Blog

  • রাজধানীর বাজারে ৫২ টাকার নিচে কোনো চাল মিলছে না। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় যে চাল, সেই ব্রি ধান-২৮-এর চালের কেজি গতকাল সোমবার খুচরা বাজারে ছিল ৫৫ টাকা। আর চিকন...

  • পেয়ারা উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন সপ্তম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ফলটির উৎপাদন ছাড়িয়েছে ২৪ কোটি ৪০ লাখ কেজি। প্রতি কেজি পেয়ারার ভোক্তা ও পাইকারি বাজারের গড় দাম ৬২ টাকা বিবেচনায় নিলে...

  • বিশ্বে চাল উৎপাদনকারী শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে ধান আবাদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সারের ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে প্রায় ৩১৮ কেজি সার ব্যবহার করা হয়। এই হিসাবে প্রতি...

  • ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়ায় চলতি আমন ও পরবর্তী বোরো মৌসুমে চাল উৎপাদনে কৃষকের এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ বাড়বে। কৃষি অর্থনীতিবিদরা এ তথ্য জানিয়েছেন।গত সোমবার...

  • দেশে এ বছর বোরো মৌসুম শুরুর পর পরই দেখা দিয়েছে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বোরোর খেত। সেই সঙ্গে এবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে শ্রমিক সংকট। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে পারছেন না বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক। ফলে খেতেই পড়ে থাকছে ধান। ধান খেতে নষ্ট হওয়ার কারণে হেক্টরপ্রতি ফলন কমার শঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষকরা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ব্রি) সাম্প্রতিক এক গবেষণার তথ্য বলছে, যেসব জেলায় শতকরা ২০ শতাংশের কম কৃষি শ্রমিক পরিবার রয়েছে, সেগুলো তীব্র সংকটময় পরিস্থিতিতে থাকে। মূলত এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নরসিংদী, ঝালকাঠি জেলার কৃষকদের। শতকরা ২১-২৫ শতাংশের কম কৃষি শ্রমিক পরিবার রয়েছে এমন জেলাগুলোকে সংকটপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। হাওর অঞ্চল বিশেষ করে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষক বোরো মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। এছাড়া হাওরের বাইরে সংকটপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে ফেনী, মুন্সীগঞ্জ ও পটুয়াখালী জেলা রয়েছে। এছাড়া শতকরা ২৬-৩০ শতাংশের কম কৃষি শ্রমিক পরিবার রয়েছে এমন জেলাগুলোকে মাঝারি সংকটের জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব জেলার মধ্যে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, খুলনা, বান্দরবান, কুমিল্লা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কৃষক রয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিয়োজিত অন্যান্য পেশার মানুষকে ধান কাটার কাজে নিয়োজিত করে বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। পাশাপাশি অঞ্চলভিত্তিক কৃষি শ্রমিক সংকট নিরসনে সেই অঞ্চলের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। এলাকা উপযোগী বরাদ্দকৃত কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার সময়মতো কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁঁছতে হবে। সম্ভব হলে কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পরিবহনের মাধ্যমে ধানকাটা কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়াতে হবে। এছাড়া সব এলাকায় শ্রমিক সংকট ও উৎপাদন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে কৃষি যন্ত্র বিতরণ করতে হবে। শ্রমিক সংকট থাকা জেলাগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য জেলার কৃষক পর্যাপ্ত শ্রমিক পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন বণিক বার্তার প্রতিনিধিরা। যশোর: ধান নিয়ে খুবই বিপদে আছেন বলে জানিয়েছেন যশোরের কৃষক। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে শহরতলির পুলেরহাট মাঠের ধানের জমি। তলিয়ে যাওয়া মাঠ থেকে মুঠোবাঁধা ধান তোলার সময় কৃষক নজরুল শেখ আক্ষেপ করে বলেন, ‘চাষীদের একের পর এক দুর্ভোগ লেগেই আছে। গত মৌসুমে মসুর লাগিয়েছিলাম দেড় বিঘা। বৃষ্টিতে তলিয়ে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এবার তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করলাম, বৃষ্টির কারণে সব ধান বাড়ি আনা সম্ভব হয়নি। শুকনা ধান তলিয়ে পচে যাচ্ছে। ধান, খড় সবই শেষ এবার। এখন সার-সেচ-চাষের টাকা কীভাবে শোধ করব তা ভেবে পাচ্ছি না। দুই চোখে এখন খালি অন্ধকার দেখি।’ সব মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান এ কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দীপঙ্কর দাশ বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ১১৩ টন। গতকাল পর্যন্ত ৯০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। জেলায় মোট ৯৬৫ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর নিচু এলাকার ১ হাজার ৩৩১ হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বগুড়া: জেলায় ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ফলন কমছে। এছাড়া এ অঞ্চলে রয়েছে শ্রমিক সংকট। বাম্পার ফলন ঘরে তোলার কথা থাকলেও অশনির কারণে ঝড়ো বাতাস ও টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে উঠতি বোরোর ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অশনির বৃষ্টিপাতে পানিতে লুটোপুটি খাচ্ছে জমির পাকা বোরো ধান। সেই সঙ্গে ধান কাটা শ্রমিক সংকট থাকায় সময়মতো ধান কাটতেও পারছেন না বোরা চাষীরা। এখনো প্রায় ২৫  শতাংশ জমির ধান কাটা বাকি রয়েছে। