সাহানোয়ার সাইদ শাহীন :
রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ হাজার কৃষি পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করে। এর মধ্যে রয়েছে চাল, সবজি, মাছ, ডিম, মুরগি, দুধসহ অন্যান্য পণ্য।
গতকাল মঙ্গলবার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কৃষি পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে পারেনি। এতে সরবরাহ সংকটে রাজধানীর বাজারে এসব পণ্যের যেমন দাম বেড়েছে, তেমনি অবিক্রীত এসব পণ্য নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন দেশের এক কোটির বেশি কৃষক ও খামারি।
জানা গেছে, কৃষকের ক্ষেত ও বাগানে এখন গ্রীষ্মকালীন সবজি এবং বিভিন্ন ফলমূল রয়েছে। দেশের কয়েক লাখ খামারি প্রতিদিন উৎপাদন করছে মাছ, পোলট্রি মুরগি, ডিম ও দুধ। কৃষি ও খাদ্যপণ্য পরিবহন চলমান কারফিউয়ের আওতামুক্ত থাকলেও ট্রাক চলাচল কম। এতে খামারি ও কৃষকের এসব পণ্য রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য স্থানের বিভিন্ন বাজারে যেতে পারছে না।
এ অবস্থায় কৃষিপণ্য নষ্ট হয়ে কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। এতে উৎপাদিত ফসলের দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। সরবরাহ অপ্রতুল থাকায় অল্প পরিমাণে পণ্য যা বাজারে আসছে, ভোক্তাদের তা কিনতে হচ্ছে বেশি দামে।
ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার কৃষক ইকরাম আলী এক বিঘা জমিতে বেগুন ও মরিচের আবাদ করেছেন।
এখানে বৃহস্পতিবার ও রবিবার সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বাজারে পণ্য বিক্রি করতে পারেননি। গত রবিবার হাট বন্ধ থাকায় পণ্য নিয়ে যেতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা শুনছি, ঢাকায় বিরাট দামে মরিচ বিক্রি হচ্ছে। আর আমরা এখানে বিক্রি করতে পারছি না।
ক্ষেতে সবজি ও মরিচ পরিপক্ব হয়ে এর মধ্যে পচতে শুরু করেছে। আগামী বৃহস্পতিবার হাটে পণ্য নিতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ কৃষি শুমারির তথ্য মতে, দেশে মোট খানার পরিমাণ তিন কোটি ৫৫ লাখ ৫২ হাজার। এর মধ্যে কৃষি খানার পরিবার এক কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার। ফলে দেশের প্রায় ৪৭.৪৮ শতাংশ পরিবার কৃষিতে নিয়োজিত। এর বাইরে মৎস্য, পোলট্রি ও কৃষি মজুরি খাতে বিভিন্ন ধরনের মানুষ নিয়োজিত। পরিবহন অচল থাকায় প্রায় এক কোটি কৃষক ও খামারির ক্ষতি হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের পরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় উৎপাদনকারীরা কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারছে না।
ক্ষেতেই পচন শুরু হয়েছে। এক কোটির বেশি কৃষি পরিবার উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। আবার বাজারে এসব পণ্য আসতে না পারায় ভোক্তারা কিনতে পারছে না। সামনে আমন মৌসুমের জন্য সারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। কিন্তু সেটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করতে হবে।
পোলট্রি খাতে ক্ষতি : বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সূত্রে জানা গেছে, পোলট্রি খাতে কমার্শিয়াল লেয়ার ও ডিম উৎপাদন, এক দিনের বাচ্চা (ডিওসি), খাদ্য ও ওষুধ উৎপাদন কমেছে। সরবরাহ করতে না পারায় খামারে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবহন সংকটের কারণে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম বিক্রি করতে পারছেন না খামারিরা। রেডি ব্রয়লার বাজারে আনতে পারছেন না।
আবার বাজারে ক্রেতার সমাগমও খুব কম। গত অর্থবছরে দেশে প্রায় দুই হাজার ৪০০ কোটি পিস ডিমের উৎপাদন হয়েছে। সে হিসাবে প্রতিদিন উৎপাদন প্রায় পাঁচ কোটি ৫০ লাখ পিস থেকে সাড়ে ছয় কোটি পিস। অন্যদিকে দৈনিক মুরগির উৎপাদন হয় প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টন। প্রতি সপ্তাহে এক দিনের বাচ্চা উৎপাদন হয় প্রায় দুই কোটি থেকে দুই কোটি ২৫ লাখ পিস। এ ছাড়া মাছ ও মুরগির ফিড উৎপন্ন হয় দৈনিক ১০ থেকে ১৩ হাজার টন। চলমান পরিস্থিতিতে এ খাতের উৎপাদন বেশির ভাগ কমে গেছে।