশেষ করে বন্যার সময় মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায় মরিচের দাম। এক দশকের ব্যবধানে এ পণ্যটির দামের ওঠানামা হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। ২০১৮ সালেই স্থানভেদে মরিচের দামে পার্থক্য ছিল ৬০ শতাংশ। দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলমান বন্যার প্রভাবে বর্তমান বাজারেও অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে মরিচের দামে। স্বাভাবিক সময়ে পণ্যটির দাম ১০০ টাকার নিচে থাকলেও বন্যায় সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়ায় এখন  মরিচের দাম প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু মরিচ বা পেঁয়াজ নয়, কৃষিজ পণ্যের দামের ওঠানামার তালিকায় রয়েছে আলু, কলা, আম ও ডালজাতীয় পণ্যও। সম্প্রতি ১১টি কৃষিপণ্যের দামের অস্থিতিশীলতা নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সেখানে ২০০৮-১৮ সময়ে এসব পণ্যের দামের পার্থক্য কেমন ছিল এবং ২০১৮ সালে এসব পণ্যের স্থানভেদে দামের পার্থক্য ও ওঠানামা কেমন ছিল তা দেখানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলছে, ২০১৮ সালে স্থানভেদে ৫২ শতাংশ ওঠানামা করেছে আলুর দাম। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে পণ্যটির দামের ওঠানামার হার ছিল প্রায় ১৭ শতাংশ। অন্যদিকে গত ১০ বছরের ব্যবধানে কলার দাম ওঠানামা করেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। স্থানভেদে পণ্যটির দামের ওঠানামার হার ছিল প্রায় ৩০ শতাংশ। এছাড়া তেলজাতীয় শস্যের দামে ওঠানামার হার গত ১০ বছরে ১২ শতাংশের মধ্যেই ছিল। ২০১৮ সালে স্থানভেদে পণ্যটির দামের পার্থক্য ছিল ১৩ শতাংশ। গত ১০ বছরে ডালজাতীয় শস্যের দাম প্রায় ১৫ শতাংশ ওঠানামা করেছে। ২০১৮ সালে স্থানভেদে পণ্যটির দামের পার্থক্য ছিল ১৭ শতাংশ। ফলের মধ্যে এক দশকে আমের দামের পার্থক্য ছিল ১৭ শতাংশ এবং স্থানভেদে ২০১৮ সালে দামের পার্থক্য ছিল ২২ শতাংশ। বেগুনের দামের পার্থক্য ছিল গত ১০ বছরে প্রায় ২৩ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে যে অঞ্চলে পণ্যটির উৎপাদন হচ্ছে সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সরবরাহে বাধা বাজারে পণ্যটির দাম অস্থিতিশীল করে তোলে। যেমন বেগুন ও মরিচের উৎপাদনকারী অঞ্চলে সরবরাহ বাধা তৈরি হলেই সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ও বড় শহরে পণ্যটির দাম দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে মৌসুমি পণ্যের ক্ষেত্রে উৎপাদন কোন পর্যায়ে আছে এবং বাজারে সরবরাহ পরিস্থিতি কী পর্যায়ে রয়েছে  এবং আমদানি পরিস্থিতি কেমন, সেটার ওপর নির্ভর করে দামের ওঠানামা।  মূলত পেঁয়াজ ও ডালজাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে। এসব পণ্যের ক্ষেত্রে তথ্যের অবাধ প্রবাহ না থাকলে এবং ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হলেই হঠাৎ দাম বৃদ্ধি পায়। আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কারোপ ও আমদানিতে কোনো ধরনের বাধা থাকলেও দাম ওঠানামা করে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, অধিদপ্তর থেকে প্রতিনিয়তই কৃষিপণ্যের দাম ওঠানামা পর্যালোচনা করে নীতিনির্ধারণ করতে সংশ্লিষ্টদের সুপারিশ করা হচ্ছে। দামের ওঠানামা বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে দেশের মজুদ, আমদানি ও উৎপাদন পরিস্থিতির বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়। আবার বাজার ব্যবস্থাপনায় কোনো স্টেকহোল্ডার অস্বাভাবিক আচরণ বা কারসাজি করছে কিনা, সেটিও দেখা হচ্ছে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে যৌক্তিকতা পাওয়া গেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনেকের আচরণ অযৌক্তিক থাকে।  