জালে মিলছে না ইলিশ নাগালের বাইরে দাম

November 13, 2025 0 Comments

 

সাহানোয়ার সাইদ শাহীন :

বরগুনা সদর উপ‌জেলার ঢলুয়া ইউনিয়‌নের দ‌ক্ষিণ ডালভাঙ্গা গ্রামের নারী জেলে লাইলী গত বৃহস্পতিবার দুপুরের আগেই ছোট ট্রলারে মাছ ধরতে বের হন। উত্তাল বঙ্গোপসাগরের মোহনা বিষখালী নদীতে বিকেল পর্যন্ত জাল ফেলে ৫০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ পান। সঙ্গে দুটি জাটকাও মিলল জালে। একেবারে শেষ সময়ে জালে আটকাল কয়েকটি ছোট পোয়া মাছ।

 

লাইলী কালের কণ্ঠকে বললেন, ঘাটে এসে মাছ বিক্রি করে পেলাম হাজার টাকা। নদীতে মাছ ধরার জন্য তেল খরচ হয়েছে ৬০০ টাকার বেশি। খরচ বাদ দিয়ে পেলাম ৪০০ টাকা। দুর্যোগের জন্য বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বিষখালীতে যেতে পারিনি।
ডুবোচরের কারণে বিষখালীর ভেতরে মাছ আসতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই মাছ কম মিলছে। একই অবস্থা দেশের অন্যান্য জেলায়ও। দুই মাস নিষেধাজ্ঞার পর গত ১ মে থেকে ভোলার মেঘনা, ইলিশা ও কালাবদর নদীতে ইলিশ ধরা শুরু করেন স্থানীয় জেলেরা।
তবে ইলিশের অভয়ারণ্য মেঘনায় নামলেও জেলেরা তাঁদের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাননি। দেশে ইলিশ মাছের আড়তগুলোতে সরবরাহ কমছে। ফলে বেড়েছে ইলিশ মাছের দাম।
ব‌রিশাল মৎস‌্যবন্দ‌রের ব্যবসায়ী জ‌হির শিকদার ব‌লেন, মেঘনা, কালাবদর, কীর্তন‌খোলা, আড়িয়াল খাঁ নদীর মাছ ব‌রিশাল মৎস‌্যবন্দ‌রে বেচাকেনা হয়। শুক্রবার এক কে‌জি ২০০ গ্রাম ওজ‌নের ইলি‌শ প্রতি কেজি তিন হাজার ৫০০ টাকায় এবং এক কে‌জি ওজ‌নের ইলিশ দুই হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

 

ত‌বে সাগ‌রের ইলিশ এর চে‌য়ে কম দ‌ামে বি‌ক্রি হয়।
নদীতে ইলিশ আপাতত ধরা না পড়লেও সাগরে পর্যাপ্ত ইলিশ পাচ্ছেন জেলেরা। সাগরপারের মৎস্যবন্দরগুলো তাই কিছুটা সরব। চাঁদপুর, ভোলা ও বরিশালের আড়তগুলোতে মাছের দাম এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ সাড়ে তিন হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বাজারে আকারভেদে ইলিশ মৎস্যঘাট ও মোকামের দামের চেয়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ মাছের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে মূল্য নির্ধারণের জন্য গত ১৮ জুন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় মৎস্য অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘ইলিশ মাছের দাম দুই হাজার টাকা কেজি হওয়া ঠিক হবে না। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন বিশেষ মূল্য নির্ধারণ করে ইলিশ বিক্রি করে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারলে বাজারে এর একটা প্রভাব পড়বে। অহেতুক যেন ইলিশের দাম বাড়ানো না হয় সে জন্য আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার এবং আড়তদারদের সঙ্গেও আলোচনা করব।’

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইলিশ গভীর জলের মাছ। পদ্মা ও মেঘনা নদীর গভীরতা অনুযায়ী জেলেরা জাল তৈরি না করে তা ফেলায় ইলিশ কম পান। বৃষ্টি ও পানিপ্রবাহ বাড়লে ইলিশও ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তন, অভয়াশ্রমের নিরাপত্তাহীনতা, জেলেদের সামাজিক সুরক্ষার অভাব, সচেতনতা ও গবেষণা না থাকা এবং মানবসৃষ্ট নানা কারণে ইলিশ মাছ ঝুঁকিতে আছে। ফলে নদীতে প্রায় সময়ই ইলিশ মাছের দেখা মিলছে না।

প্রতিবছর দেশের নদীগুলো থেকে প্রায় ৩৮ কোটি জাটকা মাছ ধরা হয়। এসব মাছ অসময়ে না ধরে স্বাভাবিক বৃদ্ধির সুযোগ দিলে ইলিশ মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

 

সামুদ্রিক এই মাছ ডিম পাড়ার জন্য বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে আগমন করে। তারা ব্রিডিংয়ের জন্য দেশের নদীগুলোর ওপরের দিককেই বেশি সুবিধাজনক মনে করত। সম্প্রতি ইলিশ মাছ ব্রিডিং করছে হাতিয়া ও সন্দ্বীপ অঞ্চলে। নদীর ওপরের দিকগুলো এখন অনিরাপদ হয়ে ওঠায় তারা ব্রিডিং জোন পরিবর্তন করছে। ফলে ওপরের দিকে ইলিশ মাছ বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। জেলেরা অভিযোগ করছেন, গভীর সমুদ্রে ভারতীয় জেলেদের অত্যাধুনিক ফিশিং ট্রলার দিয়ে মাছ ধরার কারণে দেশের নদীতে আসতে পারছে না ইলিশ মাছ।

Leave A Comment

To Top