সাহানোয়ার সাইদ শাহীন :
বাংলাদেশে সুন্দরবনে এখন বাঘের সংখ্যা ১২৫টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাঘ খুলনায়। সেখানে নিরাপদ আছে বাঘ। তবে বাঘের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরা।
সুন্দরবনে বাঘ শিকারের হটস্পট ২৫টি। গত ২৪ বছরে ৯১টি বাঘ মারা গেছে। এর মধ্যে মানুষ হত্যা করেছে ৫৮টি বাঘ। বন অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে আজ ২৯ জুলাই পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস। বাঘ টিকে আছে—বিশ্বে এমন ১৩টি দেশে ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর এ দিনটি বিশ্ব বাঘ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। জাতীয়ভাবে এবার বাঘ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের সমৃদ্ধি’। বাঘ সক্রিয় আছে—এমন ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান অষ্টম।
বিশ্বে কয়েক প্রজাতির বাঘের মধ্যে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ বাঘ বিপদাপন্ন। তবে বাংলাদেশে এই প্রজাতি মহাবিপদাপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত। রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের জাতীয় পশু।
বন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে খুলনা অঞ্চলে বাঘ বেড়েছে। এই অঞ্চলের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে বাঘ সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।
তবে খুলনা রেঞ্জে আবার পুরুষ বাঘের সংকট। একটি পুরুষ বাঘের বিপরীতে ১২টি নারী বাঘ দেখা গেছে। অন্যদিকে ২০১৮ সালের তুলনায় সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘ বেশ কমেছে। সাতক্ষীরা অঞ্চলে বনের বৈচিত্র্য কম। এতে হরিণের সংখ্যা কম। বনের অবক্ষয় বেশি হওয়ায় সাতক্ষীরা রেঞ্জে সমস্যা কিছুটা বেশি।
বিভিন্ন সময় বাঘ : ১৯৩০ সালে দেশের ১১টি জেলায় বাঘ থাকলেও এখন শুধু সুন্দরবনে বাঘের দেখা পাওয়া যায়। ২০০৪ সালে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি। তবে ২০১৪ সালে বাঘ গণনায় পদ্ধতিগত পরিবর্তন করা হয়। ওই সময় বাঘের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১০৬টি। ২০১৮ সালে বাঘ ছিল ১১৪টি। ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপে বাঘের সংখ্যা ছিল ১২৫টি। সর্বশেষ এই তিন জরিপে বাঘ গণনায় ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ফলে ২০১৪ সালের তুলনায় বর্তমানে বাঘ বেড়েছে ১৯টি।
বাঘ সুরক্ষায় কার্যক্রম : বাঘের ওপর পুরো সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশব্যবস্থা নির্ভরশীল। সুন্দরবন থেকে যদি বাঘ হারায়, বনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য অনেকটা বিনষ্ট হবে। সার্বিকভাবে সুন্দরবনের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত নৌ চলাচলের কারণে বাঘের আবাসস্থল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ফলে এক পাশের বাঘ অন্য পাশে যেতে পারে না। এতে হুমকিতে পড়ে বাঘের জীবনচক্র। আবার বাঘের চোরাচালান ও শিকারের কারণেও ওদের অস্তিত্ব বিপন্ন। সুন্দরবনে বাঘ ও হরিণ শিকারের জন্য অপরাধপ্রবণ ২৫টি হটস্পট রয়েছে। এসব স্পটে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, বাঘ গণনায় আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের কারণে সঠিক তথ্য পাওয়া গেছে। সুন্দরবনে পর্যটকদের চলাচল সীমিতকরণ, মাছ ও পাতা আহরণে কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে বনের মধ্যে বাঘ অধিকতর স্বচ্ছন্দে চলাচল করতে পেরেছে। বাঘের প্রজননের জন্য সুন্দরবনে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাঘের অন্যতম খাবার হলো হরিণ ও বন্য শূকর। সুন্দরবনে হরিণ প্রায় ৬৫ শতাংশ ও বন্য শূকর ৭০ শতাংশ বেড়েছে।
বাঘ সুরক্ষায় কমিউনিটি অংশগ্রহণ বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার সুন্দরবনের ব্যাপারে সচেতন থাকায় বন বিভাগ সুন্দরবন রক্ষায় আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বন অধিদপ্তর ও স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের টিম গঠন করে স্মার্ট পেট্রলিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের বাঘ রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা। চোরা শিকারিকে শূন্যে নামিয়ে আনতে বন অধিদপ্তরকে আরো বেশি শক্তিশালী করতে হবে। প্রয়োজনে বন অধিদপ্তরে স্পেশাল ফোর্স নিয়োজিত করতে হবে।