চলতি বছর দেশে কমতে পারে চালের উৎপাদন

November 14, 2025 0 Comments

 

 

সাহানোয়ার সাইদ শাহীন :

সারা বিশ্বে এবার চালের উৎপাদন বাড়তে পারে এক কোটি টনের বেশি। কিন্তু সেই বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অবদান থাকছে না। কারণ দেশে এবার চালের উৎপাদন কমতে পারে। ধানের আবাদ কমে যাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশে এবার চালের উৎপাদন চার লাখ টন কমতে পারে

দেশে এবার চালের উৎপাদন হতে পারে তিন কোটি ৬৬ লাখ টন।
বাংলাদেশের চাল উৎপাদন পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কার তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)। সংস্থাটির বৈদেশিক কৃষিসেবা বিভাগের (এফএএস) ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাগ্রিকালচারাল প্রডাকশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ পেয়েছে। ওয়ার্ল্ড অ্যাগ্রিকালচারাল আউটলুক বোর্ডের সব ধরনের কাজের সমন্বয় করে সংস্থাটি।

 

ইউএসডিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সারা বিশ্বে চালের উৎপাদন ছিল ৫১ কোটি ৬৭ লাখ টন, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উন্নীত হয়েছিল ৫২ কোটি ২৩ লাখ টনে। ফলে গত অর্থবছরে সারা বিশ্বে চালের উৎপাদন ৫৬ লাখ টন বেড়েছিল। অন্যদিকে চলতি বছর সারা বিশ্বে চালের উৎপাদন হতে পারে ৫৩ কোটি ২৭ লাখ টন। চলতি বছরে বিশ্বে প্রায় এক কোটি চার লাখ টন চালের উৎপাদন বাড়তে পারে।

 

তবে উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ভূমিকাহীন থাকবে।
বাংলাদেশে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৭০ লাখ টন। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেটি কমে তিন কোটি ৬৬ লাখ টনে নেমে আসতে পারে। ফলে চালের উৎপাদন কমতে পারে চার লাখ টন। আবার গত অর্থবছরে দেশে মোট ধানের আবাদ হয়েছিল এক কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে।

 

চলতি অর্থবছরে সেটি কমে এক কোটি ১৪ লাখ হেক্টরে নামতে পারে। ফলে দেশে এবার ধানের আবাদ কমতে পারে তিন লাখ ৫০ হাজার হেক্টর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি শেষ হওয়া আমন মৌসুমে ভালো ফলন না হওয়ার কারণেও উৎপাদন কমতে পারে। সারা দেশেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও উপকরণ সংকটে আমন উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আগামী বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন পরিকল্পনা অনুসারে করতে না পারলে দেশে চালের বাজারে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হবে। এ পরিস্থিতিতে চালের মজুদ বাড়াতে হবে।

 

বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির মহাসচিব ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এস এম গোলাম হাফিজ কেনেডি কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ার কারণে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমতে পারে। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।
এখনই কৃষিজমি অকৃষি খাতে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। তা না হলে খাদ্যশস্য আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে না। আবার উৎপাদন ও চাহিদার তথ্যগুলোও সঠিক হওয়া প্রয়োজন। কৃষিপণ্য উৎপাদনের অতিরঞ্জিত তথ্য প্রদান বন্ধ করতে হবে। তা না হলে সরকারের নীতি সিদ্ধান্ত বাধাগ্রস্ত হবে।

 

চালের দাম বৃদ্ধি দেশে চালের ঘাটতির ইঙ্গিত দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, চালের সরবরাহ বাড়াতে আগামী বোরো মৌসুমে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। তবে আগামী বোরো মৌসুমের শুরুতে চাল আমদানি করা ঠিক হবে না। বোরো মৌসুমের শুরুতে চাল আমদানি করা হলে কৃষকরা ধানের দাম পাবেন না। কৃষকের ন্যায্যমূল্য দিতে না পারলে আবার উৎপাদন দীর্ঘমেয়াদে বাধাগ্রস্ত হবে।

 

অবশ্য দেশে চালের উৎপাদনের তথ্য নিয়ে রয়েছে নানান ধরনের অসংগতি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া চালের উৎপাদনের তথ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিবিএসের হিসাবে চালের উৎপাদন দেখানো হয়েছিল চার কোটি ছয় লাখ ৯৮ হাজার টন। অন্যদিকে মার্কিন কৃষি বিভাগের হিসাবে বাংলাদেশে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৭০ লাখ টন। ফলে দুটি সংস্থার মধ্যে চালের উৎপাদনের পার্থক্য প্রায় ৩৭ লাখ টন।

 

এ বিষয়ে কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উৎপাদনের তথ্য বিভ্রাটের বিষয়টি নজরে এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি সব পর্যায়ের তথ্যকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার।
এ বিষয়ে আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। তবে দেশে যেন কোনোভাবেই খাদ্যসংকট পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেটা মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। আগামী বোরো মৌসুমে উৎপাদন বাড়াতে নিরবচ্ছিন্নভাবে উপকরণ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি।

 

বীজ, সার ও সেচের পানি সরবরাহে মাঠ পর্যায়ে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। সার নিয়ে কোনো ধরনের সংকট নেই। প্রকৃতি সহায়ক হলে আমরা আশা করছি আগামী বোরো মৌসুমে চাল উৎপাদন ভালো হবে।

Leave A Comment

To Top