তখন আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হই। এছাড়া কয়েক বছর ধরেই কয়েকটি পণ্যের দাম একটি নির্দিষ্ট সময়েই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলো সরবরাহ সংকটেই হয়ে থাকে। সরবরাহ সংকটে যেসব পণ্যের দামের অস্থিতিশীলতা রয়েছে, সেগুলো দেশেই উৎপাদন বাড়ানোর  দিকে নজর দিতে হবে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ‘অ্যাসেসিং কম্পিটিশন ইন অনিয়ন মার্কেট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ভোক্তা যে দাম দেয় তা থেকে উৎপাদনকারীর আয় হয় মাত্র ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে কমিশন এজেন্ট ও আড়তদার পায় ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ফড়িয়া ও ব্যাপারি পায় ৭ দশমিক ১ শতাংশ, পাইকার ৮ দশমিক ১৯ এবং খুচরা বিক্রেতারা পায় ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। মোট চাহিদায় আমদানির একটা বড় প্রভাব রয়েছে। মোট আমদানির প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। চীন থেকে আসে ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া খুব সামান্য একটা অংশ আসে অস্ট্রেলিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর ও অন্যান্য দেশ থেকে। তাই দামের ওঠানামা কমাতে আমদানি বাজার বহুমুখী করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের গবেষক ও বিআইডিএসের রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে পেঁয়াজের দাম মূলত একটি নির্দিষ্ট সময়েই বাড়ে। ইনফ্লেশনারি এক্সপেকটেশন বা দাম বেড়ে যাবে এমন আতঙ্ক থেকেই মূলত পণ্যটির দাম বেড়ে যায়। আর সে আতঙ্ক তৈরি হয় দেশে উৎপাদন মৌসুম কোন পর্যায়ে আছে, ভারতে উৎপাদন পরিস্থিতি ও শুল্কারোপ কী পর্যায়ে আছে, বন্দরে খালাস ও সেবা পরিস্থিতি কেমন তা ভোক্তারা না জানার কারণে। তাছাড়া উৎসবভিত্তিক চাহিদা বৃদ্ধিও হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। দামের ওঠানামা কমাতে হলে উৎপাদন মৌসুমের পেঁয়াজকে পরবর্তী সময়ে বাজারে সরবরাহ উপযোগী করতে হবে। এজন্য উৎপাদক ও বিপণন পর্যায়ে মজুদ সক্ষমতা বাড়ানো এবং আমদানির বাজার বহুমুখী করতে হবে। গত এক দশকে গম ও চালের দামের অস্থিতিশীলতা বা ওঠানামার পরিমাণ কিছুটা কম ছিল। এ সময়ে বোরো চালের দামে ওঠানামার হার ছিল প্রায় ৯ শতাংশ। তবে ২০১৮ সালে স্থানভেদে তা ১৬ শতাংশে উন্নীত হয়। এই সময়ে আমন ধানের দামের ওঠানামা ছিল ১১ শতাংশ, যা ২০১৮ সালে ১৬ শতাংশে উন্নীত হয়। অন্যদিকে গমের দাম এক দশকের ব্যবধানে পার্থক্য ছিল মাত্র ৬ শতাংশ, যা ২০১৮ সালে স্থানভেদে উন্নীত হয় ১৭ শতাংশে। ফলে চাল ও গমের দামের পার্থক্য সব সময়ই ২০ শতাংশের নিচেই ছিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, মূলত দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কারণেই এসব পণ্যের দামের স্থিতিশীলতা দেখা দেয়। তবে অন্য কয়েকটি কৃষিপণ্যের দাম বেশ ওঠানামা করার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। মূলত মৌসুমের শেষ অথবা শুরুতে কিছু পণ্যের সরবরাহস্বল্পতা কিংবা বাজার মজুদ পরিস্থিতি কমে যাওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেশ দ্রুত ওঠানামা করে। এর মধ্যে তেল, ডাল ও মসলাজাতীয় পণ্যই বেশি রয়েছে। আবাদ সম্প্রসারণে অর্থায়ন সুবিধাসহ প্রশিক্ষণ ও বিপণন সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া কৃষক পর্যায়ে মজুদ বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছি।

  • কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও কৌশলগতভাবে খাদ্য মজুদ শক্তিশালী করতে চলতি বছরের বোরো মৌসুমে রেকর্ড ২০ লাখ টন চাল-গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। গত সোমবার সময় শেষ হলেও সব মিলিয়ে সংগ্রহ হয়েছে ৮ লাখ ৫৪ হাজার টন ধান-চাল, যা লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও কম। এ অবস্থায় সংগ্রহ সময় আরো ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ধান-চাল সংগ্রহের সবচেয়ে বড় অংশ আসে বোরো থেকেই। