এক বছরে ৩৯ হাজার কেজি অপদ্রব্য মেশানো চিংড়ি ধ্বংস

September 15, 2023 0 Comments
সাতক্ষীরার আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়নে গত রবিবার ভ্রাম্যমাণ আদালত চিংড়িতে অপদ্রব্য থাকায় ১৯০ কেজি চিংড়ি মাছ বিনষ্ট করা হয়। এ সময় অপরাধ স্বীকার করায় তিন মাছ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়। দেশের চিংড়ি উৎপাদনে শীর্ষ অঞ্চল খুলনায় জেলিসহ অপদ্রব্য মিশ্রণ বাড়ছে। গত বছর (২০২২) দেশে সাড়ে ৩৯ হাজার ৫২২ কেজি অপদ্রব্য মিশ্রিত চিংড়ি জব্দ করে বিনষ্ট করা হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাদা সোনা খ্যাত চিংড়িশিল্পে বেশি লাভের আশায় কিছু ব্যবসায়ী চিংড়িতে জেলিসহ নানা ধরনের অপদ্রব পুশ করছেন। বিশেষ করে গলদা ও বাগদা চিংড়িতে সিরিঞ্জের সাহায্যে জেলির পাশাপাশি সাগু, ভাতের মাড়, বিভিন্ন কেমিক্যাল ঢুকিয়ে ওজন বড়ানো হচ্ছে। চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করার কারণে মান নিয়ে দেশের ভোক্তারা যেমন শঙ্কিত, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে খুলনা অঞ্চলের জেলাগুলোতে মোট ১৭০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
এসব অভিযানে ৩৯ হাজার ৫২২ কেজি জেলিসহ অপদ্রব্য মেশানো চিংড়ি মাছ ধ্বংস করা হয়েছে। অভিযানে ৫৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং সাতজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে গত ২০২১ সালে ১৬২টি অভিযান পরিচালনা করে ১১ হাজার ৬৫ কেজি অপদ্রব্য মিশ্রিত চিংড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। এই হিসাবে অপদ্রব্যমিশ্রিত চিংড়ি জব্দ বেড়েছে প্রায় ২৫৭ শতাংশ।
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, কয়েক বছর ধরেই চিংড়িতে অপদ্রব্য মেশানোর ঘটনা উদ্বেগ তৈরি করেছে। জেলি কিংবা অন্যান্য অপদ্রব্য সাধারণত কৃষক বা খামারিরা মেশান না। এটি ব্যবসায়ী থেকে মধ্যস্বত্বভোগীরা মিশিয়ে থাকেন। এ জন্য ট্রাক থেকে শুরু করে বাজারের বিভিন্ন সন্দেহজনক স্থানে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। মাহবুবুল হক বলেন, দেশের ভোক্তাদের সুরক্ষার পাশাপাশি রপ্তানি বাজার বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ জন্য চাষিদের সংগঠিত করে সরাসরি রপ্তানিকারকদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৩০০টি সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। কারখানাগুলোতে দিনের মধ্যেই চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন করার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চিংড়িতে যেকোনো অপদ্রব্য মেশানো শূন্যে নামিয়ে আনতে সব ধরনের কার্যক্রম কঠোরভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে।বৈশ্বিক বাজারে চিংড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশের চিংড়ির রপ্তানি বাড়ছে না। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ৭৬ হাজার ৬১৪ টন চিংড়ি রপ্তানি হয়েছিল। গত অর্থবছরে তা ৭৪ হাজার টনে নেমে এসেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি প্রায় ১১ শতাংশ কমে গেছে। কারো কারো মতে দেশের চিংড়িতে অপদ্রব্য মেশানোসহ নানা কারণে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রপ্তানি বাজার ধরতে আরো কঠোরতা অবলম্বনের সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা চিংড়ি চাষি সমিতির সাবেক সভাপতি ডা. আফতাফুজ্জামান বলেন, এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মাছের ঘের থেকে ৫-১০ কেজি করে চিংড়ি কিনে বেশি লাভের আশায় অপদ্রব্য পুশ করে থাকেন। তাঁদের কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে চিংড়ি চাষিরাও দামের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, সাতক্ষীরা জেলায় ৫৪ হাজার ৯৩৫টি মাছের ঘের রয়েছে। চলতি বছর ৬৬ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি ও ৯ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমিতে গলদা চিংড়ির চাষ হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব জানান, অপদ্রব্য পুশের কারণে দামের ক্ষেত্রে স্থানীয় বাজারে মন্দা চলে আসে। কুপ্রভাবে চিংড়ি চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। বাগেরহাটের বারাকপুর পাইকারি মৎস্য আড়তের সভাপতি সৈয়দ জাকির হোসেন জানান, বিভিন্ন আড়ত থেকে কিছু ব্যবসায়ী চিংড়ি ক্রয় করার পর জেলি পুশ করে ওজন বৃদ্ধি করেন। এরপর ওই চিংড়ি তাঁরা বিভিন্ন রপ্তানিকারক কম্পানির কাছে বিক্রি করে থাকেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। (প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কালের কণ্ঠ’র সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন, বাগেরহাট প্রতিনিধি বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী)

Leave A Comment

To Top