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, এমনিতেই বৈরী আবহাওয়া। তারপর শ্রমিক সংকট। সেই সঙ্গে ধানের বর্তমান বাজারদর কৃষকের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। পাঁচজন শ্রমিক দিয়ে এক বিঘা জমির ধান কাটাতে খরচ হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। ধান পেকে যাওয়ার পরও এক সপ্তাহ কাটার কাজ শুরু করা যায়নি। শ্রমিক না পাওয়ার কারণে দেরিতে ধান কাটতে হচ্ছে। এর সঙ্গে বৃষ্টি থাকায় ধান কাটার শ্রমিকরাও বেশি পারিশ্রমিক দাবি করছেন। ধানের যে ফলন হয়েছে তাতে চাষের খরচ, শ্রমিক খরচ মিটিয়ে খুব একটা আয় হবে না। বরং কেউ কেউ লোকসানে পড়বেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নওগাঁ: জেলায় চলতি মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখেছিলেন চাষীরা। এরই মধ্যে যখন মাঠে সোনালি ধানের শীষ কেবল পরিপক্ব হতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই শুরু হয় দফায় দফায় ঝড়-বৃষ্টি। প্রতিটি মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় হেলে পড়ে ধান গাছ। দ্রুত ফসল কেটে ঘরে তুলতে মরিয়া হয়ে ওঠেন চাষীরা। তবে বাইরের জেলা থেকে কৃষি শ্রমিক না আসায় এবার চরম বিপাকে পড়তে হয় তাদের। এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ী) উপপরিচালক শামছুল ওয়াদুদ বণিক বার্তাকে বলেন, দফায় দফায় ঝড়-বৃষ্টিতে এবার আমাদের অনেক মাঠের ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে। ধান পাকলেও শুরু থেকেই শ্রমিকের তীব্র সংকট ছিল। দীর্ঘদিন পাকা ধান পানিতে ডুবে থাকলেও শ্রমিকের অভাবে অনেক কৃষকই সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। এতে বেশকিছু জমির ধানে চারা গজিয়ে নষ্ট হয়েছে। এখনো বৈরী আবহাওয়া চলছে। তাই ক্ষতির পরিমাণ কমাতে দ্রুত ফসল কেটে ঘরে তুলতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে কিছু কৃষি শ্রমিক এসেছেন। এরই মধ্যে জেলার সব মাঠের ৭৫ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মাঠের সব ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছি। জয়পুরহাট: জেলায় ধান কাটা শ্রমিক সংকট এখনো কাটেনি। জেলায় গড় ৩০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। বাকি রয়েছে ৭০ ভাগ। গত দুই সপ্তাহ আগের ঝড়ে এবং ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে থাকায় ধান কাটার জন্য বাড়তি টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় জেলা থেকে জয়পুরহাটে আগত শ্রমিকরা প্রথম ধাপের ধান কেটে নিজ এলাকায় চলে যাওয়ায় আবারো নতুন করে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এবার ঝড়ের কারণে ধানের ফলনও কম হচ্ছে। বিঘাপ্রতি চার-পাঁচ মণ ফলন কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষক। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় হারভেস্টার মেশিন থাকলেও জমিতে পানি থাকার কারণে সব জমিতে মেশিন ব্যবহার করে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। জেলার কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলায় আলু উৎপাদন হওয়ায় এসব জমির ধান দেরিতে রোপণ করা হয়। ফলে এসব এলাকায় এখনো ধান কাটা সেভাবে শুরুই হয়নি। দিনাজপুর: শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত দিনাজপুরের হিলিতে মাঠের ধান পেকে গেলেও শ্রমিক সংকটের কারণে সেই ধান এখনো ঘরে তুলতে পারেননি অনেক কৃষক। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৃষ্টিপাত ও শ্রমিকদের বাড়তি মজুরির সংকট। ফলে জমি থেকে ধান কাটা-মাড়াই শেষে উল্টো লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। বৃষ্টির আগে ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি একটু কম থাকলেও এখন তা আরো বেড়ে গেছে। শুধু জমি থেকে ধান কেটে সড়কে তুলে দিতেই শ্রমিকরা বিঘাপ্রতি ৭ হাজার টাকা মজুরি দাবি করছেন। তার সঙ্গে রয়েছে পরিবহন খরচ ১ হাজার টাকা। ফলে মুনাফার বদলে লোকসান কীভাবে কমানো যায়, সেটির দিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষক। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর দেশে সার, বীজ বা কীটনাশক নিয়ে কৃষককে তেমন সংকটে পড়তে হয়নি। সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই বহাল ছিল। ফলে ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু শেষবেলায় এসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর শ্রমিক সংকট তৈরি হওয়ায় বোরো ফলন তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক। আবার হাওরে আগাম বন্যার পূর্বাভাস থাকায় সেখানে বেশি মনোযোগ দেয়া হয়েছে, যার প্রভাব গিয়ে পড়েছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে। হাওরের মতো দেশের অন্য অঞ্চলগুলোকেও গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দেন তারা।

  • জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গোটা বিশ্বেই এখন নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বেড়েছে। বাংলাদেশকেও গত চার দশকে অসংখ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী এ ৪০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে দেশের মোট ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ, বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকায়। বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বাড়ছে। গলছে মেরু অঞ্চলের বরফ। বিপত্সীমা ছাড়াচ্ছে সাগর ও নদীর পানি। তলিয়ে যাচ্ছে নিচু অঞ্চল। বাড়ছে ভারি বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপও। বসতভিটা ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর অর্থনীতিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত এরই মধ্যে বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দেশের অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণে একটি গবেষণা চালিয়েছে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস)। এর ভিত্তিতে একটি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এতে উঠে এসেছে, দেশে প্রতি বছর শুধু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির পরিমাণই দাঁড়ায় মোট জিডিপির দশমিক ৫ থেকে ১ শতাংশে। ২০৫০ সাল নাগাদ এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে জিডিপির ২ শতাংশে। এনএপি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ বছরে দেশে সুপার সাইক্লোন বেড়েছে ৬ শতাংশ। প্রতি বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে দশমিক শূন্য ১৫ সেন্টিগ্রেড হারে। বার্ষিক বৃষ্টিপাত বেড়েছে ৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার। গত কয়েক দশকে দেশে ভয়াবহ ও মারাত্মক বন্যা হয়েছে পাঁচটি। এছাড়া দেশের পাহাড়ী এলাকা ও উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোয় ঢল ও বজ্রপাতের প্রকোপ বেড়েছে। এছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে বার্ষিক ৩০৬ মিলিমিটার করে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির দিক থেকে সবচেয়ে সামনের সারিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম হলো বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত প্রশমন এবং এর সঙ্গে অভিযোজনের জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ প্রয়োজন। যথোপযুক্ত পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ না থাকলে দেশকে সুরক্ষা দেয়া কঠিন হবে। এরই মধ্যে দেশে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে শুরু করেছে। যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে সামনের দিনগুলোয় তা আরো মারাত্মক আকার নিতে পারে। সিইজিআইএসের প্রণীত এনএপিটি বাস্তবায়নে  আগামী ২৭ বছরে অন্তত ৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলার প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে তা হাজার কোটি ডলারও ছাড়াতে পারে। এ বিষয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান বলেছেন, অভিযোজন পরিকল্পনা সারাদেশকে ১১টি জোনে ভাগ করে ১৩টি জলবায়ু ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব বন্যা, খরা, লবণাক্ততা, ঘুর্ণিঝড়, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও নদীভাঙনসহ অন্যান্য দুর্যোগ। ঝুঁকিগুলো নিয়ন্ত্রণে এনএপিতে ছয়টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সংকট মোকাবেলায় ১৩টি থিমেটিক এরিয়া চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে পানি ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে কৃষি, মত্স্য ও বাস্তুসংস্থানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব এরিয়া থেকে ১০৯টি সম্ভাব্য পদক্ষেপকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫০টিকে অগ্রাধিকারযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার ১৫টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, সামনের দিনগুলোয় জলবায়ু পরিবর্তনের পূর্বের ক্ষতির তুলনায় সামনের দিনে আরো বেশি ক্ষতির শিকার হবে বাংলাদেশ। সমুদ্রের পানির উচ্চতা ৫০ সেন্টিমিটার বাড়লেই উপকূলের ১০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যাবে। লবণাক্ততা ছড়াতে পারে ৭ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত। ৯৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়লে তলিয়ে যাবে উপকূলের ১৭ শতাংশ এলাকা। লবণাক্ততা ছড়াতে পারে ১৬ হাজার ৩০০ কিলোমিটারে উন্নীত হবে। এ বিষয়ে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যারয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং এনএপি বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান ড. আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রির মধ্যে রাখার কথা বলা হলেও ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ (আইপিসিসি) বলছে, তা ৩ থেকে সাড়ে ৩ ডিগ্রিতে চলে যাবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে খাদ্য সংকট দেখা দিবে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর যে পরিবর্তন হচ্ছে তাতে উপকূলের প্রায় তিন কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কৃৃষিকাজও নানাভাবে ব্যাহত হবে। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা বেড়েছে। এছাড়া সমুদ্রের পানিও বাড়ছে। পানিতে নোনাভাব বেশি হচ্ছে। এতে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিচ্ছে। এখনই বৃষ্টির অভাবে শ্রীমঙ্গলে চায়ের উৎপাদন কমে গেছে। লালমনিরহাটে আমন ধান লাগানো যায়নি। থেমে থেমে বৃষ্টি হয় বলে আগামীতে ম্যালেরিয়া বাড়বে। এজন্য এনএপি বাস্তবায়নে এখনই মাস্টারপ্ল্যান দরকার। বরিশাল, গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, মাদারিপুর, ফরিদপুর ও শরিয়তপুর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। পোড়ানো ইটের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইটের ব্যবহার বৃদ্ধিতে পরিকল্পনা প্রয়োজন। গত বছর রংপুরে ৪৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ পরিমাণ বৃষ্টিপাত ঢাকায় হলে পুরো শহর তলিয়ে যাবে। এজন্য আলাদা জলবায়ু আইন দরকার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা আকস্মিক বন্যার শিকার হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার উপকূলীয় অঞ্চল। লোনা পানির অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের একটি মারাত্মক সমস্যা। ১৯৭৩ সনে ১৫ লাখ হেক্টর জমি মৃদু লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়, যা ১৯৯৭ সনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ হেক্টেরে। বর্তমানে এর পরিমাণ প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর। উজান থেকে পানিপ্রবাহ বাধা ও কম বৃষ্টিপাতের কারণে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত জমির পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশের মোট উপকূলীয় এলাকা প্রায় ২৫ লাখ হেক্টর। এর মধ্যে বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এর ফলে প্রতি বছর গড়ে ৩৫ লাখ টন শস্য বঞ্চিত হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চল। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীরই ক্ষতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, জলবায়ুর ঝুঁকিগুলোকে মাথায় রেখেই সামনের দিনগুলোয় আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজাতে হবে। এছাড়া মনুষ্যসৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষ করে মাটির টপ সয়েল রক্ষা করতে হবে। এজন্য ইটের পরিবর্তে ব্লক ইট ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করবে পরিকল্পনা বিভাগ। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এটি দূর করতে সমন্বিতভাবে কাজ করা হবে।

  • বৈদেশিক সহায়তাপ্রাপ্তিতে বাংলাদেশ মূলত বিশ্বব্যাংক, জাপান ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ওপর নির্ভরশীল। এর বাইরে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা জাতিসংঘের মাধ্যমেও সহায়তা এসেছে। সম্প্রতি শীর্ষ সহায়তাকারী দেশের তালিকায় যুক্ত হয়েছে রাশিয়া ও চীন। বৈদেশিক সহায়তার তালিকা করলে এ দুটি দেশ থাকবে যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, শীর্ষ দেশ হিসেবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাপানের বৈদেশিক অর্থায়ন ছাড়করণের পরিমাণ ১৯১ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ডলার। এর পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিশ্বব্যাংক। বহুপক্ষীয় সংস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সহায়তা ছাড়করণ হয়েছে ১৫৭ কোটি ৩৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ এডিবির সহায়তা ছাড়করণ হয়েছে ১২৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। চতুর্থ শীর্ষ দেশ হিসেবে এখন রাশিয়ার সহায়তার পরিমাণ ৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার এবং পঞ্চম শীর্ষ দেশ চীন থেকে ছাড়করণ হয়েছে ৫৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। মূলত দেশের বৃহৎ কয়েকটি অবকাঠামোতে দেশ দুটির অর্থায়ন এবং সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্য সরকারের বাংলাদেশে অর্থায়ন ও অনুদান সহায়তা কমে যাওয়ার কারণে এ পরিবর্তন আসছে। জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। মেয়াদকাল ধরা হয়েছে জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এর মধ্যে সরকারিভাবে মাত্র ২২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা দেয়া হবে। আর রাশিয়া থেকে বৈদেশিক ঋণ হিসেবে সহায়তা নেয়া হবে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপিতে মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ এ প্রকল্পে। যার পরিমাণ ৫৮ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ রাশিয়া ইন্টারগভর্নমেন্টাল কমিশন অন ট্রেড ইকোনমিক, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন বৈঠকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত এসেছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বিশেষ করে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ঘোড়াশালে চলমান দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উন্নয়নে জড়িত রাশিয়া। বিদ্যুতের পাশাপাশি জ্বালানি ও বিমান পরিবহন খাতে সহযোগিতা করবে দেশটি। পাশাপাশি রাশিয়ার নবটেক কোম্পানি স্বল্প সুদে এলএনজি আমদানির সুযোগ দেবে বলে একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন। এছাড়া পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে জি-টু-জির মাধ্যমে ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে চীন। সরকারিভাবে অর্থায়ন করা হবে ১৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা। তবে নতুন করে কাজ শেষ করতে আরো দেড় বছর সময় চাওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়তে পারে। অন্যদিকে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন। ফলে সামনের দিনে দ্বিপক্ষীয়ভাবে এ দুটি দেশের সঙ্গে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ আরো বাড়বে। কেননা দেশ দুটির সঙ্গে বড় ধরনের ঋণ প্রস্তাব রয়েছে। এজন্য রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ঋণ প্রস্তাব প্রতি বছরই বাড়ছে। ইআরডি বলছে, বিনিয়োগের চাহিদা মেটাতে বিদেশী সহায়তা বাড়ানো ও কার্যকর ব্যবহারে মনোযোগী হচ্ছে ইআরডি। বাজেটে বাংলাদেশের মোট সরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৮ দশমিক ১ শতাংশ। সরকারের বাজেট ঘাটতি ছিল জিডিপির ২.৫ শতাংশ। এটি নেট বৈদেশিক সহায়তার মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, পরিবহন, ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষাসহ সামাজিক খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য ইআরডি উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহ করার জন্য চেষ্টা করছে। যেহেতু কভিড-১৯ চলমান সেজন্য বাজেট সহায়তা ছাড়াও ভ্যাকসিন সহায়তা এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য প্রকল্প সহায়তার বাইরে অতিরিক্ত বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহের জন্যও বিশেষ মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে রাশিয়া ও চীনের সহায়তার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। ফলে গত ৫০ বছরের তালিকায় শীর্ষ চারে উঠে এসেছে রাশিয়া। এছাড়া পঞ্চম স্থানে থাকা ইউএন সিস্টেমের পরেই শীর্ষ ছয় নম্বরে এখন চীন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী কয়েক বছরে চীন থেকে যে পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা ছাড়করণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে তাতে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে শীর্ষ পাঁচে উঠে আসবে চীন। ১৯৭১-৭২ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের আইডিএ সহায়তা এসেছে ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। এর পরেই এডিবির সহায়তার পরিমাণ ১ হাজার ৭৫৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার এবং জাপানের বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ১ হাজার ৬১৮ কোটি ৯২ লাখ ডলার। অন্যদিকে রাশিয়ার ৪৪৪ কোটি ২০ লাখ, ইউএন সিস্টেমের মাধ্যমে ৪১৮ কোটি ৫৯ লাখ এবং চীনের বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ৩৭৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদেশী সহায়তার মোট বিতরণের পরিমাণ ছিল ৭২১ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এর মধ্যে অনুদান ৪৩ কোটি ৯৬ হাজার ডলার এবং ঋণের পরিমাণ ৬৭৮ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। গত পাঁচ অর্থবছর বা ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ৬ হাজার ১৯৯ কোটি ডলার। প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার ২৩৯ কোটি ডলার। এই পাঁচ অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তা এসেছে ৩ হাজার ১৫৬ কোটি ডলার। প্রতি বছর গড়ে যা ৬৩০ কোটি ডলার। মূলত স্বল্প আয়ের দেশের তালিকায় থাকার কারণেই সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশে বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ঋণ পাওয়া গেছে। কিন্তু নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় উন্নীত হয়ে গেলে ভবিষ্যতে ২ শতাংশের কাছাকাছি সুদের হারে ঋণ নিতে হবে। এছাড়া ম্যাচুরিটির সময় ৩৮-৪০ বছর থেকে ৩০ বছরে নেমে আসবে। গ্রেস পিরিয়ডও ১০-৬ বছর থেকে নেমে ৫ বছরে স্থির হবে। জাপানের ক্ষেত্রেও ম্যাচুরিটির সময় ৪০ বছর থেকে নেমে ৩০ বছরে এবং গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর থেকে ৫ বছরে নেমে আসবে। আর সুদের হার শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশে উন্নীত হবে। শুধু এডিবির সুদের হার ও সময়গুলো ঠিক থাকবে।  