গ্রামের ১৫% পরিবারের দখলে ৬৬% আবাদি জমি

November 15, 2025 0 Comments

 

সাহানোয়ার সাইদ শাহীন :

গ্রামীণ কৃষি খাতে নিয়োজিত বেশির ভাগ পরিবারই এখন ভূমিহীন। ৫৬ শতাংশ গ্রামীণ পরিবারের কোনো জমি নেই। সবচেয়ে বেশি ভূমিহীন পরিবার সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে। তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে কম ভূমিহীন পরিবার খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে।

 

তবে দেশের গ্রামীণ পরিবারগুলোর শীর্ষ ১৫ শতাংশ পরিবারের দখলে রয়েছে ৬৬ শতাংশ কৃষিজমি।
ভূমিবণ্টন ব্যবস্থার এই করুণ চিত্র উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইএফপিআরআই) এক গবেষণা প্রতিবেদনে। ‘ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন বাংলাদেশ : এভিডেন্স বেইসড স্ট্র্যাটেজিস ফর অ্যাডভান্সমেন্ট’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন খুব শিগগির অবমুক্ত করা হবে। কালের কণ্ঠের কাছে পুরো গবেষণা প্রতিবেদনটি এসেছে।

 

এ বিষয়ে আইএফপিআরআইয়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. আখতার আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার সব রূপান্তর ও প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলো তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। গবেষণাটি তথ্য ও উপাত্তভিত্তিক বিধায় এটি নীতিকাঠামো তৈরিতে সহায়ক হবে। আমাদের এই গবেষণায় দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন অর্থবহভাবে তুলে আনা হয়েছে।’

গবেষণা প্রতিবেদনটির মতে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের যথাক্রমে ৬৭.৮ ও ৬৪.৯ শতাংশ পরিবারের কোনো ভূমি নেই।

 

এ ছাড়া ঢাকা বিভাগের ৫৫ শতাংশ গ্রামীণ পরিবারের কোনো ভূমি নেই। অন্যদিকে রংপুর ও বরিশাল বিভাগের ৫৪.৬ শতাংশ পরিবারের কোনো ভূমি নেই। রাজশাহী বিভাগের ৫২.১ এবং খুলনা বিভাগের ৪৭ শতাংশ পরিবারের কোনো ভূমি নেই।
কৃষিজমি গুটিকয়েক পরিবারের হাতে কুক্ষিগত হচ্ছে। নিচের ২৫ শতাংশ পরিবারের কাছে মাত্র ৩.৮ শতাংশ কৃষিজমি রয়েছে।

 

গ্রামীণ এলাকার ওপরের দিকে থাকা ৫ শতাংশ পরিবারের কাছে গ্রামীণ অঞ্চলের ২৬.৪ শতাংশ আবাদি জমি রয়েছে। এরপর ওপরের দিকের বাকি ১০ শতাংশ পরিবারের কাছে ৩৯.৭ শতাংশ আবাদি জমি রয়েছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, গ্রামের শীর্ষ ১৫ শতাংশ পরিবারের কাছে দেশের গ্রামীণ এলাকার ৬৬.১ শতাংশ কৃষিজমি রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় আইনি সহায়তা না থাকায় মালিকানায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের দুর্বলতাও কাজ করছে। তবে ভূমি সংস্কারকে এগিয়ে নিতে হলে জমির মালিকানা ও রেকর্ড ব্যবস্থাকে ডিজিটাইজড করতে হবে।

 

একদিকে ভূমিহীন কৃষক বাড়ছে, তেমনি কৃষি ও আবাদি জমি কিছু পরিবারের হাতে কুক্ষিগত হচ্ছে। দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার এই পরিবর্তন খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

 

বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুরশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার এই ধরনের পরিবর্তন সার্বিকভাবে ঝুঁকি তৈরি করছে। কৃষিজমি ছোট হচ্ছে, আবার জমির মালিকানার পরিবর্তন হচ্ছে; সেই সঙ্গে জমির মালিকরা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। কৃষিজমির মালিক এখন কৃষিকাজ থেকে অন্য খাতে সরে যাচ্ছেন।
কৃষি শ্রমিকের অভাবে পরিবার জমি বর্গা দিতে বাধ্য হচ্ছে। অনেক পরিবারে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে শহর অঞ্চলে স্থানান্তর হওয়ায় কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছে।

 

বেশির ভাগ বর্গা চাষিই টাকার বিনিময়ে জমি ভাড়া নিয়ে থাকেন জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁদের সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করতে ঋণের সহজলভ্যতা, প্রযুক্তি ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা এবং কৃষককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো দক্ষ করে তুলতে হবে। আধুনিক যন্ত্রপাতি না আসায় কায়িক পরিশ্রম এড়াতে তরুণরা কৃষিকাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

 

জানা গেছে, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪৫ শতাংশের বেশি নিয়োজিত রয়েছে কৃষি খাতে। কৃষিকাজে নিয়োজিত মোট শ্রমশক্তির প্রায় তিন কোটি ২০ লাখ মানুষ। তবে কৃষিতে নিয়োজিত যেসব কৃষকের জমি নেই, তাঁরা জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

Leave A Comment

To Top