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারি মজুদ শক্তিশালী করতে খাদ্যশস্য সংগ্রহের কাজটি মূলত খাদ্য অধিদপ্তরই করে। সে লক্ষ্যেই চলতি বছরের বোরো মৌসুমে কৃষক ও অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ৮ লাখ টন ধান এবং ১১ লাখ ৫০ হাজার টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সব মিলিয়ে এবার ২০ লাখ ২৫ হাজার টন ধান-চাল ও গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে সেদ্ধ চাল ১০ লাখ টন, আতপ চাল দেড় লাখ টন  ও গম ৭৫ হাজার টন সংগ্রহের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। কৃষকদের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, মিলারদের কাছ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজি দরে আতপ চাল এবং ২৮ টাকা কেজি দরে গম কেনা হচ্ছে এবার। ৭ মে শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ১৫ এপ্রিলে গম কেনা শুরু হয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। জুনে গম সংগ্রহ কার্যক্রম শেষে ৬৪ হাজার ৪২৯ টন মজুদ করা সম্ভব হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৪৪ হাজার ১৫৮ টন। গত সোমবার পর্যন্ত বোরো ধান সংগ্রহ হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৩৩৭ টন। এছাড়া বোরো সেদ্ধ চাল ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৫৫ টন ও বোরো আতপ চাল ৮২ হাজার ৭৯৫ টন, সব মিলিয়ে ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮৭ টন সংগ্রহ করা হয়েছে। চালের আকারে সর্বমোট ৭ লাখ ৮১ হাজার ৭৬৯ টন সংগৃহীত হয়েছে। চাল ও গম হিসেবে নিলে মোট সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ লাখ ৪৬ হাজার ১৯৮ টন। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ লাখ ২৫ হাজার টন। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১১ লাখ ৭০ হাজার টন সংগ্রহ কম হয়েছে। গত মৌসুমে শুধু চালের সংগ্রহ হয়েছিল প্রায় ১৪ লাখ ৯ হাজার ৮৮৪ টন। ফলে চলতি মৌসুমে চালের আকারে গত মৌসুমের মাত্র ৫৬ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ায় মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানির মাধ্যমে সংগ্রহ বাড়ানোর নতুন কৌশল নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ সময় বাড়িয়ে এরই মধ্যে সার্কুলার জারি করেছে মন্ত্রণালয়। তবে চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে শুধু মিলারদের ওপর নির্ভর না করে উৎস পরিবর্তনের বিষয়ে মতামত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে চাল সংগ্রহ ওপেন মার্কেট দরপত্রের মাধ্যমে করা যায় কিনা, সেটি নিয়ে ভাবা যেতে পারে। সেটি করা গেলে বাজার আরো প্রতিযোগিতামূলক করা সম্ভব হবে। এছাড়া আইনি কাঠামো আরো শক্তিশালী করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে খাদ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নাও হতে পারে এমন একটি বিষয়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এজন্য অনেক আগে থেকেই আমি সরকারিভাবে চাল আমদানির পক্ষেই ছিলাম। সরকারের মজুদ কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত পরিমাণের নিচে রাখা যৌক্তিক হবে না। মহামারী পরিস্থিতিতে মজুদ কমে গেলে আরো বিপদ বাড়বে। পাশাপাশি কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় চাল আমদানি বেসরকারিভাবে উন্মুক্ত না হলে শুধু সরকারিভাবে করতে হবে। সরকারের সেই আমদানি দ্রুতই করতে হবে। এর পরও মজুদ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমতি দিতে হবে। যেসব মিলার চুক্তি অনুসারে সরকারকে চাল দিচ্ছে না তাদের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। চাল সংগ্রহে শুধু মিলারদের ওপর নির্ভর না করে কিংবা বিকল্প মডেল আছে কিনা সেটি নিয়ে ভাবা যেতে পারে।’ এবারের মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান এবং মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে নাও হতে পারে, এমন পর্যালোচনা ছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে। সেজন্য বরিশাল বিভাগের সঙ্গে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম পর্যালোচনা সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার মিলারদের সতর্কবার্তাও দিয়েছিলেন। মিলারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা এবং মিলকে কালো তালিকাভুক্ত করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় সরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমোদন নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

  • তুলনামূলক স্বল্প খরচে কোনো পণ্য নিজ দেশে উৎপাদন সম্ভব হলে তা ওই পণ্যটির ক্ষেত্রে তুলনামূলক সুবিধা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিযোগী দেশের তুলনায় কোনো কৃষিপণ্য স্বল্প খরচে দক্ষতার সঙ্গে ঊৎপাদন করার বিষয়টি এক্ষেত্রে গুরুত্ব পায়। এটি পরিমাপে ব্যবহার করা হয় রিভিলড কমপারেটিভ অ্যাডভানটেজ (আরসিএ) স্কোর। আর সেই মানদণ্ডে দেশে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এখন পাট। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আরসিএ স্কোর ১-এর থেকে বেশি হলে পণ্যটি প্রতিযোগী দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। সেটি দেশে উৎপাদন করার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে পাটের আরসিএ মান ৪৮৮। দেশে গত বছর প্রায় ৮৬ লাখ বেল পাটের উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া পাট ও পাটজাতীয় পণ্যের মাধ্যমে রফতানি আয় হয়েছে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ফলে আরসিএ মান বেশি থাকায় দেশে আরো বেশি পাটের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে অধিক সুবিধা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কৃষিজ অন্যান্য যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে আরসিএ মান ভালো সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সরিষা, রসুন, তিল ও তুলা। পাশাপাশি মাছ, মসলা, তামাক, পালংশাক, পেঁপে, আলু ও মরিচে ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের দেশের একটি বড় সুবিধা হলো ইচ্ছে করলেই সব উৎপাদন করতে পারি। আমাদের আবহাওয়া ও মাটি সেটিকে সাপোর্ট করে। তবে কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো ও শস্যের বহুমুখীকরণে অবশ্যই বাণিজ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণকে গুরুত্ব দিতে হবে। যে পণ্যটি বেশি সুবিধা দেবে সেটি দেশেই উৎপাদনে নজর দিতে হবে। তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে যেটি কম সুবিধা দেবে, সে শস্য উৎপাদন বাড়ানোর অর্থ হলো কৃষককে কার্যকর সুবিধা দিতে পারব না। যদি না সরকারের সরাসরি ইন্টারভেনশন থাকে। কৃষিপণ্যের তুলনামূলক সুবিধা একটি পরিবর্তনশীল বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি কার্যকর আরসিএ তালিকা থাকা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে নতুন কোনো পণ্য দেশে উৎপাদন করতে গেলে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে সহায়ক হবে। পাশাপাশি প্রযুক্তি, জ্ঞান ও উপকরণ সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা যাবে। কমপারেটিভ অ্যাডভানটেজ বা তুলনামূলক সুবিধা তত্ত্বটি প্রথম প্রবর্তন করেন ১৮১৭ সালে ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ডেভিড রিকার্ডো। যার মূল বিষয় ছিল আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানির চেয়ে দেশে উৎপাদন করে যেসব পণ্যে বেশি লাভবান হওয়া যাবে, সে পণ্যই দেশে উৎপাদন করা। যেটি কম লাভ দেবে, সে পণ্য প্রতিযোগী দেশে উৎপাদনের জন্য ছেড়ে দেয়া। আর এভাবেই দুটি দেশ দুটি পণ্য উৎপাদন ও বাণিজ্য করে তুলনামূলক সুবিধা পাবে। তখন দুই দেশের মধ্যে একটি পণ্য উৎপাদন অন্য পণ্যটি আমদানির মাধ্যমে ব্যয়ের সাশ্রয় ও দক্ষতা অর্জন করবে। দুটি দেশের দুটি পণ্যের পরিপ্রেক্ষিতে তৈরীকৃত এ তত্ত্বটি জনপ্রিয় করে আরসিএ মানদণ্ডে পরিমাপ করা হয়। আর বাংলাদেশে সেখানে আরসিএ মানে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে কলা, দুধ, আঙুর, তিসি। এছাড়া যব, কপি ও ব্রকলি, সয়াবিন, লেবু ও আদার মান নিম্ন সারিতে রয়েছে। এসব কৃষিজ পণ্যে আরসিএ মান