কুমিল্লার দাউদকান্দি কামাল পোলট্রি খামারের স্বত্বাধিকারী কাজী মুস্তাফা কামাল। ২০১০ সাল থেকে মুরগি উৎপাদন করছেন তিনি। করোনার আগেও প্রতি চালানে চার হাজারের বেশি মুরগি উৎপাদন করতেন। গত বছরের শুরুতে তিন হাজার মুরগি উৎপাদন করেছেন। এখন সেটি দেড় হাজারে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, ‘একটি মুরগি পালন করতে প্রায় দুই শ টাকার খাবার প্রয়োজন হচ্ছে। আগে সেটি দেড় শ টাকায় সেটা সম্ভব ছিল। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে এক দিনের বাচ্চাসহ সব কিছুর দাম বাড়ায় খামারে মুরগি তোলা কমিয়েছেন। সম্প্রতি মুরগি থেকে তেমন মুনাফাও থাকছে না। ফলে আগামী চালানে মুরগি উৎপাদন বন্ধ করব।’
বাজারে ডিম ও মুরগির মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিম ও মুরগি উৎপাদনকারী খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মহসিন কালের কণ্ঠকে বলেন, পোলট্রি উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ছোট খামারিরা উৎপাদন খরচ পোষাতে পারছে না। দুই মাস ধরেই ক্ষুদ্র ও ছোট খামার বন্ধ হচ্ছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সামনে আরো খামার বন্ধ হবে। খামারিদের রক্ষা করতে হলে পশুখাদ্য ও উপকরণের দাম সহনীয় মাত্রায় আনার উদ্যোগ নিতে হবে। বাজার তদারকি আরো বাড়াতে হবে।
এ বিষয়ে আফতাব বহুমুখী ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির প্রভাব থেকেও বের হতে পারছে না দেশীয় উদ্যোক্তারা। এর সঙ্গে ডলারের কারণে অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে পোলট্রি উপকরণ আমদানি করতে হচ্ছে। পোলট্রিশিল্প চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ ভুট্টা ও ৯০ শতাংশ সয়াবিন আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়। কিন্তু সেসব আমদানি ব্যয় নানা কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁচামাল আমদানির জন্য জাহাজভাড়াও ব্যাপক হারে বেড়েছে। সেই তুলনায় পশুখাদ্যের দাম বাজারে বৃদ্ধি পায়নি। এতে গত দুই মাসের ব্যবধানে দেশের অনেক কম্পানি পশুখাদ্য উৎপাদন ছেড়ে দিয়েছে।
এই খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশে বর্তমানে ছোট বড় প্রায় ২৫০টি ফিড মিল রয়েছে। পশুখাদ্যের অন্যতম উপকরণ ভুট্টা। চাহিদার অর্ধেক পূরণ হয় দেশে উৎপাদিত ভুট্টা থেকে। বাকি অর্ধেকের চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব হয়। দেশে ভুট্টা উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, পঞ্চগড় ও নীলফামারী নাম করেছে। রংপুর, ঝিনাইদহ, মানিকগঞ্জ ও গাইবান্ধা জেলায় আবাদ বাড়ছে। ভুট্টার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে দেশের সম্ভাবনাময় অঞ্চলগুলোতে বিশেষ করে চরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দেশে মাংসের জন্য একটি মুরগি উৎপাদন করতে গেলে প্রায় দুই কেজি খাবার খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়। কিন্তু খাবারের মান উন্নত করার মাধ্যমে এটি আধাকেজিতে নামিয়ে আনতে হবে। পশুখাদ্য শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ভুট্টার সরবরাহ দেশেই করার পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। তাহলে পশুখাদ্যের দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে।’