তাই ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে এখন থেকেই কৌশলী হতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডির) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে প্রয়োজনীয়তার নিরিখেই রাশিয়া ও চীন থেকে সহায়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মাধ্যমে ঋণ চাহিদা ও বৈদেশিক সহায়তা ছাড়করণের ক্ষেত্রে একটি বৈচিত্র্য এসেছে। এছাড়া রাশিয়া ও চীনের সহায়তা দেয়ার সক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক ভালো। ফলে দেশ দুটি থেকে অর্থায়নের নির্ভরতা বাড়ছে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ঋণ ও সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বিশেষ করে গ্রেস পিরিয়ড ও ম্যাচুরিটির সময়, সুদের হার, শর্ত ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। বৈদেশিক সহায়তা সঠিকভাবে সমন্বয় করতে না পারলে তা দেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তিনি আরো বলেন, বৈদেশিক ঋণ নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রাধিকার খাত ঠিক করতে না পারা, প্রকল্পের ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে না পারলে এসব অবকাঠামো থেকে ভবিষ্যতে আয় (আইআরআর) কমে যাবে। ফলে বৈদেশিক ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে কৌশলী হতে হবে। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে বৈচিত্র্যের কথা বললেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলমও। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, দেশ দুটি থেকে বৈদেশিক সহায়তা নেয়ার মাধ্যমে ঋণ গ্রহণে এখন আমরা আরো বেশি দরকষাকষি করতে পারছি। কেউ আমাদের ওপর আর শর্ত চাপিয়ে দিতে পারবে না। রাশিয়া ও চীনের সক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের ওপর আস্থাও এসেছে। সে কারণেই তারা ঋণ দিচ্ছে ও অর্থায়ন করছে। এটি অর্থনৈতিক বাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের আরো আর্থিক ও বাজেট সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। যেহেতু ঋণের দায় এখনো অনেক কম ফলে স্বল্প সুদের এবং তুলনামলক কম শর্তারোপের বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করার সুযোগ রয়েছে।

  • প্রান্তিক চাষীদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রতি বছর ধান ও চাল সংগ্রহ করে সরকার। আগে আমন মৌসুমে শুধু চাল সংগ্রহ করা হতো। ২০১৯ সাল থেকে এ মৌসুমে চালের পাশাপাশি ধানও সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত দুই বছর ধানের সংগ্রহ ভালো হলেও চলতি বছর তা ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আমন ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার ৭২ শতাংশই অর্জিত হয়নি। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ টন। সেখানে মাত্র ৮৪ হাজার ৪৭০ টন অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। ফলে ৭২ শতাংশই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে ৭ লাখ ২০ হাজার টন চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৭ লাখ ১২ হাজার টন। ফলে চালের ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। সব মিলিয়ে ১০ লাখ ২০ হাজার টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৭ লাখ ৯৬ হাজার টন। অর্থাৎ ধান-চাল মিলিয়ে প্রায় ৭৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ২২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। ধানের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার পেছনে কৃষককে সঠিক দাম না দেয়াটাই প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে আমন মৌসুম। এ মৌসুমে ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। এক্ষেত্রে মিলারদের চালের দাম ৪ টাকা বাড়ানো হলেও কৃষকের ধানের দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র ১ টাকা। আমন ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি কেজি ২৭ টাকা, চালের মূল্য প্রতি কেজি ৪০ টাকা। আবার ধানের দাম বাজারের তুলনায় কম থাকায় কৃষকরা বাজারে ধান বিক্রিতেই আগ্রহী হয়েছেন। এছাড়া ধান বিক্রির সময় খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অনিয়মসহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতাও কৃষকদের নিরুৎসাহিত করেছে। এসব কারণেই শেষ হওয়া আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২২ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। যশোর জেলা খাদ্য বিভাগের তথ্য বলছে, সরকারের খাদ্যগুদামে ধান দেননি যশোরের কৃষকরা। ফলে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাড়ে ১৫ শতাংশ ধান সংগ্রহ হয়। তবে রাইস মিল মালিকরা চুক্তিবদ্ধ থাকায় চাল সংগ্রহ হয়েছে শতভাগ। ২০২১-২২ অর্থবছরে যশোরে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৬৫৩ টন। শতভাগ চাল সরবরাহ করেছেন মিলাররা। আর ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ১৫৫ টন। যার মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ২৭০ টন। এ বিষয়ে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার মাটিকুমড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা জানান, সরকারের দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম কিছুটা বেশি। আবার সরকারের খাদ্যগুদামগুলোতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। যে কারণে আমরা সরকারকে ধান দিইনি। যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্য নন্দ কুণ্ডু জানান, ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর আমাদের ধান-চাল সংগ্রহ শুরু করা হয়। ২৫৯ জন মিলারের সঙ্গে চুক্তি ছিল। তারা শতভাগ চাল সরবরাহ করেছেন। তবে বাজারে ধানের দাম সরকারের সংগ্রহের দাম প্রায় এক হওয়ায় আমাদের ধান দিতে অনাগ্রহ দেখিয়েছেন কৃষক। যে কারণে ধান সংগ্রহ হয়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশ। রংপুর জেলায় ধান সংগ্রহ পরিস্থিতি আরো খারাপ। জেলাটি লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশও অর্জন করতে পারেনি। এমনকি বেশ কয়েকটি উপজেলায় কোনো ধানই সংগ্রহ করা যায়নি। আমন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে রংপুর জেলায় ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩২ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার ১১৭ টন কম। তবে মিলাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে চাল প্রদান করেছেন। চাল প্রদানের জন্য এবার জেলায় ৭৭৫ জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১০ হাজার ১৪৯ টন ধান এবং ২৬ হাজার ৮৩৪ দশমিক ৯১০ টন সিদ্ধ চালের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রংপুর সদর, পীরগাছা, গঙ্গাচড়া ও শঠিবাড়ী উপজেলায় কোনো ধান সংগ্রহ হয়নি। বদরগঞ্জ উপজেলায় ধান সংগ্রহ হয়েছে ২৪ টন, পীরগঞ্জে ধান সংগ্রহ হয়েছে এক টন। ভেন্ডামারীতে (এলএসডি) ধান সংগ্রহ হয়েছে এক টন, তারাগঞ্জে ধান সংগ্রহ হয়েছে তিন টন, কাউনিয়ায় ধান সংগ্রহ হয়েছে তিন টন। রংপুরের মিলার ও রংপুর সদর উপজেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সামসুল আলম বাবু বলেন, আমন মৌসুমে দুই হাজার টন চাল তিনি নিজে দিয়েছেন। এবার সরকার চালের যে রেট দিয়েছে, তাতে মিলারদের মোটামুটি লাভ হয়েছে। রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রিয়াজুর রহমান রাজু বলেন, ধান কম সংগ্রহের বেশকিছু কারণ রয়েছে। এবার ধানের বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় কৃষকরা বাড়ি থেকে সরাসরি ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পেরেছেন। তারা খাদ্য বিভাগে ধান প্রদানে আগ্রহ দেখাননি। তাছাড়া শতকরা ১৪ ভাগ আর্দ্রতার ঊর্ধ্বে কোনো ধান সংগ্রহ করা যাবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ আছে। অথচ বাজারে মৌসুমের শুরুর দিকে শতকরা ২০ ভাগ পর্যন্ত আর্দ্রতাযুক্ত ধানও কেনাবেচা হয়েছে।

  • সবশেষ আমন মৌসুমে দেশে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারের গুদামে বর্তমানে ১৭ লাখ টনের বেশি চাল মজুদ রয়েছে, যা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সরকারের চালের মজুদের রেকর্ড। এর পরও বাজারে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসছে না। সাধারণ মানের মোটা চালের দামও এখন অনেক মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। একটি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের জানুয়ারির খুচরা পর্যায়ের গড় দামের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক কৃষি বিভাগ ইউএসডিএ প্রকাশিত গ্রেইন অ্যান্ড ফিড আপডেট শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে খুচরা বাজারে সাধারণ মানের (মোটা চাল) প্রতি কেজি চালের গড় দাম ছিল ৩২ টাকার কিছু বেশি। সেই চালের দাম এ বছর হয়েছে ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাত্ দুই বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। অথচ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে সাধারণ মানের চালের প্রতি কেজিতে গড় দাম ছিল ৩৬ টাকা। সেটি বেড়ে ২০১৮ সালে ৪৭ টাকার বেশি ছাড়িয়ে যায়। কয়েক দফা ওঠানামার পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সর্বনিম্ন পর্যায়ে আসে। এরপর আবারো বাড়তে থাকে চালের দাম। সেই বছর নভেম্বরেই ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের গড় দাম ৪৮ টাকা ছাড়িয়ে যায়। গত বছরের মে ও সেপ্টেম্বরে সাধারণ মানের চালের দাম ৪৯ টাকায় উন্নীত হয়, যা জানুয়ারিতে ৪৭ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে আসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর সবচেয়ে বেশি অভিঘাত পড়ে। চালের মূল্যস্ফীতি দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় কমিয়ে দেয়। আর কভিডকালে এ মূল্যস্ফীতি দ্বিমাত্রিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সরকারের দুর্বল মজুদ ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থায় অপর্যাপ্ততার কারণে বাজারের নিয়ন্ত্রকসংশ্লিষ্টরা সুযোগ নিচ্ছেন। আমদানি ও অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের মাধ্যমে চালের মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাজারে চালের সরবরাহে সংকট তৈরি না হলেও দাম অস্থিতিশীল। মূলত বিভিন্ন মধ্যস্বত্বভোগীদের অনিয়ন্ত্রিত উত্থান, কার্যকর ও দক্ষ সরবরাহ চেইন না থাকা, চালের মজুদ ধারাবাহিকভাবে উচ্চপর্যায়ে না রাখা ও মনিটরিংয়ের অভাবে চালের বাজারে দাম অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৪৪-৪৮ টাকা। অন্যদিকে ভালো মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৮ টাকায়। সরকারের শুল্ক সুবিধার মাধ্যমে চাল আমদানি করা, সরকারের মজুদ বেশি থাকা সত্ত্বেও চালের দাম খুব বেশি না কমার পেছনে মিলার ও ব্যবসায়ীদের একচ্ছত্র প্রভাবকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ইউএনডিপির অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের মজুদ বেড়েছে। সরবরাহ বাড়াতে শুল্ক কমানো হয়েছে। এসব নানা উদ্যোগ নিয়েও বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। দেশের বড় ৫০টি অটো রাইস মিলের হাতেই থাকে বেশির ভাগ ধান-চালের মজুদ। তারা প্রচলিত আইন না ভেঙেই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। ফলে মজুদ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। স্বাভাবিক আইনে অটো রাইস মিলগুলো চলার মতো ধান দেশে আছে কিনা সেটি ভাবতে হবে। ফলে কয়টা অটো রাইস মিলকে অনুমোদন দেয়া হবে এবং এসব মিলের উত্পাদন সক্ষমতা কতটুকু হবে, সে বিষয়ে সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তা না হলে কোনো ধরনের আইনের ব্যত্যয় না ঘটিয়েই চালের সব নিয়ন্ত্রণ এদের হাতে চলে যাবে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত বছরের ১২ আগস্ট চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এ সুবিধা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দেয়া হয়েছিল। যদিও চাল আমদানিতে উচ্চ শুল্ক বিরাজ করা হয়েছিল দেশীয় কৃষকদের সুবিধার জন্য। তবে চালের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্ব্বর বেসরকারিভাবে চালের আমদানি শুল্ক কমানোর অনুমতি দেয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শুল্কহার ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এরপর দেশে চালের আমদানি বেড়েছে ব্যাপক হারে। ২০২০-২১ অর্থবছরে চালের আমদানি হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন। এছাড়া চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চালের আমদানি হয়েছে ৯ লাখ ২৪ হাজার টন। এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল বণিক বার্তাকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে চালের দাম নির্ধারণ ও বিপণন প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্বভোগী বিশেষ করে মিলাররা ভীষণ শক্তিশালী ও পারদর্শী। কেননা বাজার তৈরি ও নিয়ন্ত্রণে কৃষকের কোনো ধরনের সাংগঠনিক সক্ষমতা নেই। সরকারের কর্তৃপক্ষ হিসেবে খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই পর্যাপ্ত দক্ষতা ও হাতিয়ার। তাই সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। চালের সরবরাহ চেইনে আরো দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। পাশাপাশি কৃষকের মজুদ ক্ষমতা বাড়ানো ও তথ্য সরবরাহের ওপরও জোর দেয়ার কথা বলেন। বিভিন্ন মাধ্যম সঠিক নীতির অভাবে চাল কেনার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হতে দেখা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, বাজার থেকে ধান না কেনার কারণে ধানের বাজারের একচ্ছত্র আধিপত্য মিলারদের কাছেই তুলে দেয়া হয়। ধানের এত বড় বাজার এককভাবে ব্যবসায়ী ও মিলারদের কাছে রাখা মোটেও যৌক্তিক নয়। সরবরাহ চেইনের সমস্যাগুলো দূর করার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এসব দূর হলে মধ্যস্বত্বভোগীরা অযৌক্তিক আচরণ করতে পারবে না। এজন্য সরকারের মজুদ সক্ষমতা বাড়ানো, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার প্রচলন করতে হবে। পাশাপাশি চিকন ও মোটা দানার চালের জন্য সরকারের আলাদা ন্যূনতম সহায়তা মূল্য (এমএসপি) ঘোষণা করা প্রয়োজন। খাদ্য অধিদপ্তর যেন মোট উত্পাদনের প্রায় ১০ শতাংশ সংগ্রহ করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। আবার মিলাররা তাদের মুনাফা দেখানোর ক্ষেত্রে অনেক সময় উপজাত দ্রব্য ভালো দামে বিক্রি করলেও সেটির হিসাব না দেখিয়ে বলে থাকেন তাদের মুনাফা হচ্ছে না। এর মাধ্যমে তারা সরকারের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেন। এর আগে গত মঙ্গলবার রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবৈধ মজুদদারি রোধে করণীয় ও বাজার তদারকি-সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ার করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। বাজারে পর্যাপ্ত চাল থাকা ও সরকারের কাছে মজুদ থাকা সত্ত্বেও চালের দাম বাড়ানো যৌক্তিক নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। মিলারদের সতর্ক করে তিনি বলেন, গত বছর আম্পানে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তখন চালের দাম বাড়েনি। অথচ ভালো ফলন ও আমনের ভরা মৌসুমে দাম বাড়ছে। চালের দাম যেন না বাড়ে তা নিশ্চিত করতে আপনাদের ভূমিকা দেখতে চাই। শুধু মুনাফার উদ্দেশ্যে ব্যবসা না করে ভোক্তাদের স্বস্তি দিন। যারা ভাবছেন চাল ধরে রেখে বেশি মুনাফা করবেন তা হতে দেয়া হবে না। প্রয়োজন হলে চাল আমদানি করা হবে। আমাদের ফাইল রেডি আছে। মিল মালিকরা কী পরিমাণ ধান কিনছেন, স্টক করছেন ও ক্রাশিং করছেন তার হিসাব করছি আমরা। সে অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • লবণ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। কয়েক বছর ধরেই দেশে বছরে ১৬-১৯ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়। যার সিংহভাগই আসে সমুদ্র উপকূলের জমি থেকে। তবে বাংলাদেশে উৎপাদিত লবণে পাওয়া গেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায়, এ লবণের প্রতি কেজিতে গড়ে প্রায় ২ হাজার ৬৭৬টি মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। সেখানে বলা হয়, দেশের মানুষ যে হারে লবণ গ্রহণ করে তাতে প্রতি বছর একজন মানুষ গড়ে প্রায় ১৩ হাজার ৮৮টি মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করে। ফলে এ বিপুল পরিমাণ লবণের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ‘প্রোলিফারেশন অব মাইক্রোপ্লাস্টিক ইন কমার্শিয়াল সি সল্টস ফ্রম দি ওয়ার্ল্ড লংগেস সি বিচ অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। এ গবেষণায় দেশে বাণিজ্যিকভাবে বিপণন হয় এমন ১৩টি ব্র্যান্ডের লবণের বিভিন্ন পরিমাণ নিয়ে পরীক্ষাগারে যাচাই-বাছাই করা হয়। এর মধ্যে ১০টি হলো দেশের স্বনামধন্য কোম্পানির ও তিনটি স্থানীয় পর্যায়ের রিফাইনারির। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণা শেষে দেখা যায়, দেশের উৎপাদিত লবণে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি এত বেশি যে, বাছাইকৃত দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ দেশ বাংলাদেশ। গড়ে প্রতি কেজি লবণে ২ হাজার ৬৭৬ মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেলেও বেশকিছু লবণে এর চেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে। মাইক্রোপ্লাস্টিক মূলত প্লাস্টিকেরই ক্ষুদ্র অংশ, যেটি আকারে দুই থেকে পাঁচ মাইক্রোমিটার হয়ে থাকে। সাধারণত নিত্যব্যবহার্য প্লাস্টিক বর্জ্য তাপমাত্রা, অণুজীব ও অন্যান্য কারণে ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতিসংঘ পরিবেশ সম্মেলনে সামুদ্রিক প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণে শীর্ষ ১০ জরুরি পরিবেশগত সমস্যাগুলোর একটি হিসেবে প্লাস্টিককে তালিকাভুক্ত করা হয়। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় জাতিসংঘ পরিবেশ সম্মেলনে পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশবিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তর বৈজ্ঞানিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিককে। বাংলাদেশে পরীক্ষার জন্য ব্যবহূত নমুনায় সর্বনিম্ন ৩৯০ ও সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৪০০ মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়। দেশের ভালো ব্র্যান্ডের লবণেও উচ্চমাত্রায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এ উচ্চ উপস্থিতির মূল কারণ সমুদ্রে অতিমাত্রায় প্লাস্টিকের দূষণ ও দেশে প্লাস্টিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার। এছাড়া লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চলে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহারও লবণে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। সমুদ্র উপকূলে পর্যটকদের ব্যবহূত প্লাস্টিক সামগ্রীও লবণের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ বিষয়ে গবেষণা দলের প্রধান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শফি এম তারেক বণিক বার্তাকে বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি এখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। লবণ থেকে শুরু করে মাছের পেটেও এর উপস্থিতি মিলছে। মানুষ যেখানেই প্লাস্টিকের দূষণ করুক না কেন, তা এক পর্যায়ে সাগরে গিয়ে পৌঁছায়। এটি পানির স্রোত ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অনেকদিন ধরে ভাঙে। ভাঙা অংশগুলো আবার সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ভেঙে আরো ক্ষুদ্র হয়। তখন এগুলো ন্যানো, ম্যাক্রো ও মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। এ ভাঙা অংশ থেকে বিসফিনলে নামের রাসায়নিক