আমন ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার ৭২ শতাংশই অর্জিত হয়নি

September 21, 2023 0 Comments

প্রান্তিক চাষীদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রতি বছর ধান ও চাল সংগ্রহ করে সরকার। আগে আমন মৌসুমে শুধু চাল সংগ্রহ করা হতো। ২০১৯ সাল থেকে এ মৌসুমে চালের পাশাপাশি ধানও সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত দুই বছর ধানের সংগ্রহ ভালো হলেও চলতি বছর তা ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আমন ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার ৭২ শতাংশই অর্জিত হয়নি।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ টন। সেখানে মাত্র ৮৪ হাজার ৪৭০ টন অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। ফলে ৭২ শতাংশই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে ৭ লাখ ২০ হাজার টন চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৭ লাখ ১২ হাজার টন। ফলে চালের ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। সব মিলিয়ে ১০ লাখ ২০ হাজার টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৭ লাখ ৯৬ হাজার টন। অর্থাৎ ধান-চাল মিলিয়ে প্রায় ৭৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ২২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

ধানের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার পেছনে কৃষককে সঠিক দাম না দেয়াটাই প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে আমন মৌসুম। এ মৌসুমে ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। এক্ষেত্রে মিলারদের চালের দাম ৪ টাকা বাড়ানো হলেও কৃষকের ধানের দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র ১ টাকা। আমন ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি কেজি ২৭ টাকা, চালের মূল্য প্রতি কেজি ৪০ টাকা। আবার ধানের দাম বাজারের তুলনায় কম থাকায় কৃষকরা বাজারে ধান বিক্রিতেই আগ্রহী হয়েছেন। এছাড়া ধান বিক্রির সময় খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অনিয়মসহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতাও কৃষকদের নিরুৎসাহিত করেছে। এসব কারণেই শেষ হওয়া আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২২ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

যশোর জেলা খাদ্য বিভাগের তথ্য বলছে, সরকারের খাদ্যগুদামে ধান দেননি যশোরের কৃষকরা। ফলে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাড়ে ১৫ শতাংশ ধান সংগ্রহ হয়। তবে রাইস মিল মালিকরা চুক্তিবদ্ধ থাকায় চাল সংগ্রহ হয়েছে শতভাগ। ২০২১-২২ অর্থবছরে যশোরে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৬৫৩ টন। শতভাগ চাল সরবরাহ করেছেন মিলাররা। আর ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ১৫৫ টন। যার মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ২৭০ টন।

এ বিষয়ে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার মাটিকুমড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা জানান, সরকারের দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম কিছুটা বেশি। আবার সরকারের খাদ্যগুদামগুলোতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। যে কারণে আমরা সরকারকে ধান দিইনি।

যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্য নন্দ কুণ্ডু জানান, ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর আমাদের ধান-চাল সংগ্রহ শুরু করা হয়। ২৫৯ জন মিলারের সঙ্গে চুক্তি ছিল। তারা শতভাগ চাল সরবরাহ করেছেন। তবে বাজারে ধানের দাম সরকারের সংগ্রহের দাম প্রায় এক হওয়ায় আমাদের ধান দিতে অনাগ্রহ দেখিয়েছেন কৃষক। যে কারণে ধান সংগ্রহ হয়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশ।

রংপুর জেলায় ধান সংগ্রহ পরিস্থিতি আরো খারাপ। জেলাটি লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশও অর্জন করতে পারেনি। এমনকি বেশ কয়েকটি উপজেলায় কোনো ধানই সংগ্রহ করা যায়নি। আমন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে রংপুর জেলায় ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩২ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার ১১৭ টন কম। তবে মিলাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে চাল প্রদান করেছেন। চাল প্রদানের জন্য এবার জেলায় ৭৭৫ জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১০ হাজার ১৪৯ টন ধান এবং ২৬ হাজার ৮৩৪ দশমিক ৯১০ টন সিদ্ধ চালের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রংপুর সদর, পীরগাছা, গঙ্গাচড়া ও শঠিবাড়ী উপজেলায় কোনো ধান সংগ্রহ হয়নি। বদরগঞ্জ উপজেলায় ধান সংগ্রহ হয়েছে ২৪ টন, পীরগঞ্জে ধান সংগ্রহ হয়েছে এক টন। ভেন্ডামারীতে (এলএসডি) ধান সংগ্রহ হয়েছে এক টন, তারাগঞ্জে ধান সংগ্রহ হয়েছে তিন টন, কাউনিয়ায় ধান সংগ্রহ হয়েছে তিন টন।

রংপুরের মিলার ও রংপুর সদর উপজেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সামসুল আলম বাবু বলেন, আমন মৌসুমে দুই হাজার টন চাল তিনি নিজে দিয়েছেন। এবার সরকার চালের যে রেট দিয়েছে, তাতে মিলারদের মোটামুটি লাভ হয়েছে।

রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রিয়াজুর রহমান রাজু বলেন, ধান কম সংগ্রহের বেশকিছু কারণ রয়েছে। এবার ধানের বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় কৃষকরা বাড়ি থেকে সরাসরি ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পেরেছেন। তারা খাদ্য বিভাগে ধান প্রদানে আগ্রহ দেখাননি। তাছাড়া শতকরা ১৪ ভাগ আর্দ্রতার ঊর্ধ্বে কোনো ধান সংগ্রহ করা যাবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ আছে। অথচ বাজারে মৌসুমের শুরুর দিকে শতকরা ২০ ভাগ পর্যন্ত আর্দ্রতাযুক্ত ধানও কেনাবেচা হয়েছে।

Leave A Comment

To Top