প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বড় হচ্ছে রাজশাহীর টমেটোর বাজার

November 16, 2025 0 Comments

 

সাহানোয়ার সাইদ শাহীন :

দেশে টমেটোর উৎপাদন এখন প্রায় পাঁচ লাখ টন। মোট উৎপাদিত টমেটোর প্রায় ২৪ শতাংশ জোগান দিচ্ছে রাজশাহী বিভাগ। এ অঞ্চলে দেশের শীর্ষস্থানীয় গ্রুপ প্রাণের প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে ওঠার কারণে টমেটোর উৎপাদন বাড়ছে দ্রুত হারে। প্রতিষ্ঠানটি টমেটো হতে নানা প্রক্রিয়ায় পণ্য বিশেষ করে টমেটো পেস্ট, কেচাপ, সস উৎপাদনের জন্য বেশির ভাগ টমেটো সংগ্রহ করছে রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে।

 

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ সুবিধার অভাবে প্রতিবছর ২০-৩৫ শতাংশ ফল ও সবজি নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সে জন্য উন্নত প্যাকেজিং ও বিপণন সুবিধা দিতে ২০১০ সাল থেকে রাজশাহী অঞ্চলে টমেটোর জন্য চুক্তিভিত্তিক আবাদ শুরু করে প্রাণ। প্রতিষ্ঠানটির ১০ হাজার ৫০০ চুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রায় দুই হাজার ৮০০ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন।

 

চলতি বছর প্রতিষ্ঠানটি ২২ হাজার টন টমেটো সংগ্রহ করতে পারে। গত বছরে যা ছিল ২০ হাজার টন। চুক্তিভিত্তিক কৃষকরা বিঘাপ্রতি গড়ে পাঁচ-ছয় টন টমেটোর ফলন পেয়ে থাকেন। এ অঞ্চলে কৃষকদের পোস্ট হারভেস্ট লস খুব কম।

অন্যদিকে ভালো দাম পাওয়ার কারণে কৃষকদের মুনাফা সর্বোচ্চ থাকে। এ দুয়ের প্রভাবে রাজশাহী অঞ্চলে টমেটোর আবাদ ও উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রাণের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও এসব টমেটো তারা খোলাবাজারেও বিক্রি করতে পারেন। মৌসুমের শুরুতে তারা খোলাবাজারে বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন। এরপর প্রাণের কাছে বিক্রি করেন।

 

সব মিলিয়ে প্রতি মৌসুমে বিঘাপ্রতি তাদের টমেটো বিক্রি হয় ৬০-৭০ হাজার টাকায়। কৃষকের বিঘাপ্রতি মুনাফা ন্যূনতম ৩০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, চুক্তিভিত্তিক চাষের আওতায় কৃষকদের আগে থেকেই শতভাগ পণ্য ক্রয়ের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। বাজারমূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে প্রাণ টমেটো ক্রয় করে।

 

প্রাণ চুক্তিভিত্তিক চাষিদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে বাধ্য থাকলেও চাষিদের ক্ষেত্রে প্রাণের কাছে পণ্য বিক্রয়ের বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে প্রান্তিক চাষিরা প্রাণের চুক্তির অধীনে আসায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন না। টমেটো থেকে উৎপাদিত সস-কেচাপ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় ও প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশে বর্তমানে সস, কেচাপ এবং টমেটো পেস্টের বাজার বার্ষিক ৬০০ কোটি টাকার। এই বাজার বছরে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে।

 

এ বিষয়ে প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এ কে এম মইনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে সস-কেচাপের বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রাণ। বছরে ৩০ হাজার টন টমেটো সস উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে প্রাণ গ্রুপের। দেশের বাইরেও প্রাণের সস্-কেচাপের ভালো চাহিদা রয়েছে এবং ক্রমেই বাজার প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমানে প্রাণের সস্-কেচাপ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, মালয়েশিয়াসহ ২০টি দেশে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে।

 

তবে সম্প্রতি ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর ফলে এসব পণ্যের দাম বেড়ে গেলে অনেকেই পণ্য ক্রয় থেকে বিরত থাকবেন। এ ছাড়া এর প্রভাবে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে প্রচুর শ্রমিকের জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে আসবে।

 

এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ৯ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে দেয়। পণ্যসমূহের ওপর মূসক ৫% থেকে বাড়িয়ে ১৫% করা হয়েছে। এর ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। দাম বাড়লে ক্রেতারা এসব পণ্য কম ভোগ করবেন বা ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে পারেন। এর ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কেননা এর ফলে এসব প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরিতে যেসব কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, তার চাহিদা কমার শঙ্কা রয়েছে। চাহিদা কমলে এসব কৃষিজ পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কৃষকরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

Leave A Comment

To Top