শূন্য দশমিক ১ শতাংশেরও কম। ১ শতাংশের নিচে রয়েছে বেশকিছু কৃষিজ পণ্য। এর মধ্যে পেঁপেতে শূন্য দশমিক ৯৩, আলুতে শূন্য দশমিক ৭৫, মরিচে শূন্য দশমিক ৭১। ফলে বাণিজ্য সুবিধায় পিছিয়ে রয়েছে এসব কৃষিজ পণ্য। এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, সব কৃষিজ পণ্য একই সঙ্গে উৎপাদনের প্রয়োজন নেই। কৃষকের কাছে জোর করে কোনো পণ্য উৎপাদন বাড়াতে গেলে দক্ষতার পরিচয় হবে না। এক্ষেত্রে শস্যের উৎপাদন খরচ, প্রয়োজনীয়তা ও বাণিজ্যের তুলনামূলক সুবিধা বিশ্লেষণ জরুরি। পাশাপাশি ভূপ্রাকৃতিক গঠন, বাজারদর, আবহাওয়া উপযোগিতা ও মাটির কার্যকারিতা বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। বাণিজ্যিক ও রফতানিমুখী কৃষি এগিয়ে নিতে শস্য আবাদে বহুমুখীকরণে জোর দিতে হলে অবশ্যই বাণিজ্য সুবিধাকে বিবেচনায় নিতে হবে। জানা গেছে, আরসিএ মানে ভালো অবস্থানে থাকা অন্যান্য কৃষিজ পণ্যের মধ্যে সরিষা ও রসুনে স্কোর ১০ দশমিক ৫২। এছাড়া তিলে ৪ দশমিক ৮২, তুলায় ২ দশমিক ৩৪ ও মাছে ২ দশমিক ১৮। এছাড়া মসলায় ১ দশমিক ৫৪, তামাকে ১ দশমিক ২৬, পালংশাকে ১ দশমিক শূন্য ৪। এসব পণ্য আমদানি না করে দেশেই উৎপাদনে নজর দিলে দেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। পাশাপশি উৎপাদন প্রক্রিয়া হবে দক্ষ ও কার্যকর। কৃষিজ পণ্যের আমদানি প্রতি বছরই বাড়ছে। গত অর্থবছরে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি করতে হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে তুলা। গত অর্থবছরে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার তুলা আমদানি করতে হয়েছে। এছাড়া তেল ও মসলাজাতীয় পণ্যের আমদানিও বাড়ছে। এসব পণ্য দেশে উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুল মুঈদ বণিক বার্তাকে বলেন, কৃষিজ পণ্যের উৎপাদনে আমাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাই ছিল দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। সরকারের সঠিক নীতিসহায়তা ও কার্যকর উদ্যোগের কারণে দানাদার খাদ্যে এখন আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে। এখন আমরা শস্যের বহুমুখীকরণ ছাড়াও কৃষির বাণিজ্যিকীকরণে জোর দিচ্ছি। সেখানে যেসব কৃষিজ পণ্য মূল্য সংযোজন কিংবা কৃষকের বাড়তি মুনাফা দিতে পারবে এমন শস্য আবাদে কৃষকের উৎসাহিত করা হচ্ছে। বাণিজ্য সুবিধা ছাড়াও দেশের প্রয়োজন ও চাহিদাকে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। সার্বিকভাবে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের কৃষি, বিশেষ করে শস্য খাত।

  • কৃষকের খরচ কমিয়ে আনতে গত এক দশকে সারের মূল্য কমানো হয়েছে পাঁচবার। আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর চাপ উপেক্ষা করে অব্যাহত রাখা হয়েছে ভর্তুকি। গত এক যুগে শুধু সারেই প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। ভর্তুকি নিয়ে সরকারের এ ভালো নীতির সুফল পাচ্ছে দেশের কৃষি খাত। বেড়েছে শস্যের উৎপাদন, কমেছে কৃষকের খরচের চাপ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশে বিভিন্ন শস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় দেড় কোটি টন, যা এখন বেড়ে ৭ কোটি ১৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। যদিও এ সময়ের ব্যবধানে কমেছে কৃষিজমির পরিমাণ। বাংলাদেশকে বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা প্রদানে ২০১১-১২ অর্থবছরে বেশকিছু শর্ত দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তাদের দেয়া শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল ভর্তুকি কাঠামোতে পরিবর্তন এনে বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকি কমানো।  