দ্রব্য নির্গত হয়, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। স্বল্প সময়ের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক দেশের স্বাস্থ্য সমস্যার অন্যতম ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করেন পরিবেশবিজ্ঞানের এ অধ্যাপক। তাই দ্রুত প্লাস্টিক দূষণের হার শূন্যে নামিয়ে আনার ওপর জোর দেন তিনি। পাশাপাশি লবণ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর জন্য মাইক্রোপ্লাস্টিক অপসারণ করতে পারে এমন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো ও নীতি কার্যক্রম প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। গবেষণাটির তথ্য নিয়ে লবণ মিল মালিক সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দিতে রাজি হননি কেউ। সমিতির সদস্যরা বলেছেন, কোম্পানিগুলো বিএসটিআইয়ের মানদণ্ড অনুসারে লবণ উৎপাদন ও বিপণন করছে। তবে বিএসটিআইয়ের মানদণ্ডে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সহনীয় মাত্রার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। যদি কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়, তাহলে তারা সেগুলো পরিপালন করবেন। জানা গেছে, সারা বিশ্বে গড়ে ৩৬ কোটি টন প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। বিশ্বব্যাংকের ‘টুয়ার্ডস এ মাল্টিসেক্টরাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর সাসটেইনেবল প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে বার্ষিক মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ২০০৫ সালে ছিল ৩ দশমিক শূন্য ১ কেজি, যা ২০২০ সালে ৩ গুণ বেড়ে ৯ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা শহরে জনপ্রতি প্লাস্টিকের ব্যবহার ২২ কেজি ৫০০ গ্রাম, যা ২০০৫ সালে ছিল ৯ কেজি ২০০ গ্রাম। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্লাস্টিক মাটিতে মিশতে সময় লাগে প্রায় ৪০০ বছর। ফলে এতে একদিকে যেমন মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়, অন্যদিকে এটি ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠের পানির সঙ্গে মিশে পানিকে দূষিত করছে। এর মাধ্যমে এসব প্লাস্টিক মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। পরিবেশের প্রতিটি উপাদানের সঙ্গে ধীরে ধীরে মিশছে মাইক্রোপ্লাস্টিক, যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে গোটা প্রাণিজগতে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণে ক্যান্সার, হরমোনের তারতম্য, প্রজনন প্রক্রিয়ায় বাধাসহ মারাত্মক সব ক্ষতি হচ্ছে। এ ভয়াবহ দূষণের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায় থেকেই বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, যে কয়টি উপাদান মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করে, তার মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক অন্যতম। বাতাস ও পানির মাধ্যমেও মানবদেহে এ প্লাস্টিক প্রবেশ করে। মাছেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে। দেশের সব লবণে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়াকে ইচ্ছাকৃত বলে মনে করছেন না এ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এটা অতিক্ষুদ্র একটি পরিমাণ। এতে লবণের ওজনে তেমন তারতম্য হবে না। এ ধরনের প্লাস্টিক মানুষের পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে প্রবেশ করে যকৃৎ, ফুসফুসসহ অন্যান্য অঙ্গে বৈকল্য তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি হজমে প্রতিবন্ধকতা, নারী ও পুরুষের বন্ধ্যত্বও তৈরি করতে পারে। কারণ প্লাস্টিক মানবদেহে হরমোনের ভারসাম্যকে বাধাগ্রস্ত করে। দূষিত বাতাসের মাধ্যমেও প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে দেশে লবণের উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১৬-১৯ লাখ টন। লবণ চাষে জড়িত ২৮-৩০ হাজার কৃষক। করোনাকালে কিছুটা ভাটা পড়লেও সম্প্রতি গড়ে প্রতি বছর ৫৭-৬৫ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হয়। গত বছর ৬০ হাজার ৭৯৬ একর জমিতে লবণ চাষ হয়েছে। এ বিপুল পরিমাণ লবণেই রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি। জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে লবণের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় কয়েক বছর আগে বিএসটিআই ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি পণ্য নিম্নমানের পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এ ৫২টি খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এসব পণ্যের মধ্যে নয়টি লবণ কোম্পানিও ছিল। আবার বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একটি যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও অণুজীবের পেটে ক্ষুদ্র আকারের মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। শুধু রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টন বর্জ্য হচ্ছে, যার ১০ শতাংশই প্লাস্টিক। এসবের মাত্র ৪৮ শতাংশ ল্যান্ডফিল্ডে যাচ্ছে, ৩৭ শতাংশ পুনর্ব্যবহার হচ্ছে, ১২ শতাংশ প্লাস্টিক খাল ও নদীতে এবং ৩ শতাংশ ড্রেন ও খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে। ফলে অবারিতভাবে প্লাস্টিক মিশছে পরিবেশে, যা মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে অনেক মাত্রায়। বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বুশরা নিশাত বলেন, দেশের শহরাঞ্চলে প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। বিশেষ বিশেষ এলাকায় এর ব্যবহার বেশি হচ্ছে। সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে এ বৃদ্ধি উদ্বেগের কোনো কারণ হতো না। ইউরোপের দেশগুলোতে গড় মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেক বেশি হলেও সেগুলো সঠিকভাবে পুনর্ব্যবহার ও যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্লাস্টিক। বাংলাদেশ প্লাস্টিক দূষণের শিকার হওয়া দেশগুলোর তালিকায় সবচেয়ে উপরে থাকা দেশের অন্যতম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিক বর্জ্যের অব্যবস্থাপনাই এর জন্য দায়ী। প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হলে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে বলেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আলোচনায় উঠে এসেছে। সে অনুযায়ী সরকারকে পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ ও তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

To Top