পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান অব বাংলাদেশ (২০২৩-২০৫০)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। মিসরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দিনে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে যে ১০টি ক্ষতি ও ঝুঁকির বিষয়ে বলা হচ্ছে, তার মধ্যে শীর্ষে থাকবে লবণাক্ততা।
মৃত্তিকাসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এসআরডিআই) তথ্য বলছে, দেশে লবণে আক্রান্ত মোট জমির মধ্যে হালকা লবণাক্ততা জমি এক লাখ ৯০ হাজার হেক্টর, মধ্যম মাত্রার দুই লাখ ৫০ হাজার হেক্টর, তীব্র মাত্রার চার লাখ ২০ হাজার হেক্টর এবং খুব তীব্র মাত্রার লবণাক্ত জমির পরিমাণ দুই লাখ হেক্টর। লবণাক্ততার কারণে উপকূলীয় জেলাগুলোতে খাদ্যশস্য উৎপদন কম হচ্ছে প্রায় ৩০ লাখ ২৭ হাজার টন।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণেই উপকূলীয় অঞ্চলের জমিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ঢুকছে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, লবণাক্ততা বৃদ্ধির জন্য স্বাভাবিক জনজীবন ফিরে পেতে মানুষ সংগ্রাম করছে। সরকার তাদের পাশেই আছে। বাঁধ নির্মাণ ও উন্নত হাসপাতালের সুবিধা দেওয়া ছাড়াও কৃষি উৎপদন বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
লবণাক্ততার কারণে মানুষের শারীরিক সমস্যার বিষয়ে শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা কর্মী শেফালী বেগম বলেন, লবণাক্ততায় বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন নারীরা। নোনা পানির জন্য এখন নারীদের সন্তান ধারণের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘ডিজাস্টার রিলেটেড স্টাটিস্টিকস (বিডিআরএস) ২০২১ : ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ন্যাচারাল ডিজাস্টার পারসপেকটিভ’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে লবণাক্ততার কারণে অসুস্থ হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৯৭৫ জন। প্রতিবছর গড়ে অসুস্থ হয়েছে ২১ হাজার ৯৯৫ জন। অন্যদিকে আগের ছয় বছরে লবণাক্ততায় অসুস্থ হয় ১৫ হাজার ৭৩ জন। এ ছাড়া ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে ক্ষতির সঙ্গে ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের ছয় বছরের ক্ষতির তুলনামূলক তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস। এতে দেখা যায়, আগের ছয় বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬০৭ কোটি ২৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা, যা পরের ছয় বছরে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।