কিন্তু আইএমএফের চাপ উপেক্ষা করে সারে ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে সরকার। গত এক দশকে পাঁচ দফা কমিয়েছে সারের মূল্য। দাম কমিয়ে ৮০ টাকার টিএসপি সার ২২, ৭০ টাকার এমওপি সার ১৫ ও ৯০ টাকার ডিএপি সার ১৬ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বর মাসেই কমানো হয়েছে ডিএপি সারের দাম। আগে এ সারের  কেজিপ্রতি মূল্য ছিল ২৫ টাকা। এখন তা ৩৬ শতাংশ কমিয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে। ডিলার পর্যায়ে বর্তমান ২৩ টাকার পরিবর্তে ১৪ টাকা কেজিতে ডিএপি সার কিনতে পারছেন কৃষক। এতে ডিএপি সারে সরকারের বছরের প্রণোদনা বাবদ খরচ হবে ৮০০ কোটি টাকা। সারে সরকারের এ ভর্তুকি সহায়তা কার্যক্রম  শস্যের উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান নীতিই হলো কৃষকের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার পাশাপাশি সারের সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করা। কৃষকের পাশে থাকতে পারলেই দেশের খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব। সে বিবেচনায় সারের দাম কমানোর মাধ্যমে ভর্তুকি সহায়তা বাড়াতে সরকার কখনই কার্পণ্য করে না। সামনের দিনেও সারের দাম সহনীয় রাখতে কৃষকবান্ধব নীতিতে অটল থাকবে সরকার। কৃষিপণ্যের বিপণন ও প্রক্রিয়াজাতে ভর্তুকি বাড়ানোসহ এর আওতা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৬৫ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকার ভর্তুকি সহায়তা দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সার বাবদ ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ৫৮ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে সারে। সব মিলিয়ে গত ১২ বছরে শুধু সারেই প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। সারের ভর্তুকি কার্যক্রমের কারণে পাঁচটি শস্যের ক্ষেত্রে গ্রস মার্জিন বা মোট আয় কী পরিমাণ হচ্ছে এবং ভর্তুকি না থাকলে কী পরিস্থিতি দাঁড়াত—এ দুইয়ের পার্থক্য উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায়। ‘বিল্ডিং রেজিলেন্স অ্যান্ড কমপিটিটিভনেস অ্যালং ভ্যালু-চেইনস ইন এগ্রি-ফুড সিস্টেম’ শীর্ষক ওই গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ভর্তুকি ছাড়া প্রতি হেক্টরে ভুট্টায় কৃষকের মোট আয় (গ্রস মার্জিন) হতো ২৯৮ ডলার, যা ভর্তুকির কারণে ৪১২ ডলারে উন্নীত হয়েছে। ফলে ভর্তুকিতে প্রায় ১১৪ ডলার বাড়তি আয় করতে পারছেন কৃষক। সয়াবিনের ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাদে প্রতি হেক্টরে কৃষকের মার্জিন হতো ৫৩ ডলার, যা ভর্তুকির কারণে ২৩৮ ডলার পাচ্ছেন কৃষক। ফলে প্রায় ১৮৫ ডলার বাড়তি আয় করতে পারছেন কৃষক। আমন ধানের ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাদে প্রতি হেক্টরে কৃষকের আয় হতো ৪০ ডলার, যা বর্তমানে ১১৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এতে প্রায় ৭৪ ডলার বাড়তি আয় হচ্ছে। আউশ ধানের ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাদে প্রতি হেক্টরে কৃষকের মার্জিন হতো ৫৩ ডলার, যা বর্তমানে ১২৬ ডলারে উন্নীত হয়েছে। ফলে ভর্তুকির কারণে প্রায় ৭৩ ডলার বাড়তি আয় করতে পারছেন কৃষক। তবে বোরো ধানে ভর্তুকি না দিলে মোট ক্ষতি হতো ১৭১ ডলার। ভর্তুকির কারণে মোট ক্ষতি ৭১ ডলারে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ফলে মোট ক্ষতি ১০০ ডলার পর্যন্ত কমানো যাচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৬ লাখ ১০ হাজার টন। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট রাসায়নিক সারের চাহিদা নিরূপণ হয় ৫৯ লাখ ৩৪ হাজার টন। এর মধ্যে ইউরিয়া ২৬ দশমিক ৫০ লাখ টন, টিএসপি ৭ দশমিক ৫০ লাখ, ডিএপি ৯ লাখ, এমওপি ৮ দশমিক ৫০ লাখ ও এমএপি শূন্য দশমিক ৫০ লাখ টন। এছাড়া অন্যান্য রাসায়নিক সারের মধ্যে জিপসাম ৪ লাখ টন, জিংক সালফেট ১ লাখ ৩৩ হাজার, অ্যামোনিয়াম সালফেট ১০ হাজার, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ৮০ হাজার ও বোরন ৪১ হাজার টন। অন্যদিকে এনপিকেএস ৭০ হাজার টন নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব সারের বাজারমূল্য থেকে অনেক মূল্যে সারের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকার ভর্তুকি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

To Top