ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় ধারাবাহিক অবনমন
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে (জিএইচআই) চলতি বছর আট ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালে ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪-তে নেমে এসেছে। ২০২১ সালে ১১৭টি দেশের মধ্যে ৭৬তম ছিল। ২০২০ সালে ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৫তম।
আয়ারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও জার্মানভিত্তিক ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ যৌথভাবে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক-২০২২ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। চলতি বছরের ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ ১৯.৬ স্কোর পেয়েছে। মূলত ১০ থেকে ১৯.৯ পয়েন্ট পেলে ওই দেশ ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধা আক্রান্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান ক্ষুধা মেটানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তুলনায় পিছিয়ে। দেশ দুটির অবস্থান যথাক্রমে ১০৭ ও ৯৯তম। এ দেশ দুটি ‘উচ্চ ক্ষুধায়’ আক্রান্ত দেশের তালিকায় রয়েছে।
মূলত কোনো দেশের স্কোর ২০ থেকে ৩৪.৯ হলে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশু মৃত্যুর হার এসব সূচককে বিবেচনায় নিয়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত, প্রতি ছয়জনের একজন শিশু বয়সের তুলনায় খর্বকায় ও কৃশকায়। এই সব কটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করলেও অন্যান্য দেশের তুলনায় তা কম। যে কারণে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে।
কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড সিইও ডমিনিক ম্যাক সরলি জানিয়েছেন, বিশ্বজুড়ে সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন ও কভিড-১৯ মহামারির সম্মিলিত প্রভাবের কারণে ক্ষুধা সূচকের অবনতি হচ্ছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সরবরাহ এবং খাদ্য, সার ও জ্বালানির মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ধরনের সংকট ধীরে ধীরে বিপর্যয়কর রূপ নিতে শুরু করেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে সারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সামগ্রিকভাবে ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে দানাদার খাদ্যের দাম ৩৭ শতাংশ, ভোজ্য তেলের দাম ৫৬ শতাংশ এবং মাংসের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে।
২০০৮-২০০৯ সালে দেশে যেখানে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল তিন কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার টন, সেখানে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে তা বেড়ে চার কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার টন হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ব্রি) মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর সম্প্রতি একটি সেমিনারে জানিয়েছেন, গত দুটি মৌসুমে বিশেষ করে বোরো ও আউশ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে চাল উৎপাদন হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়েছিল। তাই চালের ও দানাদার খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে নানাভাবে পরামর্শ ও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
আগামী বোরোতে সর্বোচ্চ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের ১৪টি কৃষি অঞ্চলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা জানিয়ে শাহজাহান কবীর বলেন, ‘আশা করছি চলতি আমন ও বোরোতে ভালো ফলন হলে দেশে চাল নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।